অনলাইনে অফিসের কাজ, অনলাইন ক্লাস, তারপর আবার ফেসবুক বা অনলাইন গেমসে ডুব। করোনা-লকডাউন পরিস্থিতিতে দৈনন্দিন রুটিনটা এমনই ডিজিটাল নির্ভর হয়ে গিয়েছে। অবসর সময়ে বই পড়া এখন মুষ্টিমেয় কয়েকজনের অভ্যেস। কিন্তু বাড়িতে থাকার এই সময়ে বইয়ের সঙ্গে সম্পর্কটা ঝালিয়ে নিতে পারতেন।
বই পড়ার অভ্যাস তৈরি করুন (Build Book Reading Habit)
“A reader lives a thousand lives before he dies… The man who never reads lives only one.” – George R.R. Martin
সময়ের সঙ্গে সঙ্গে যদি বই পড়ার অভ্যেস হারিয়ে ফেলেন এবং তা আবার ফেরত আনতে চান তার সবচেয়ে ভালো উপায় ছোটবেলায় পড়া কমিকস কিংবা কার্টুন সিরিজ। ওই ছোট বই দিয়ে শুরু করলে অল্প সময়েই শেষ করতে পারবেন। এতে বইটি পড়ে শেষ করার সঙ্গে সঙ্গে গল্পের রেশও আপনার মনে দাগ কাটবে। ছোটবেলার কমিকস পড়ার দিনগুলোর কথা মনে আসবে। সেই সঙ্গে আরেকটি বই পড়তে মনে উৎসাহ জাগবে। এভাবেই আস্তে আস্তে বইয়ের প্রতি আপনার টান তৈরি হবে।
বড় বই হাতে নিয়ে কবে বা কখন শেষ হবে এই চিন্তা মনে ঠাঁই দেবেন না। প্রথমেই সিদ্ধান্ত নিন প্রথম চ্যাপ্টারটি পড়ে শেষ করবেন। পড়া শেষ হলে নিজেকে ছোটখাটো একটা জিনিস উপহার দিন। হতে পারে সেটা এক কাপ গরম কফি। কফি শেষ হলে পরবর্তী চ্যাপ্টার পড়তে শুরু করুন। ততক্ষণে গল্পের টান আপনাকে পেয়ে বসেছে।
আস্তে আস্তে প্রিয় লেখক ও প্রিয় বই দিয়ে পড়াশোনা শুরু করুন সময় নিয়ে আয়েশ করে বই পড়ুন। গুরুত্বপূর্ণ কোনও কাজ রেখে বই পড়া থেকে বিরত থাকুন। এতে বই পড়ার অভ্যাস তৈরি তো দূরের কথা, উল্টো আরো বই বিমুখ হওয়ার আশঙ্কা বেশি।
কাজের ফাঁকে যদি কিছুটা সময় পান তখনই শুরু করুন reading habit. কিন্তু বই পড়ার সময় অন্য কোনও কাজ, মোবাইল ফোনের নোটিফিকেশন চেক, কাউকে ফোন করা, এসব এড়িয়ে চলুন। এতে মনোযোগ নষ্ট হয়। পছন্দের বই বাছাই করতে না পারলে পড়ুয়া কোনও বন্ধুর সাহায্য নিন। পারিবারিক আড্ডার সময় পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে যা পড়লেন তা নিয়ে জমিয়ে আলোচনা করুন, গল্প শোনান।
এতে সবারই বইয়ের প্রতি টান তৈরি হবে। কোনও বন্ধুকে তার প্রিয় বইয়ের নাম বা গল্প বলতে বলুন। এতে সেই বইটিও আপনার পড়তে আগ্রহ তৈরি হবে। আর যেটা পড়লেন সেটা সহজে আর ভুলবেন না। আলোচনার ফলে বহুদিন সেই গল্প, কাহিনির রেশ থেকে যাবে মনে। প্রতিদিনই নিয়ম করে কিছু না কিছু পড়ার চেষ্টা করুন। হোক সেটা ১০ পাতা। এতে অভ্যাসটা অন্তত থাকবে।
ছোটদের Book Reading Habit তৈরি করান
“There is no such thing as a child who hates to read; there are only children who have not found the right book.” —Frank Serafini
অনলাইন ক্লাস ছাড়া গেমিং, সোশ্যাল সাইটে ঢুঁ ইত্যাদির মাধ্যমে এখন পড়ুয়াদের সিংহভাগ সময়ই কাটছে কম্পিউটার বা স্মার্টফোনে। তৈরি হচ্ছে নেটদুনিয়ার প্রতি তীব্র আসক্তি। প্রয়োজনের চেয়ে বেশিই সময় কাটছে স্মার্টফোনে। যা মানসিক ও শারীরিক স্বাস্থ্যের পক্ষে মোটেই ভালো নয়। তাই ছোটদের পাঠ্যবই ছাড়াও অন্যান্য বইয়ের সঙ্গে পরিচয় করানোর দায়িত্ব বড়দেরই। ছোটদের বইয়ের প্রতি টান তৈরি করতে এমন বই তাদের হাতে তুলে দিন যাতে তাদের আগ্রহ জন্মায়।
বই পড়ার অভ্যাস গড়ে তুলতে যা যা করতে পারেন (How to Develop Book Reading Habit?)
প্রতিদিন দিনের একটি বড় সময় আমরা সোশ্যাল মিডিয়ায় ব্যয় করে থাকি। ফেসবুকে চ্যাট, টুইটারে টুইট অথবা কাজের ফাঁকে সহকর্মীদের সঙ্গে আড্ডা দেওয়া। এই সময়টিতে বই পড়তে পারেন। দিনের একটা নির্দিষ্ট সময় আলাদা করে রাখুন, যাই হোক ওই সময় বইতে ডুব দেবেনই, মনে মনে এটাই স্থির করে ফেলুন।
খুব বেশি সময় না দিতে পারেন দিনে অন্তত ১৫ থেকে ২০ মিনিট সময় দিয়ে পড়ার অভ্যাস শুরু করুন, দেখবেন পড়ার অভ্যাস আবার ফিরে এসেছে।
একের অধিক বই সঙ্গী
অনেকেই একটি সময় একটি বই পড়ার পরামর্শ দিয়ে থাকেন। তবে একটি সময় একের অধিক বই পড়া আপনার সময় বাঁচিয়ে দেবে। আপনি চাইলে একটি সময় নির্দিষ্ট করে নিতে পারেন বই পড়ার জন্য। তা হতে পারে রাতে ঘুমোতে যাওয়ার আগে অথবা অফিসের কাজ সেরে সন্ধ্যার সময়টি।
পড়ালেখা অনলাইনে
আপনাকে যদি অনলাইনে বেশি সময় ব্যয় করতে হয়, তবে বই পড়ার কাজটি আপনি অনলাইনেও সেরে নিতে পারেন। অনলাইনে অনেক ওয়েবসাইট পাবেন যেখানে আপনার পছন্দের বই পেয়ে যাবেন। কাজের ফাঁকে সময় করে পড়ে নিন প্রিয় বইটি। অগ্রাধিকার দিন বইতে।
ভ্রমণে
অফিসে যাতায়াতের জন্য আপনি কি ব্যবহার করেন বাস, রিকশা অথবা অটোরিকশা? অফিসে যাওয়ার সময়টিতে অনেকেই গান শুনে থাকেন। গান শোনার পরিবর্তে বই পড়ুন। এই সময়টিতে অনলাইন প্ল্যাটফর্ম থেকেও বই পড়ে নিতে পারেন।
৫০ পৃষ্ঠা কৌশল
আপনি বই পড়ার পৃষ্ঠা নির্দিষ্ট করে নিতে পারেন। যেমন ৫০ পৃষ্ঠা পর্যন্ত আজ পড়ে শেষ করবেন। হাতে খুব বেশি সময় না থাকলে অল্প করে লক্ষ্য নির্ধারণ করে নিতে পারেন। তা ১০ পৃষ্ঠা হতে পারে আবার ২০ পৃষ্ঠাও হতে পারে।
পড়ার সঙ্গী খুঁজে ফেলুন
আপনার কর্মস্থলে কিছু কর্মী খুঁজে পাবেন, যারা বই পড়তে ভালোবাসেন। তাদের সঙ্গে একটি book reading partner গ্রুপ তৈরি করে নিতে পারেন। আড্ডায় বই পড়া নিয়ে গল্প করুন। বই আদান-প্রদান করে নিতে পারেন। এই কাজটি আপনার পড়ার গতি বাড়িয়ে দেবে।
Comments are closed.