রবিনসন স্ট্রিটে ‘কঙ্কাল কাণ্ডে’র ছায়া বেলুড়ে, দাদা-দিদির মৃতদেহ আগলে বোন! বুধবার রাতে জোড়া দেহ উদ্ধার করল পুলিশ
দক্ষিণ কলকাতার রবিনসন স্ট্রিটের ছায়া এবারে হাওড়ার বেলুড়ে। ৩০ সেপ্টেম্বর, বুধবার রাতে বেলুড়ের ৫ নম্বর লালাবাবু সায়ার রোডের একটি বাড়িতে দুটি পচা মৃতদেহ উদ্ধার করে বেলুড় থানার পুলিশ । বাড়িতে ৭০ বছর বয়সী বৃদ্ধ মনোরঞ্জন সেন ও ৬৪ বছরের অমিতা সেনের মৃতদেহ আগলে রেখেছিলেন বোন রত্না সেন। ঘটনাটিকে কেন্দ্র করে বুধবার রাতে চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয় এলাকায়।
গত কয়েকদিন ধরে ওই বাড়ি থেকে দুর্গন্ধ বের হওয়ায় কথা জানতে পেরে পাড়ার ক্লাবের সদস্য প্ৰদ্যুৎ ঘোষ বুধবার সন্ধ্যায় ঘটনাস্থলে যান এবং বেলুড় থানার সহযোগিতায় তালা ভেঙে বাড়ির ভেতরে গিয়ে দেখেন, দুটি পচা-গলা মৃতদেহ ড্রয়িং রুমে পড়ে রয়েছে। পাশের ঘরেই ৬০ বছর বয়সী রত্না সেন শুয়ে। হাড়হিম করা এই ঘটনা জানাজানির পর থেকে স্বাভাবিকভাবেই এলাকাবাসীর মধ্যে তীব্র চাঞ্চলয়ের সৃষ্টি হয়েছে। স্থানীয় সিপিএম নেতা প্ৰদ্যুৎবাবু বলেন , দুপুর দেড়টা নাগাদ এলাকার কিছু লোকজন জানান, বেশ কিছুদিন ধরেই ওই বাড়ি থেকে দুর্গন্ধ বেরোচ্ছে।
বিষয়টি দেখার জন্য তিনি বাড়ির সামনে গিয়ে দেখেন কোলাপসিবল গেটে ভেতর থেকে তালা মারা। তিনি এরপরই বেলুড় থানায় ফোন করে খবরটি জানান। ঘটনাস্থল থেকে ঢিল ছোড়া দূরত্বে অবস্থিত বেলুড় থানার পুলিশ প্রায় দু’ঘন্টা পরে ঘটনাস্থলে এসে পৌঁছয়। অবশেষে পুলিশের সহযোগিতায় তালা ভেঙে ভেতরে প্রবেশ করে দেখা যায় বীভৎস দৃশ্য । প্রত্যক্ষদর্শী প্ৰদ্যুৎবাবু জানান, মৃতদেহেগুলির গন্ধ যাতে বাইরে না যায় , তাই রত্নাদেবী বন্ধ ঘরের সমস্ত জানলা ভেতরে প্লাস্টিকে ঢেকে রেখেছিলেন। এলাকাবাসীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, পূর্ব রেলের প্রাক্তন কর্মচারী মনোরঞ্জনবাবু অবিবাহিত ছিলেন, তিনি ও তাঁর দুই বোন ওই ফ্ল্যাটে থাকতেন। রাতেই মৃতদেহ দুটি পোস্টমর্টেম-এর জন্য মর্গে পাঠানো হয়েছে এবং অসুস্থ রত্নাদেবীকে হাওড়া হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
এলাকাবাসী দুটি মৃত্যুই স্বাভাবিক বলে মানতে রাজি নন। তাঁদের ধারণা, প্রায় ১২ থেকে ১৫ দিন আগেই ওই দুজনের মৃত্যু হয়েছে । যদিও পুলিশ জানিয়েছে, ময়নাতদন্তের রিপোর্ট না আসা পর্যন্ত তাঁদের কিছু বলা সম্ভব নয় ।
প্রসঙ্গত, ২০১৫ সালের ১০ জুন দক্ষিণ কলকাতার রবিনসন স্ট্রিটের একটি বাড়ির শৌচাগার থেকে উদ্ধার হয়েছিল ৭৭ বছর বয়সী এক বৃদ্ধের দেহ। সেই বাড়িতে গিয়ে পুলিশ জানতে পারে, মৃত ব্যক্তির ছেলে পেশায় সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার পার্থ দে দুটি কুকুর ও তাঁর দিদির কঙ্কালের সঙ্গে মাসের পর মাস ওই বাড়িতে রয়েছেন।
Comments are closed.