সুদূর ঋষিকেশে প্রতিবন্ধী বাঙালি কন্যার ছবি এঁকে বাঁচার লড়াই

জন্ম থেকেই নেই দু-হাত। তাতে কুছ পরোয়া নেই। মন্দিরের সামনে বসেই দিনের পর দিন ছবি এঁকে রোজগার করে চলেছে বছর আটত্রিশের বাঙালি কন্যা অঞ্জনা মালিক। উত্তরাখন্ডের ঋষিকেশের কোঠারি মঠে গেলে দেখাও মিলতে পারে তাঁর। প্রায় বছর পনেরো আগে পরিবারসহ তিনি চলে আসেন উত্তরাখন্ডের ঋষিকেশে। শারীরিকভাবে প্রতিবন্ধী অঞ্জনা তখন থেকেই  ঋষিকেশের কোঠারি মঠ সংলগ্ন ফুটপাতকেই বেছে নিয়েছেন নিজের রোজগারের উৎস হিসেবে। প্রথমে পথে ভিক্ষা করার সময় ‘রাম’ ও ‘ওম’ লিখে ভিক্ষা করতেন। তখন পর্যটকেরা ভিক্ষা দিতেন । তাই দিয়েই দিন গুজরান হত কোনও রকমে। একদিন পর্যটক হিসেবে ভারতে বেড়াতে আসা একজন আন্তর্জাতিক খ্যাতি সম্পন্ন চিত্রশিল্পীর সঙ্গে সেখানেই তাঁর পরিচয় হয়। তারপর তিনিই অঞ্জনাকে ছবি আঁকা শেখান।
বর্তমানে পা দিয়ে ছবি আঁকেন অঞ্জনা। ছবি প্রতি একশো টাকা নিয়ে, মাসে প্রায় চার হাজার টাকা তিনি এভাবেই রোজগার করেন। বাবা-মা, প্রতিবন্ধী দাদা ও তাঁর পরিবার মোট ছয়জনের রুজিরুটির দায়িত্ব তাঁর একার কাঁধে। এই রোজগার থেকেই মাসিক বাড়িভাড়া, ওষুধের খরচ সব কিছুই ব্যয় করতে হয় তাঁকে। রোজ প্রায় ছয় কিলোমিটারের বেশি পথ ও নদী পেরিয়ে এসে মন্দিরের কাছে বসে তিনি ছবি আঁকেন। শারীরিক ও আর্থিক প্রতিবন্ধকতার পাশাপাশি ছবি আঁকার  সময়ও নানান পারিপার্শ্বিক প্রতিবন্ধকতাও সহ্য করতে হয় এই বাঙালি কন্যাকে। অঞ্জনার কথায়, ‘পরিবারের খানিকটা স্বচ্ছলতা দেখার জন্য তিনি আরও পরিশ্রম করতে চান।’ তিনি আরও জানান, ‘পরিবারের নিরাপত্তার জন্য ভাল ঘর খুব প্রয়োজন, যার ব্যবস্থা তাঁকেই করতে হবে’। তিনি স্বপ্ন দেখেন একদিন তাঁরও একটি দোকান হবে, যেখানে বসে তিনি ছবি আঁকবেন।’ সম্প্রতি অঞ্জনার পাশে দাঁড়িয়েছেন হরিয়ানার জিডি গোয়েঙ্কা স্কুলের প্রধান কার্তিকেয় থিয়াম সুন্দরম এবং দিল্লি পাবলিক স্কুলের পক্ষ থেকে রোহিত শর্মা। সোস্যাল সাইটসে অঞ্জনার হয়ে প্রচার চালানোর পাশাপাশি আর্থিকভাবেও তাঁর পাশে দাঁড়াতে চান রোহিত শর্মারা। প্রচার চালিয়ে এখনও পর্যন্ত প্রায় ছয় হাজার ডলার সংগ্রহ করা গিয়েছে বলে তাঁদের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে।

Leave A Reply

Your email address will not be published.