তিন বছর আগে এই দেরিতে জমা দেওয়ার কারণে মনোনয়নপত্র বাতিল হয়ে গিয়েছিল সিপিএমের রাজ্যসভার প্রার্থী বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্যের। তিন বছর পর অবশেষে তিনি রাজ্যসভায় প্রবেশের ছাড়পত্র পেলেন। কী অদ্ভুত সমাপতন!
তৃণমূল সমর্থিত নির্দল প্রার্থী প্রাক্তন তৃণমূল বিধায়ক দীনেশ বাজাজের মনোনয়নপত্রও মঙ্গলবার বাতিল হয়ে গেল মঙ্গলবার। সোমবার মনোনয়নপত্র স্ক্রুটিনি ছিল। দীনেশ এবং তৃণমূলের এক প্রার্থী মৌসম বেনজির নুরের মনোনয়নপত্র নিয়ে বাম-কংগ্রেস প্রশ্ন তোলে। তারপর তা খুঁটিয়ে দেখা হয়। কমিশন জানায়, মঙ্গলবার রায় জানানো হবে। এদিন আরও পরীক্ষার পর দীনেশের মনোনয়ন বাতিল বলে ঘোষণা করে নির্বাচন কমিশন। ফলে রাজ্যসভার পঞ্চম আসনে আর ভোটাভুটির দরকার হচ্ছে না। এদিন বাকি পাঁচজনের মনোনয়নপত্র বৈধ বলে ঘোষণা করা হয়েছে। তাই বিনা লড়াইতে বাম-কংগ্রেস জোটের প্রার্থী বিকাশরঞ্জন রাজ্যসভার সদস্য হতে চলেছেন। তৃণমূলের বাকি চার সদস্য হলেন সুব্রত বক্সী, দীনেশ ত্রিবেদী, মৌসম বেনজির নুর এবং অর্পিতা ঘোষ।
রাজ্যসভা এবং লোকসভায় এই মুহূর্তে বাংলা থেকে কোনও বাম মুখ ছিল না। আগে বাংলা থেকে রাজ্যসভায় গিয়েছিলেন সিপিএমের সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরি। কিন্তু ২০১৭ এবং ২০১৮ সালে কংগ্রেসের প্রস্তাব সত্ত্বেও ইয়েচুরিকে রাজ্যসভার প্রার্থী করা হয়নি। সিপিএমের পলিটব্যুরো সদস্য প্রকাশ কারাট এবং তাঁর অনুগামীদের আপত্তি ছিল। তাঁদের যুক্তি ছিল, ইয়েচুরি দলের সাধারণ সম্পাদক। তাই তাঁর সংসদীয় রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়া ঠিক নয়। এবারও কংগ্রেস জানিয়েছিল, ইয়েচুরি যদি রাজ্যসভায় যান তাদের সমর্থন নিয়ে, তাতে তাদের আপত্তি নেই। বঙ্গ সিপিএমও চেয়েছিল, ইয়েচুরি যান রাজ্যসভায়। কিন্তু কারাট গোষ্ঠী এবারেও বাদ সাধে। শেষে দল বিশিষ্ট আইনজীবী বিকাশরঞ্জনকে রাজ্যসভায় প্রার্থী করতে চায়। কংগ্রেস তাতেও রাজি হয়ে যায়।
রাজ্য কংগ্রেস নেতাদের সঙ্গে বিকাশবাবুর সম্পর্ক খুবই ভালো। সারদা কেলেঙ্কারি নিয়ে রাজ্যের বিরোধী দলনেতা আব্দুল মান্নান সুপ্রিম কোর্টে যে মামলা করেন, বিকাশবাবু সেই মামলার অন্যতম আইনজীবী।
রাজ্যের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ বিকাশবাবু ২০০৫ সালে কলকাতা পুরসভার ভোটে প্রার্থী হন। জিতে বুদ্ধদেববাবুর ইচ্ছেতে তিনি কলকাতার মেয়র হন। ২০১০ সালের ভোটে তিনি আর দাঁড়াননি। ২০১৯ লোকসভা ভোটে তিনি যাদবপুর কেন্দ্র থেকে সিপিএম প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে পরাজিত হন। ওই ভোটে বাম প্রার্থীদের মধ্যে তিনিই একমাত্র জামানত রাখতে পেরেছিলেন ২১.০৪ শতাংশ ভোট পেয়ে। এর আগে রাজ্যসভায় সিপিএমের বাংলার মুখ ছিলেন ঋতব্রত ব্যানার্জি। কিন্তু দলবিরোধী কার্যকলাপের অভিযোগে তিনি বহিষ্কৃত হন। বহুদিন পর সিপিএম কিংবা বামেরা সংসদে বাংলা থেকে বলিয়ে কইয়ে একজন সাংসদ পেল। এখন বাংলা থেকে সংসদের দুই কক্ষে তিনিই একমাত্র মুখ।
Comments are closed.