কীভাবে প্রস্তুতি নিচ্ছে বড়িশা, একডালিয়া, টালা পার্কের পুজো? ভার্চুয়াল নয়, দূরত্ব রেখে, বিধি মেনেই পুজো, জানাচ্ছেন উদ্যোক্তারা
অতিমারির প্রভাব কাটিয়ে মানুষের আবার পুরনো ছন্দে ফেরার গান শুরু হয়েছে। মানুষের জীবনে আবার নতুন স্বাদের উপলব্ধির বিকাশ আস্তে আস্তে লক্ষ করা যাচ্ছে। কর্মহীন-দিশাহীন জীবনে যেন উৎসবের আলো এক নবজীবনের শ্বাস নিয়ে আসছে রাজ্যের মানুষের কাছে। তাই হয়তো অতিমারির দিনে দুর্গা পুজো কলকাতার পুজো কমিটিগুলোর কাছে এক নূতন পথের দিশা দেখাচ্ছে অর্থনীতিকে সচল করার লক্ষ্যে।
কলকাতার অন্যতম পুজোগুলির মধ্যে তাৎপর্যপূর্ণ হল বড়িশা ক্লাবের পুজো। পুজো কমিটির সভাপতি সুদীপ পোল্লের ভাষায়, এবছরের পুজো অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়ানোর লড়াই। সময়ের উপর গুরুত্ব রেখে এবছরে তাঁদের থিম লকডাউনের ফলে বহু শ্রমিক কাজ হারিয়ে পরিযায়ী নামে সংবাদপত্রের শিরোনামে বারবার উঠে এসেছেন। সেই পরিযায়ী শ্রমিকদের অবস্থান তাঁদের মৃৎশিল্পীর সৃষ্টিতে ধরা দিয়েছে বলে জানাচ্ছেন সুদীপবাবু। তবে অন্যবারের থেকে এ বারের বাজেটের পরিমাণ পাঁচ ভাগের এক ভাগ হয়ে গেছে বলে জানাচ্ছেন পুজো কমিটির কোষাধ্যক্ষ সমীর ভুঁইয়া। সুদীপবাবুর মতে, এবছরের পুজোর সমস্ত আচার সরকারি বিধিনিষেধ মেনেই হবে। অষ্টমীর অঞ্জলি থেকে দশমীর বিসর্জনের ক্ষেত্রে সামাজিক দূরত্ব, মাস্ক ও স্যানিটাইজার এই তিনটি বিষয়ের ওপর সর্বাধিক গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। তবে বড়িশা ক্লাবের এ বছরের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল চার হাজার দুঃস্থ মানুষকে অন্ন বস্ত্র দান। কলকাতার পুজো কমিটি হিসেবে এ বছরের পুজোয় যথেষ্ট মানবিক দৃষ্টিভঙ্গির পরিচয় বহন করছে বড়িশা ক্লাব।
দক্ষিণ কলকাতার আর এক গুরুত্বপূর্ণ পুজো একডালিয়া এভারগ্রিন। প্রতি বছরের মতো এবছরও একডালিয়া সাবেকিয়ানায় সেজে উঠছে। পুজো কমিটির সাধারণ সম্পাদক গৌতম মুখার্জির মতে, এবছরের পুজোতে তাঁদের সমস্ত আচার পালন হবে তবে বিধিনিষেধ মেনে। অষ্টমীর অঞ্জলি সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখেই হবে। প্রতি বছরের মতো এবছরও সপ্তমী, অষ্টমী এবং নবমীতে একডালিয়ার ভোগ জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত থাকছে বলে গৌতমবাবু জানাচ্ছেন। তবে স্পনসরশিপের বাড়বাড়ন্ত অন্যবারের মতো এবারে তেমন চোখে পড়ছে না। একডালিয়া এভারগ্রিন বিজয়ার পর প্রতি বছর পাড়ার সবাই মিলে একটা জলসার আয়োজন করে। মহামারীর ফলে এই বছরে এই অনুষ্ঠান থাকছে না বলেই গৌতমবাবু জানিয়েছেন। একডালিয়ার এবছরের পুজো আটাত্তরতম বর্ষ।
উত্তর কলকাতার অন্যতম পুজো কমিটি হল টালা পার্ক প্রত্যয়। টালা পার্ক প্রত্যয়ের সদস্য অভিজিৎ বসাক মনে করেন মহামারীর দিনে যে অর্থনৈতিক ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে, এই বছরের পুজো সেই ভাঙা রথের চাকা ঘোরাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেবে। প্রতি বছরের মতো এই বছরের পুজোতেও টালা পার্ক প্রত্যয়ের পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী প্রস্তুতি চলছে। গত তিন বছর ধরে যে সমস্ত মৃৎ শিল্পী, মণ্ডপ শিল্পী, ঢাকিদের নিয়ে পুজো হয়েছে এই বছরও তাঁদেরকে সঙ্গী করে টালা পার্ক প্রত্যয় এগিয়ে চলছে।
অষ্টমীর অঞ্জলি বা দশমীর সিঁদুর খেলার ক্ষেত্রে টালা পার্ক প্রত্যয় নির্ধারিত কুপনের ব্যবস্থা করছে বলে পুজো কমিটির কার্যকরী সভাপতি অরুণ সাহা জানাচ্ছেন। তবে টালা পার্ক প্রত্যয় ভার্চুয়াল পুজোর থেকে মণ্ডপে এসে ঠাকুর দেখার দিকে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে সমস্ত সতর্কতাকে অবলম্বন করে। তবে একটা কথা বলা যেতে পারে, মেঘাচ্ছন্ন আকাশেও সূর্যের বিভা দেখাচ্ছে কলকাতার পুজো কমিটিগুলো।
Comments are closed.