প্রবল গরমে তালের রস থেকে তৈরি সরবত, আইস-ক্রিম, এবার কলকাতার বাজারে আনছে বাঁকুড়ার একটি সংস্থা। কয়েক মাসের মধ্যেই তালের রসের তৈরি নানা খাদ্য দ্রব্য সাধারণ মানুষের নাগালের মধ্যে পৌঁছে দিতে এখন দিন-রাত কাজ করছেন বাঁকুড়া, পুরুলিয়া এবং বীরভূম জেলার বহু মানুষ। পাশাপাশি তৈরি হচ্ছে তালের মিষ্টিও। তালের খাদ্য সামগ্রী তৈরি করে এই তিন জেলায় বিকল্প কর্মসংস্থানের দিশা দেখাচ্ছে ডেভলপমেন্ট রিসার্চ কমিউনিকেশন এন্ড সার্ভিস সেন্টার নামে এক স্বেছাসেবী সংস্থা। সংস্থার পক্ষে দীপক ঘোষ thebengalstory.com কে জানালেন রাজ্যে সব থেকে বেশি তাল গাছ দেখা যায় বাঁকুড়া, পুরুলিয়া এবং বীরভূম জেলায়। তাই তাঁদের প্রকল্পের জন্য মূলত এই তিনটি জেলাকেই বেছে নেওয়া হয়েছে।। মুখরোচক ‘তাল আইস ক্রিম’, ‘তাল সিরাপ’, ‘তাল বরফি’,’তাল চিনি’ বানানো হচ্ছে। খাদি গ্রামীণ শিল্প পর্ষদের প্রাক্তন এই জেলা অধিকর্তার কথায়, প্রধাণত তাল হল গ্রীষ্মপ্রধান ফল। মার্চ থেকে জুন পর্যন্ত তালের সিজন বলে ধরা হয়। তাই প্রথমেই গাছ নির্বাচনের পালা। সব গাছ থেকেই রস পাওয়া যাবে, এমনটা নাও হতে পারে। তাই প্রাথমিকভাবে দেখা যায় ২০টা গাছ বাছাই করলে হয়ত তালের রস মিলছে সাত-আটটি গাছ থেকে। এরপর পর্যায়ক্রমে তৈরি হয় তালের গুড় এবং সিরাপ। এরপর একের পর এক তৈরি হতে থাকে তালজাত নানা খাদ্য দ্রব্য।
দীপকবাবু আরও জানালেন অর্গানিক খাদ্যদ্রব্য হিসাবে তালের চাহিদা বাড়ছে। বিশেষ করে চিনি, আইস ক্রিমের চাহিদা বেশ ভাল। কলকাতার বেশ কিছু সংস্থা ইতিমধ্যেই তালের সিরাপ থেকে আইস ক্রিম বানানোর বরাত পেয়েছে। তা জনপ্রিয়ও হচ্ছে। দক্ষিণবঙ্গের তীব্র গরমে তাল থেকে বানানো সিরাপ বা সরবতের খাদ্যগুণ যে কোনও বহুজাতিক সংস্থার বোতল-বন্দি সরবতের থেকে অনেক বেশি বলেই ওই সংস্থার দাবি। কলকাতার অনেক নামি মিষ্টি প্রস্তুতকারক সংস্থা আগ্রহ দেখাতে শুরু করেছে তাল দিয়ে বানানো মিষ্টিতে। তালজাত খাদ্যদ্রব্য তৈরির জন্য প্রশিক্ষণ পেয়েছেন বাঁকুড়া জেলার ৫০ জন। পুরুলিয়া এবং বীরভূম জেলার ১০ জন করে। বাঁকুড়া জেলা সদরে প্রতি বছর সেপ্টেম্বর মাসে অনুষ্ঠিত হচ্ছে তাল উৎসব। এর ফলে যেমন বাড়ছে কর্মসংস্থানের সুযোগ, তেমনভাবেই সাধারণ মানুষের মধ্যেও আগ্রহ বাড়াচ্ছে তাল। তাই তিল থেকে তাল নয়, ভোজন রসিক বাঙালির দৈনন্দিন মেনুতে হয়ত খুব তাড়াতাড়ি পাকাপাকি জায়গা করে নেবে তাল, তা এখন শুধু সময়ের অপেক্ষা।