বড়দিন হোক বা নতুন বছর, উদযাপনে কেক অপরিহার্য। যদিও হালফিলে বিয়ে থেকে বিবাহ বার্ষিকি বাঙালি মজেছে কেক প্রেমে। বাহারি সব কেকের সঙ্গে একই ব্যাকেটে তাকে না রাখা গেলেও কেক নিয়ে কথা বলতে গিয়ে বাঙালির বাপুজি প্রীতিকে অস্বীকার করা একপ্রকার অন্যায় হবে। চায়ের দোকানের কাচের বয়াম থেকে কার্যত বাঙালির অন্তরে জায়গা করে নিয়েছে বাপুজি। আর সেই জায়গা এতটাই শক্তপোক্ত যে দীর্ঘ পঞ্চাশ বছর ধরে বাজারে বাপুজির বিকল্প তৈরি হয়নি।
স্কুল স্টুডেন্ট, অফিসযাত্রী কিংবা পথ চলতি মানুষ, ‘অল্প’ খিদে মেটাতে বাপুজির জুড়ি মেলা ভার। কোনও প্রচার, বিজ্ঞাপন ছাড়াই বাপুজি কতটা জনপ্রিয় তা একটি ঘটনার কথা বললে বুঝতে সুবিধা হবে। দেশ জুড়ে নোট বন্দির সময় বেশ কয়েকদিন বাজারে বাপুজি কেক পাওয়া যায়নি। সেই সময় রাজ্যের বেশ কয়েকটি প্রথমসারির খবরের কাগজ বাপুজি না মেলা নিয়ে খবর করেছিল। এহেন বাপুজি কেকের ইতিহাস ঘাঁটতে গিয়ে দেখা যায়, ১৯৭৩ সালে অলকেশ জানার হাত ধরে বাপুজি কেকের পথ চলা শুরু। অলকেশ জানা নিউ হাওড়া বেকারি প্রাইভেট লিমিটেড নামে সংস্থার রেজিস্টেসন করে হাওড়ার পল্লবপুকুর অঞ্চলে প্রথম কারখানাটি খোলেন। পরবর্তীকালে লেকটাউন এবং হুগলির শ্রীরাপমপুরে বাপুজির দুটি ম্যানুফ্যাকচারিং ইউনিট খোলা হয়।
বাপুজি মূলত বিশেষ ধরনের ফ্রুট কেক। জনপ্রিয় হওয়ার পর বাপুজি নামে বেশকিছু নকল কেকও বাজারে বিক্রি হতে শুরু হয়। জানা গিয়েছে, বর্তমানে এই প্রবণতা আটকাতে সংস্থার তরফে মাঝে মাঝেই বিভিন্ন দোকানে সার্ভে করে কোয়ালিটি চেক করা হয়। বাপুজির পাশপাশি সংস্থা বিস্কুট, পাউরুটি এবং নানান ধরনের ফ্রুট কেক প্রস্তুত করে থাকে। বর্তমানে সংস্থার দায়িত্বে রয়েছেন অলকেশ জানার দুই পুত্র অমিতাভ জানা এবং অনিমেষ জানা।
বাহারি প্যাকেটের একাধিক ব্র্যান্ডের কেক বাজারে রয়েছে। প্রত্যেকেটির চাহিদাও তুঙ্গে। তবু এত রং-বেরঙের প্যাকেটের মাঝে সবুজ রংয়ের তেলতেলে কাগজে মোড়া বাপুজি একটি নিজেস্ব জায়গা করে নিয়েছে। সকাল হোক কিংবা সন্ধ্যে, চায়ের আগে এক পিস্ বাপুজি নিম্নবিত্ত থেকে মধ্যবিত্ত সকলেরই পছন্দের তালিকায় দীর্ঘ ৫০ বছর ধরে অন্যতম জায়গা করে নিয়েছে। শুধু স্বাদ নয় বাপুজি কেক পকেট বন্ধুও। বিজ্ঞাপনের যুগে কোনও প্রচার ছাড়াই বাপুজির এই জনপ্রিয়তা এক কথায় নজিরবিহীন। স্কুলের টিফিন বক্স থেকে শুরু করে শীতের পিকনিক, সময়ের সঙ্গে সঙ্গে যেন বাঙালির একটি আবেগের নাম হয়ে উঠেছে বাপুজি কেক।
Comments are closed.