নিজেদের গেটস ফাউন্ডেশনের কাজে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে, প্রান্তিক মানুষের কাছে বারে বারে ফিরে যান মাইক্রোসফটের প্রতিষ্ঠাতা কর্ণধার বিল গেটস ও তাঁর স্ত্রী মেলেন্ডা গেটস। সংস্থার প্রধানের পদ থেকে সরে আসার পর নিজেদের এই ফাউন্ডেশনের কাজে আরও বেশি করে মনযোগ দিচ্ছেন গেটস দম্পত্তি। একাধিকবার তাঁরা এসেছেন ভারতেও। কথা বলেছেন সমাজে অবহেলিত, পিছিয়ে পড়া, নির্যাতিত নানা প্রান্তিক শ্রেণীর মানুষের সঙ্গে। চেষ্টা করেছেন, করছেন যথা সর্বোস্বভাবে তাঁদের পাশে থাকার। গেটস দম্পতির এই অসামান্য সামাজিক উদ্যোগের কথা হয়তো অনেকেরই জানা। এবার সামনে এল বিল গেটসের এক অন্য অভিজ্ঞতার গল্প। এমন গল্প, যা শুনে কেঁদে ফেলেছিলেন বিল গেটস।
এইডস ও এইচআইভি ব্যাধি নিয়ে দীর্ঘ বছর ধরে নিজেদের আবাহন প্রজেক্টের মাধ্যমে কাজ করে আসছে গেটস ফাউন্ডেশন। গত দশ বছর ধরে আবাহনের দায়িত্বে আছেন ভারতের অশোক আলেকজান্ডার। গেটস ফাউন্ডেশনের আবাহন প্রজেক্টের কাজ করার সময় নিজের যে সমস্ত অভিজ্ঞতা হয়েছে, তা নিয়ে সম্প্রতি একটি বই লিখেছেন অশোক। বইয়ের নাম, ‘এ স্ট্রেঞ্জার ট্রুথঃ লেসনস ইন লাভ, লিডারশিপ অ্যান্ড কারেজ ফ্রম ইন্ডিয়াস সেক্স ওয়ার্কার্স’। বইটির ছত্রে ছত্রে উঠে এসেছে ভারতের যৌন কর্মী, নিষিদ্ধ পল্লির বাসিন্দাদের জীবনের গল্প, তাঁদের লড়াই, সামাজিক দুর্দশা, মন ভাঙা-গড়া, আশা-নিরাশা, জীবন যুদ্ধের গল্প। পাশাপাশি লেখা হয়েছে এইডস, এইচআইভির মতো মারণ ব্যাধি নিয়ন্ত্রণে ভারতের সাফল্যের কথা, যৌন কর্মীদের মধ্যে থেকেই উঠে আসা নেতৃত্বের কথা ও তাঁদের জীবন থেকে উঠে আসা নানা শিক্ষার কথা।
এই বইতেই এক জায়গায় ২০০০ সালের একটি ঘটনার কথা বলা হয়েছে। সেই সময় ভারতে এসেছিলেন বিল গেটস। কথা বলেছিলেন যৌন কর্মীদের সঙ্গে। অশোক লিখছেন, এক মহিলা যৌন কর্মী বিল গেটসকে নিজের জীবনের লড়াইয়ের কথা বলতে গিয়ে বলেছিলেন, নিজের এই কাজের কথা তিনি তাঁর মেয়ের থেকে লুকিয়ে রেখেছিলেন। কিন্তু কোনওভাবে বিষয়টি জানাজানি হয়ে যায়। জানতে পারে তাঁর মেয়েও। মেয়ে তখন ক্লাস এইটের পড়ুয়া। বিষয়টি জানতে পেরে স্কুলের সহপাঠীরা তাঁর কিশোরী মেয়েকে লাগাতার অপমান করতো, এক ঘরে করে দেওয়া হয়েছিল ওই কিশোরীকে। যার ফলে ধীরে ধীরে ডিপ্রেশনে চলে যায় তাঁর মেয়ে। অশোক লিখছেন, এরপর ওই মহিলা গেটসকে বলেন, একদিন তিনি ঘরে ফিরে দেখেন, গলায় ফাঁস লাগিয়ে সিলিং ফ্যান থেকে ঝুলছে তাঁর মেয়ে। রেখে গেছে একটি চিঠি। তাতে লেখা, আমি আর সহ্য করতে পারছিলাম না মা। অশোক লিখেছেন, এই কথা শোনার পর তিনি খেয়াল করেন, তাঁর পাশে বসা বিল গেটসের মাথা নীচু হয়ে গেছে, তাঁর চোখ থেকে গড়িয়ে পড়ছে জল।
দামি কর্পোরেট চাকরি ছেড়ে গেটস ফাউন্ডেশনের আবাহন প্রজেক্টে যোগ দেওয়া অশোক আলেকজান্ডার তাঁর বইতে বলছেন, এ এক অদ্ভুত জায়গা, যেখানে পেটের দায়ে ৫০ টাকার জন্য নিজের শরীর বেচে মহিলারা, ড্রাগস নেয় ১৪ বছরের বাচ্চারা, এ পেশায় নামে ট্রান্সজেন্ডার ও সমকামী পুরুষরাও।
Comments are closed.