মঙ্গলবারই ভার্চুয়াল জনসভায় হুঙ্কারের মধ্যে দিয়ে বিধানসভা ভোটের দামামা বাজিয়ে দিয়েছেন অমিত শাহ। পাল্টা জবাব দিয়েছে তৃণমূলও। বিজেপি-তৃণমূল থেকে সমদুরত্বের নীতি মেনে সোচ্চার হয়েছে বাম-কংগ্রেসও। রাজ্যে বিধানসভা ভোটের প্রস্তুতির মধ্যে দিয়ে একটা জিনিস পরিষ্কার, করোনা পরবর্তী যুগে ডিজিটাল মাধ্যমই হতে চলেছে রাজনৈতিক লড়াইয়ের অন্যতম হাতিয়ার।
ভারতীয় রাজনীতিতে সোশ্যাল মিডিয়ার ভূমিকা প্রথম টের পাওয়া যায় ২০১৪ সালে। প্রশান্ত কিশোরের তৈরি পরিকল্পনায় ডিজিটাল মিডিয়ায় ঝড় তোলে মোদীর টিম। সেই ঝড়ের তীব্রতা এখন আগের থেকে হাজার গুণ। মঙ্গলবার তারই এক ঝলক দেখা গেল রাজ্য রাজনীতিতে। কিন্তু বিজেপির প্রবল ডিজিটাল মিডিয়া প্রেজেন্সকে কি আদৌ চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলতে পারল তৃণমূল?
মঙ্গলবার দিল্লি থেকে বাংলার জন সংবাদ অভিযানে ভাষণে দেন বিজেপির প্রাক্তন সর্বভারতীয় সভাপতি তথা কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। বঙ্গ বিজেপির প্রধান দিলীপ ঘোষের দাবি ছিল, ইন্টারনেট বাহিত হয়ে সেই ভাষণ পৌঁছে যাবে অন্তত এক কোটি ফোনে বা স্ক্রিনে। কিন্তু ভাষণ শেষে দেখা গেল দর্শক ৫০ লক্ষ। এর সঙ্গে যুক্ত হবে টেলিভিশনে যাঁরা শুনেছেন।
সভার প্রচারে হ্যাশট্যাগ ব্যবহার করে বাংলার জন সমাবেশকে (#BanglarJanSamabesh) ট্রেন্ড করানো হয়। অন্যদিকে তার পাল্টা তৃণমূল নামায় হ্যাশট্যাগ বেঙ্গল রিজেক্টস অমিত শাহ (#BengalRejectsAmitShah)। অমিত শাহের ভাষণ যখন মধ্যগগনে, ডিজিটাল দুনিয়া তখন মেতে অন্য লড়াইয়ে।
বিজেপির অনুষ্ঠান শুরুর ঠিক আগে অভিষেক ব্যানার্জি অমিত শাহকে কটাক্ষ করে প্রশ্ন তোলেন, ভারতের ভূখণ্ড থেকে চিনে সৈনিক কবে যাবে?
১১ টার সামান্য পরে ভাষণ শুরু করেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। অমিত শাহের বক্তব্যের একটি একটি করে বিষয় ধরে ভেরিফায়েড ট্যুইটার হ্যান্ডেল থেকে ট্যুইট করতে থাকেন তৃণমূলের নেতা, সাংসদ, মন্ত্রীরা।
তৃণমূলের অফিসিয়াল পেজ থেকেও অমিত শাহের সভাকে কটাক্ষ করে ট্যুইট করা হয়। দ্রুত তা রিট্যুইট হতে থাকে।
পিছিয়ে ছিল না বিজেপি শিবিরও। একের পর এক ভেরিফায়েড অ্যাকাউন্ট থেকে পোস্ট হতে থাকে। কিন্তু দিনের শেষে কে জিতল?
অন্তত সংখ্যাতত্ত্বের বিচারে মঙ্গলবার বিজেপিকে মাত দিয়েছে তৃণমূল। কীভাবে?
শুরুতে ট্রেন্ডিংয়ে এক নম্বর ছিল বিজেপিরই #BanglarJanSamabesh। তারপর তারা ২ এ আসে। তারপর কেবলই পতন। অন্যদিকে, দুপুর ১ টা নাগাদ #BengalRejectsAmitShah সর্বভারতীয় ট্রেন্ডিংয়ে বিজেপির হ্যাশট্যাগকে টপকে এগিয়ে যায়। ইন্ডিয়া ট্রেন্ডসে ২৫ নম্বরে তখন তৃণমূল, ২৭ নম্বরে বিজেপি।
মঙ্গলবার বিকেল ৪ টেয় কলকাতা ট্রেন্ডিং লিস্টে এক নম্বর #BengalRejectsAmitShah। সেই সময় অনেকটা পিছিয়ে পড়েছে বিজেপির #BanglarJanSamabesh। সন্ধে ৭ টায় দেখা যায় তৃণমূলের হ্যাশট্যাগ ব্যবহার করে ট্যুইট করেছেন ৮৫ হাজার মানুষ। অন্যদিকে সন্ধে সাড়ে ৬ টায় বিজেপির #BanglarJanSamabesh ব্যবহার করে ট্যুইট করেছেন ৩৫ হাজার মানুষ। তারপরই ট্রেন্ডিং লিস্টের বাইরে চলে যায় #BanglarJanSamabesh।
দেশের বিভিন্ন রাজ্যে আইটি সেলের মাধ্যমে সফলভাবে মিডিয়া ম্যানেজমেন্ট করছে বিজেপি। অন্যদিকে তৃণমূলের আইটি সেলের কার্যকারিতা বড় মঞ্চে পরীক্ষিত নয়। তাই অমিত শাহের মঙ্গলবারের ভার্চুয়াল সভা দুই পক্ষের কাছেই হয়ে উঠেছিল শক্তি পরখ করে নেওয়া। দিনের শেষে দেখা গেল, তৃণমূল বাহিনীর ঝড়ের সামনে পিছিয়ে গিয়েছে বিজেপি।
বিধানসভার কড়া টক্করের আগে যা খানিকটা হলেও স্বস্তি দেবে তৃণমূলের সোশ্যাল মিডিয়া ম্যানেজারদের।
Comments are closed.