খোদ আমেরিকার আইনের ধাঁচেই সিএএ! তবে কোন মুখে ইউএস কংগ্রেস নাগরিকত্ব আইনের সমালোচনা করছে? প্রশ্ন ভারতের
নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন নিয়ে ঘরে বাইরে সমালোচনার মুখে মোদী সরকার। ঘরের আন্দোলন সামাল দিতে যখন নাজেহাল কেন্দ্র, তখন এই আইন নিয়ে কড়া সমালোচনার সুর বিশ্বের শক্তিধর দেশগুলোর কণ্ঠেও। সবচেয়ে বেশি প্রতিবাদ আসছে সুপার পাওয়ার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের তরফে। যা নয়াদিল্লির চাপ আরও বাড়িয়েছে।
পরিস্থিতি এমনই যে ইউএস কংগ্রেসের একাধিক সদস্য কোনও রাখঢাক না করে নয়া আইনের বিরোধিতা করেছেন এবং ভারত সরকারের কাছে এমন আইনকে ভেদাভেদপূর্ণ বলে দাবি করে প্রত্যাহারের আবেদন জানিয়েছেন।
মার্কিন নাগরিক সমাজেও এই আইনের জোরদার সমালোচনা অব্যাহত। এই পরিস্থিতিতে ভারত সরকারের কূটনীতিকরা খুঁজে পেয়েছেন এক ব্রহ্মাস্ত্রের। যা কার্যত ভারতের নয়া নাগরিকত্ব আইনের ধাঁচেই বিশেষ কয়েকটি দেশের সংখ্যালঘু ধর্মীয় অত্যাচারিতদের শরণার্থীর মর্যাদা এবং শেষে নাগরিকত্ব দেয়। এবং সেই আইন বলবৎ রয়েছে খোদ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রেই! এবার সেই মার্কিন আইনকে সম্বল করেই আমেরিকার যাবতীয় সমালোচনা ও বিরোধিতা ভোঁতা করার পরিকল্পনা করছেন ভারতীয় কূটনীতিকরা।
১৯৮৯-৯০ সালে মার্কিন সেনেটর ফ্রাঙ্ক ল্যুটেনবার্গ সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়ন থেকে ধর্মীয় কারণে অত্যাচারিত হয়ে দেশ ছাড়তে বাধ্য হওয়া সংখ্যালঘু মানুষদের প্রথমে শরণার্থীর মর্যাদা তারপর মার্কিন নাগরিকত্ব দেওয়ার বিশেষ আইনের প্রয়োজনীয়তার কথা বলেন। আইন তৈরি হয়। আইনটি জনপ্রিয় হয় ল্যুটেনবার্গ অ্যামেন্ডমেন্ট নামে। ২০০৪ সালে সংশোধনীর মধ্যে ঢোকানো হয় ইরানে ধর্মীয় কারণে অত্যাচারিতদেরও।
ল্যুটেনবার্গের বক্তব্য ছিল, নির্দিষ্ট ধর্মাবলম্বীরা কয়েকটি নির্দিষ্ট দেশে ঐতিহাসিকভাবে অত্যাচারিত গোষ্ঠী হিসেবে পরিচিতির দাবি রাখে। তাদের মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে শরণার্থীর মর্যাদা পাওয়ার জন্য অত্যাচারের ব্যক্তিগত দলিল দাখিল করার কোনও প্রয়োজন নেই।
মার্কিন কংগ্রেসের একাধিক রিপোর্টে উল্লেখ রয়েছে এই আইনের ফলে সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের ইহুদি এবং ধর্মপ্রাণ খ্রিশ্চানরা উপকৃত হয়েছিলেন। এই আইনে ইউক্রেনিয়ান ক্যাথলিক চার্চ বা অর্থোডক্স চার্চের কর্মকাণ্ডে অংশ নেওয়া মানুষেরাও মার্কিন মুলুকে সহজে শরণার্থী এবং পরিশেষে নাগরিকত্ব পেয়েছেন। ২০০৪ সালে বিশেষ সংশোধনীর মাধ্যমে এতে ইরানের নাম ঢোকানো হয়। ফলে তারপর থেকে ইরানে ধর্মীয় কারণে অত্যাচারের শিকার হয়ে যে সংখ্যালঘুরা দেশ ছাড়তে বাধ্য হয়েছেন এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে আশ্রয় নিয়েছেন তাদেরও সহায়ক হয়েছে এই ল্যুটেনবার্গ অ্যামেন্ডমেন্ট।
কে ফ্রাঙ্ক ল্যুটেনবার্গ?
এক ইহুদি শরণার্থী দম্পতির সন্তান ফ্রাঙ্ক ল্যুটেনবার্গ। পোলান্ড এবং সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়ন থেকে পালিয়ে গিয়ে তাঁরা আশ্রয় নিয়েছিলেন আমেরিকার নিউ জার্সিতে। সমস্ত প্রতিকূলতাকে হারিয়ে নিউ জার্সি থেকেই ফ্রাঙ্ক ল্যুটেনবার্গ পরপর ৫ বার মার্কিন সেনেটে যান। আজ অবধি ফ্রাঙ্ক ল্যুটেনবার্গই নিউ জার্সির সবচেয়ে বেশি সময় ধরে পদে থাকা সেনেটর। ২০১৩ সালে মৃত্যু হয়ে ল্যুটেনবার্গের।
ইউএস কংগ্রেসের কাছে এই আইনকে স্থায়ী আইনের তকমা দেওয়ার দাবি জানিয়েছিল ল্যুটেনবার্গের ইউএস কমিশন অন ইন্টারন্যাশনাল রিলিজিয়াস ফ্রিডম বা ইউসিআইআরএফ। তা এখনও গ্রাহ্য হয়নি। বর্তমানে ল্যুটেনবার্গ অ্যামেন্ডমেন্টকে বাৎসরিক পর্যালোচনার মধ্যে দিয়ে যেতে হয়।
এবার মার্কিন মুলুকের সেই ল্যুটেনবার্গকে হাতিয়ার করেই ওয়াশিংটনকে তর্কে পর্যুদস্ত করার পরিকল্পনা দিল্লির কর্তাদের।
Comments are closed.