করোনায় মৃত্যুহার: দেশে শীর্ষে গুজরাত, মৃত্যুর হার সবচেয়ে কম বাম শাসিত কেরলে, আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যায় একে মহারাষ্ট্র
চিন থেকে ছড়িয়ে পড়া করোনাভাইরাসে এ দেশে প্রথম আক্রান্তের খবর এসেছিল কেরল থেকে। তারপর একের পর এক বিভিন্ন রাজ্য থেকে ক্রমে সারা দেশে ছড়িয়ে পড়া করোনায় মৃত্যু হয়েছে ২৫০ জনের বেশি মানুষের।
সরকারি তথ্য বলছে, এপ্রিল পর্যন্ত কোভিড-১৯ এ আক্রান্তের মৃত্যুহারে শীর্ষে মোদী রাজ্য গুজরাত, আর মৃত্যুহার সবচেয়ে কম বাম শাসিত কেরলে। তবে করোনায় আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যায়, দু’দিক থেকেই প্রথম মহারাষ্ট্র।
সম্প্রতি মেডিক্যাল এডুকেশন ড্রাগস ডিপার্টমেন্ট (MEDD) প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, ৮ এপ্রিল পর্যন্ত মহারাষ্ট্রে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা ১ হাজার ১৩৫ এবং মৃতের সংখ্যা ৭৪, মৃত্যুহার দাঁড়িয়েছে ৬.৩৪ শতাংশে, যা দেশের মধ্যে তৃতীয় সর্বোচ্চ।
এদিকে, গুজরাতে ১৭৯ জন করোনা আক্রান্তের মধ্যে মৃত্যু হয়েছে ১৬ জনের। আক্রান্তের নিরিখে মৃত্যু হার ৮.৯৪ শতাংশ, যা দেশের মধ্যে সর্বোচ্চ। এরপরেই রয়েছে পাঞ্জাব। সেখানে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা ১০১ এবং মৃত্যু হয়েছে ৮ জনের, মৃত্যুহার ৭.৯২ শতাংশ।
অন্যদিকে, যে কেরলে ধরা পড়েছিল দেশের প্রথম করোনা পজিটিভ রোগী, সেখানে আক্রান্তের সংখ্যা ৩৪৫ ছাড়িয়েছে, উল্লেখযোগ্যভাবে সেখানে মৃত্যুহার মাত্র ০.৫৭ শতাংশ। করোনায় মারা গিয়েছেন মাত্র ২ জন।
করোনায় আক্রান্তদের মধ্যে মৃত্যুহারে বেশ ওপরের দিকে রয়েছে মধ্যপ্রদেশ। হিন্দি বলয়ের এই রাজ্যে করোনা আক্রান্ত হয়েছেন ২২৯ জন, মৃত্যু হয় ১৩ জনের, মৃত্যু হার ৫.৬৮ শতাংশ। এদিকে হিমাচলপ্রদেশে মাত্র ১৮ জন কোভিড-১৯ এ আক্রান্ত হলেও মৃত্যু হয়েছে ১ জনের। যার ফলে মৃত্যু হার দাঁড়িয়েছে ৫.৫ শতাংশে। বৃহস্পতিবার প্রকাশিত এই রিপোর্টে, এরপরেই রয়েছে পশ্চিমবঙ্গ। এই রিপোর্ট অনুযায়ী, ১০৩ জন আক্রান্তের মধ্যে মৃত্যু হয়েছে ৫ জনের। মৃত্যুহার ৫.৬৮ শতাংশ। যদিও শনিবার মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি জানান, রাজ্যে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা ৯৫।
তামিলনাড়ু ও দিল্লিতে আক্রান্তের তুলনায় মৃত্যুহার কম। তামিলনাড়ুতে ৭৩৮ জন করোনা আক্রান্তের মধ্যে মৃত্যু হয়েছে ৮ জনের, মৃত্যুহার ১.০৮ শতাংশ। দিল্লিতে আক্রান্তের সংখ্যা ৬৬৯, মারা গিয়েছেন ৯ জন। মৃত্যুহার ১.৩৪ শতাংশ।
দেশে করোনা আক্রান্তদের মধ্যে সামগ্রিক মৃত্যুহার এখন প্রায় ৩ শতাংশ। মোদী রাজ্যে করোনায় মৃত্যুহার বেশি হওয়ার পিছনে স্বাস্থ্য পরিষেবার খামতিকে নিশানা করছেন অনেকে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, প্রধানমন্ত্রী গত ২৪ মার্চ থেকে লকডাউন ঘোষণার পর তাঁর রাজ্যের সরকার মাত্র ৯ হাজার স্বাস্থ্যকর্মীকে প্রশিক্ষণ দেওয়া গিয়েছে এবং ব্যবস্থা করা গিয়েছে মাত্র ১৫৬ টি অতিরিক্ত ভেন্টিলেটরের। স্বাস্থ্যক্ষেত্রে এই দুরবস্থাই করোনা মৃত্যুহার বৃদ্ধির অন্যতম কারণ বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
বর্তমানে প্রতি ১ হাজার রোগী প্রতি গুজরাতের হাসপাতালে শয্যা সংস্থান রয়েছে ০.৩৩% এর। এই অবস্থার সঙ্গে একমাত্র তুলনীয় বিহার। আর প্রতি ১ হাজার রোগীতে দেশের নিরিখে হাসপাতালে বেডের বন্দোবস্ত রয়েছে ০.৭০ শতাংশের। দেশের অন্যান্য রাজ্যের তুলনায় গুজরাতের স্বাস্থ্য ক্ষেত্রের এই অবস্থা করোনা আক্রান্তের দুর্দশা আরও বাড়িয়েছে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞদের একাংশ।
অন্যদিকে কেরলে আক্রান্তের সংখ্যা তুলনামূলকভাবে বেশি হলেও সেখানে একদিনে ২৭ জন সুস্থ হওয়ার নজির রয়েছে। সেই সঙ্গে দ্রুত সংক্রমণ রোধেও কেরল সরকারের ভূমিকা উল্লেখযোগ্য, বলছেন বিশেষজ্ঞরা।
Comments are closed.