দেশের অর্থনীতিতে ঘোর দুর্যোগের ঘনঘটা। নামছে জিডিপি। দেদারে যাচ্ছে কাজ। চাহিদার অভাবে ধুঁকছে ভারতের বাজার। সঙ্কট কাটার আশু লক্ষণ নেই। কিন্তু জানেন কি, এই আকালেও অন্তত এমন ৬ টি ক্ষেত্র আছে, যা ভবিষ্যতে দৌড়বে কেবল নয়, কার্যত উড়বে। থাকছে বিপুল কর্মসংস্থানের প্রত্যাশাও। এমনই বলছেন বাজার বিশেষজ্ঞরা।
প্রথমেই যে ক্ষেত্র বা সেক্টরের ভবিষ্যৎ উজ্জ্বল তা হল, গেমিং। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ২০১৯ এর শেষে ভারতে ৫৩ কোটি মিলিয়ন মানুষের হাতে স্মার্ট ফোন থাকবে। এই হিসেবের সঙ্গে সঙ্গতি রেখেই বাড়বে গেমিং ইন্ডাস্ট্রিও। বর্তমানে ভারতের গেমিং সেক্টরের বার্ষিক আয় প্রায় ৮৯০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। ২০২০ নাগাদ তা পৌঁছতে পারে ১.১ বিলিয়ন ডলারে। এই বিপুল বৃদ্ধির সঙ্গে সমানুপাতিক হারে বাড়বে এই সেক্টরে কাজের চাহিদাও। একই সঙ্গে মোবাইল গ্যাম্বলিং বা প্লে উইনের মতো খেলার বৃদ্ধিও হবে ২ থেকে ৫ গুণ। এই ক্ষেত্রে মূল বাধা হল সরকারি বিধিনিষেধ।
দ্বিতীয় সবচেয়ে লোভনীয় ক্ষেত্র হিসেবে উঠে এসেছে বিদ্যুৎ উৎপাদন। ভারতের প্রয়োজনীয় বিদ্যুতের ৭১ শতাংশই আসে তাপ বিদ্যুৎ থেকে। কিন্তু অপ্রচলিত শক্তি থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদনেরও চল তৈরি হচ্ছে। ভবিষ্যতে যা ক্রমেই বাড়বে। দেশের অর্থনৈতিক মন্দা কাটলে যে জিনিসের চাহিদা রাতারাতি বেড়ে যাবে তা হল বিদ্যুৎ। ফলে কর্মসংস্থানেরও সুযোগ বাড়বে।
তৃতীয় স্থানে রয়েছে ট্যুরিজম। বিশ্বজুড়ে ইকো ট্যুরিজমের জোয়ার এসেছে। দেখা যাচ্ছে, ভারতের ২০১১ সালে যতজন পর্যটক এসেছিলেন ১০ বছরের মধ্যে সেই পরিমাণ বেড়ে গিয়েছে প্রায় ১০ শতাংশ। এই সংখ্যাটা ক্রমশ বাড়ছে। ফলে পর্যটন ক্ষেত্রে নতুন দিগন্ত উন্মোচন হতে চলেছে আগামী দিনে। স্বভাবতই এই ক্ষেত্রেও প্রয়োজন হবে প্রচুর কর্মীর।
হসপিটালিটি রয়েছে এরপর। আগামী দিনে হসপিটালিটি ইন্ডাস্ট্রিতে প্রয়োজন হবে প্রচুর কর্মীর। পর্যটন শিল্পে জোয়ার এলে সেই প্রভাব এসে পড়বে হসপিটালিটিতেও। তৈরি হবে থাকার প্রচুর জায়গা। ভারতের বৈচিত্রপূর্ণ খাদ্যের সম্ভারকে এক ছাদের তলায় পরিবেশনের চাহিদা বাড়বে। এর ফলে একদিকে যেমন হসপিটালিটি ক্ষেত্রে নতুন নতুন জায়গা তৈরি হবে, তেমনই এজন্য প্রয়োজন হবে নির্মাণ শিল্পের। হোটেল, ঘর, বাড়ি নির্মাণ করতে প্রয়োজন হবে আরও কর্মীর। পাশাপাশি ফুড প্রসেসিং বা খাদ্য প্রক্রিয়াকরণেও জোর বাড়বে। সেখানেও আরও কর্মীর প্রয়োজন হবে।
এরপর অ্যানিমেশন। ২০১৭ সালে দেশে অ্যানিমেশন ইন্ডাস্ট্রির আয়তন ছিল ৫৯ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। বৃদ্ধির হার ছিল বাৎসরিক ১৬.৪ শতাংশ। ভবিষ্যতেও যার বৃদ্ধি নিয়ে একপ্রকার নিশ্চিত বিশেষজ্ঞরা। তাদের দাবি, আগামী কয়েক বছরের মধ্যে নেটফ্লিক্স, অ্যামাজনের মতো ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম ভারতের টিভির বাজারকে সরাসরি প্রতিদ্বন্দ্বিতার মুখে ফেলবে। স্বভাবতই অ্যানিমেশনের চাহিদাও বাড়বে দুই মাধ্যমেই। আগামী দিনে বিনিয়োগ কিংবা কর্মসংস্থান তৈরিতে বড় ভূমিকা নেবে অ্যানিমেশন ইন্ডাস্ট্রি। ইতিমধ্যেই তেলেঙ্গানা, অন্ধ্র প্রদেশে পৃথক অ্যানিমেশন নীতি তৈরির কথা ঘোষণা করেছে।
২০১৯ থেকে ২০২৩ সালের মধ্যে পৃথিবীতে সবচেয়ে দ্রুত যে শিল্প বাড়বে তা হল মোবাইল পেমেন্ট। আর এই দ্রুততম বৃদ্ধির মূল ক্ষেত্র কিন্তু ভারত। অর্থাৎ, পেটিএম, ফোনপে কিংবা গুগল পে-এর বাজার ক্রমবর্ধমান। ২০১৮ সালেই ইউপিআই ১ ট্রিলিয়ন টাকার গণ্ডী টপকে গিয়েছে। আরও দ্রুত এই ক্ষেত্র বাড়বে। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ব্যবহার আরও নির্ভুল করে তুলবে মোবাইল ওয়ালেট পরিষেবা ক্ষেত্রকে। ফলে এই সেক্টরেও প্রয়োজন হবে প্রচুর কর্মীর।
Comments are closed.