Corona: ১ এপ্রিল থেকে বাড়ি বাড়ি জনগণনা-এনপিআর হবে কী করে? পিছিয়ে যাবে কি গোটা প্রক্রিয়া? প্রশ্ন নানা মহলের
দেশে করোনাভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা ছাড়িয়েছে ২০০, মৃতের সংখ্যা চার। আগামী রবিবার দেশবাসীকে ১৪ ঘণ্টার জন্য জনতা কার্ফুতে সামিল হওয়ার আবেদন জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। এর মধ্যেই ১ এপ্রিল থেকে এনপিআর এবং জনগণনার কাজ শুরু হওয়ার কথা সারা দেশে। প্রশ্ন উঠেছে, যেখানে বিশেষজ্ঞরা মানুষকে দূরত্ব বজায় রাখার কথা বলছেন, সেখানে কী করে কর্মীরা বাড়ি বাড়ি গিয়ে জনগণনার কাজ করবেন?
বৃহস্পতিবার প্রধানমন্ত্রী তাঁর জাতির উদ্দেশে ভাষণে এই নিয়ে একটি কথাও উচ্চারণ করেননি। ফলে ১ এপ্রিল থেকে দেশে বাড়ি বাড়ি গিয়ে জনগণনার কাজ হবে নাকি তা স্থগিত থাকবে, তা নিয়ে নানা জল্পনা চলছে। নাগরিক অধিকার কর্মীরা বলছেন, প্রধানমন্ত্রী জনতা কার্ফুর কথা বলছেন। অথচ বিতর্কিত এনপিআর, জনগণনা প্রক্রিয়া স্থগিত রাখার কথা কেন বলছেন না?
দিন দুয়েক আগে রাজ্যসভায় কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী নিত্যানন্দ রাই এক লিখিত প্রশ্নের উত্তরে জানিয়েছেন, দেশজুড়ে এনআরসি নিয়ে কোনও পরিকল্পনা নেই। আগামী ১ এপ্রিল থেকে ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত যে তথ্য সংগ্রহ করা হবে তাতে নাগরিকের কোনও ডকুমেন্টের তথ্য নেওয়া হবে না। কিন্তু করোনা কামড়ে ক্রমশ যে আতঙ্কের মুখে পড়েছে দেশ, তখন বাড়ি বাড়ি ডেটা সংগ্রহের কাজ কীভাবে করা হবে এবং তা আদৌ উচিত কি না তা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। কেন্দ্ৰীয় সরকার থেকে শুরু করে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (হু) বলছে, করোনা সংক্রমণ এড়াতে যতটা সম্ভব ভিড় এড়াতে। কোনও জমায়েতে অংশ না নিতে। মানুষে মানুষে দূরত্ব বজায় রাখতে। বিভিন্ন রাজ্যে স্কুল কলেজ বন্ধ। সরকারি অফিসগুলো নির্দিষ্ট সময়ের আগে বন্ধ করা হচ্ছে। বিভিন্ন সংস্থা কর্মীদের বাড়ি থেকে কাজের পরামর্শ দিচ্ছে। দেশজুড়ে যখন এক অঘোষিত কার্ফু পরিস্থিতি শুরু হয়েছে তখন, এনপিআর ও জনগণনার কাজ কেমন করে হবে? প্রশ্ন উঠেছে। সরকার থেকে এ বিষয়ে এখনও কোনও সিদ্ধান্ত বা ঘোষণা পাওয়া যায়নি। তবে করোনাভাইরাসের কারণে যদি জনগণনা পিছিয়ে দেওয়া হয় তা হবে নজিরবিহীন।
এমনিতেই এনপিআর বা ন্যাশনাল পপুলেশন রেজিস্টারের তথ্য সংগ্রহকে সেন্সাসের সঙ্গে জুড়ে দেওয়া নিয়ে বিরোধী রাজনৈতিক দল থেকে সাধারণ মানুষের মধ্যে ব্যাপক ভয় ও বিভ্রান্তি তৈরি হয়েছে। পশ্চিমবঙ্গ সহ যে ১৩ টি রাজ্য এনপিআরের নয়া কলামের বিরোধিতা করেছে তার মধ্যে রয়েছে বিহারে বিজেপির জোট সঙ্গী নীতীশ কুমারের সরকারও। একদিকে এনপিআর প্রক্রিয়া চালু করা নিয়ে অবিজেপি শাসিত রাজ্যগুলির সঙ্গে সংঘাত অন্যদিকে, করোনাভাইরাসের জেরে আতঙ্ক। এই পরিস্থিতিতে আগামী এপ্রিল মাস থেকে এনপিআর ও জণগননার কাজ শুরু হবে কি না, তা নিয়ে জল্পনা তুঙ্গে।
এই মুহূর্তে দিল্লির শাহিন বাগ সহ দেশের অন্তত একশোটি জায়গায় এনআরসি, এনপিআর এবং সিএএ-র বিরুদ্ধে প্রতিবাদ, অবস্থান চলছে। আন্দোলনকারীরা করোনার কথা মাথায় রেখে অবস্থানস্থল জীবাণুমুক্ত করছেন নিয়মিত, বিক্ষোভকারীর সংখ্যা নিয়ন্ত্রণের মধ্যে রাখার চেষ্টা করছেন। সরকারের তরফ থেকে করোনার ভয় দেখিয়ে, মহামারি আইনের ভয় দেখিয়ে অবস্থান তোলার জন্য হুমকি দেওয়া হচ্ছে। আন্দোলনকারীরা তবু পিছু হটছেন না। এই অবস্থায় রাজনৈতিক বিশ্লেষক এবং সমাজতত্ত্ববিদরা বলছেন, করোনা এখন মোদী সরকারকে পিছু হটার সুযোগ করে দিয়েছে। করোনার দোহাই দিয়ে সরকার আপাতত সিএএ, এনপিআর, এনআরসি স্থগিত রাখতে পারে। তাঁরা এই প্রসঙ্গে ফ্রান্সের দৃষ্টান্ত তুলে ধরছেন। গত মঙ্গলবার ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল মাঁকড় বলেছেন, আমরা এখন একটা যুদ্ধের মুখোমুখি দাঁড়িয়ে। সরকার এবং বিভিন্ন সংসদীয় পক্ষ একসঙ্গে সেই যুদ্ধের মোকাবিলা করছি। আমরা পেনশন প্রকল্প সংস্কারের পথ থেকে এখন সরে আসছি। প্রসঙ্গত, ফ্রান্স সরকারের এই সংস্কারের প্রতিবাদে গোটা দেশে আন্দোলন চলছিল। এখন করোনার ধাক্কায় তা স্তিমিত। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, ফ্রান্সে মাঁকড় যদি সংস্কার পিছিয়ে দিতে পারেন, তা হলে মোদী কেন এক কদম পিছিয়ে আসতে পারবেন না?
Comments are closed.