যে বিজেপি নেতার উস্কানিমূলক ভাষণের পরেই দিল্লিতে হিংসা ছড়াল বলে বিরোধীদের অভিযোগ, তাঁর বিরুদ্ধে এফআইআর তো হলই না। উলটে সেই কপিল মিশ্রকে ওয়াই প্লাস ক্যাটেগরির নিরাপত্তা দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিল দিল্লি পুলিশ। এই নিয়ে বিরোধীরা প্রশ্ন তুলেছেন। বিরোধী নেতারা বলছেন, কেন্দ্রীয় সরকারের আশীর্বাদের হাত মাথায় আছে বলেই কপিলের মতো নেতা বাড়তি নিরাপত্তা পাচ্ছেন। তাঁর বিরুদ্ধে আদৌ এফআইআর হবে কি না, এখন তো তা নিয়েও সন্দেহ দেখা দিচ্ছে। এর বিরুদ্ধে সরব হয়েছেন নেটিজেনরাও। দিল্লি পুলিশের যুক্তি, কপিলের উপর হামলা হতে পারে এবং তাঁকে প্রাণনাশের হুমকি দেওয়া হচ্ছে। তাই এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এর ফলে ২৪ ঘণ্টাই তাঁর সঙ্গে থাকবে একাধিক সশস্ত্র নিরাপত্তা রক্ষী। যদিও কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের দাবি, এ বিষয়ে তাদের কিছু জানা নেই। যদিও দিল্লি পুলিশ কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছেই রিপোর্ট করে থাকে। তারা কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকেরই অধীন।
দিল্লির জাফরাবাদে মেট্রো স্টেশনের অদূরে মহিলারা সিএএ-র বিরুদ্ধে অবস্থান চালাচ্ছিলেন। ২৩ ফেব্রুয়ারি বিকেলে কপিলের দলবল সেখানে গিয়ে অবস্থান তুলে না নিলে পরিণাম ভয়াবহ হবে বলে হুমকি দেন। এক জমায়েতে তিনি উস্কানিমূলক ভাষণও দেন। তার পরেই সন্ধ্যা থেকে শুরু হয় সিএএ সমর্থক ও বিরোধীদের মধ্যে তীব্র সংঘর্ষ, যা পরে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার আকার নেয়। ওই সংঘর্ষের রেশ ছড়ায় দিল্লির বিভিন্ন প্রান্তে। তাতে মোট ৪২ জনের মৃত্যু হয়েছে এ পর্যন্ত। জখম বহু। ভাঙচুর, লুঠপাট সবই চলেছে দেদার। এখনও উপদ্রুত ওই সব এলাকায় আতঙ্ক তাড়া করে বেড়াচ্ছে বাসিন্দাদের। অভিযোগ, কপিল ছাড়াও প্রবেশ ভার্মা, কেন্দ্রীয় মন্ত্রী অনুরাগ ঠাকুর প্রমুখ শাহিন বাগের আন্দোলনের শুরু থেকেই প্ররোচনামূলক কথাবার্তা বলছিলেন। কিন্তু দিল্লি পুলিশ তাঁদের কারও বিরুদ্ধে কোনও ব্যবস্থা নেয়নি। দিল্লি হাইকোর্টের বিচারপতি এস মুরলিধর নিজের বাড়িতে এজলাস বসিয়ে কেন্দ্রের এবং দিল্লি সরকারের আইনজীবীদের কাছে জানতে চান, কেন ওই বিজেপি নেতা-মন্ত্রীদের বিরুদ্ধে পুলিশ এফআইআর করেনি এখনও। তিনি ২৪ ঘণ্টার মধ্যে এফআইআর করার নির্দেশ দেন। তার পরের দিনই মুরলিধরকে বদলি করে দেওয়া হয়। পরে দিল্লি-হিংসার মামলা শোনেন দিল্লি হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি। তাঁকে কেন্দ্রীয় সরকারের তরফের আইনজীবী সলিসিটর জেনারেল তুষার মেহতা জানান, তাড়াহুড়ো করে এফআইআর করতে গেলে ভুল হয়ে যাবে। তিনি এর জন্য সময় চান। প্রধান বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চ সরকার এবং দিল্লি পুলিশকে এফআইআর করার জন্য চার সপ্তাহ সময় দেন। এর মধ্যেই কপিলের জন্য কেন্দ্র এবং দিল্লি পুলিশ বাড়তি নিরাপত্তার ব্যবস্থা করল।
কপিলের ঘনিষ্ঠ মহল এবং বিজেপির একাংশের তরফে জানানো হয়েছে, দিল্লির হিংসার পরে বিভিন্ন সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং সাইটের মাধ্যমে প্রাণনাশের হুমকি পাচ্ছেন তিনি। সেই কারণেই কপিল পুলিশের কাছে অতিরিক্ত নিরাপত্তার আবেদন করেছিলেন। তাই তাঁকে অতিরিক্ত নিরাপত্তা দেওয়ার এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
Comments are closed.