দল বিরোধী কাজ এবং শৃঙ্খলাভঙ্গের অভিযোগে সুশান্ত ঘোষকে শো-কজ করল সিপিএম, কিন্তু বড় শাস্তি দিতে দ্বিধাগ্রস্ত দল

সুশান্ত ঘোষকে শো-কজ করল সিপিএম। আলিমুদ্দিন স্ট্রিটের নির্দেশে রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রী সুশান্ত ঘোষকে শেষ পর্যন্ত শো-কজ করল পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা সিপিএম। thebengalstory.com এ ধারাবাহিকভাবে ডায়েরি লেখার জন্য শো-কজ করা হল সিপিএমের জনপ্রিয় এই নেতাকে। ডায়েরিতে তিনি একাধিক সিপিএম নেতার (বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য, সূর্যকান্ত মিশ্র, মহম্মদ সেলিম) সম্পর্কে লেখেন। যার অনেক কিছুই প্রকাশ্যে লেখা ঠিক হয়নি বলেই মনে করে আলিমুদ্দিন স্ট্রিট। গত জুলাই মাসে সিপিএমের রাজ্য কমিটির মিটিংয়ে সুশান্ত ঘোষের এই ডায়েরি লেখার প্রসঙ্গ ওঠে। যার পরিপ্রেক্ষিতে সিপিএম রাজ্য সম্পাদক সূর্যকান্ত মিশ্র জানিয়েছিলেন, ‘সুশান্ত ঘোষ যা লিখেছেন তা বহিষ্কার যোগ্য অপরাধ’। এরপরই সুশান্ত ঘোষকে শো-কজ করার জন্য পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা পার্টিকে নির্দেশ দেন তিনি।
সূত্রের খবর, রাজ্য সম্পাদকের এই নির্দেশের পরই দলীয় শৃঙ্খলাভঙ্গের অভিযোগে সুশান্ত ঘোষকে শো-কজ করেছে পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা সিপিএম। পার্টিতে থাকা সত্ত্বেও কেন তিনি ধারাবাহিকভাবে দল বিরোধী লেখা লিখেছেন তা সুশান্ত ঘোষের কাছে জানতে চেয়েছে দল। পার্টিতে থাকা সত্ত্বেও ধারাবাহিকভাবে দল বিরোধী বিভিন্ন বিষয় লেখার জন্য তাঁর জবাবদিহি চাওয়া হয়েছে। এখন দলের প্রাক্তন বিধায়ক এবং মন্ত্রী সুশান্ত ঘোষ কী জবাব দেন সেদিকেই তাকিয়ে পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা সিপিএম। যদিও সূত্রের খবর, দলের নিচুতলার কর্মীদের মধ্যে সুশান্ত ঘোষের প্রবল জনপ্রিয়তার কথা মাথায় রেখে বিষয়টি নিজেদের হাতে রাখতে চাইছে না জেলা পার্টি। এ ব্যাপারে যা সিদ্ধান্ত নেওয়ার তা আলিমুদ্দিন স্ট্রিটই নেবে।
গত বছর জুন মাস থেকে thebengalstory.com এ ধারাবাহিকভাবে ডায়েরি লিখতে শুরু করেন সুশান্ত ঘোষ। তাঁর লেখা প্রবল বিতর্কের সৃষ্টি করে পার্টির অন্দরে। দলের পক্ষ থেকে তাঁকে বার্তাও দেওয়া হয়। এরই মধ্যে লোকসভা ভোটের সময় সুশান্ত ঘোষকে জনসভায় আমন্ত্রণ জানানো হয় কিছু জেলা কমিটির পক্ষ থেকে। তা নিয়েও দলের মধ্যে প্রশ্ন তোলেন নেতৃত্বের একাংশ। তাঁদের অভিযোগ ছিল, একজন নেতা বারবার দল বিরোধী কাজ করা সত্ত্বেও কেন তাঁকে জনসভায় আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। এই প্রসঙ্গে সূর্যকান্ত মিশ্র রাজ্য কমিটির মিটিংয়ে জানিয়েছিলেন, ‘সুশান্ত ঘোষকে জনসভায় আমন্ত্রণ জানানোর জন্য কোনও জেলা কমিটিকে আলিমুদ্দিন স্ট্রিট অনুমতি দেয়নি’।
তবে সুশান্ত ঘোষকে শো-কজ করা হলেও, তিনি যদি ডায়েরি লেখার জন্য ক্ষমা না চান বা ভুল স্বীকার না করেন, তবেও কি আলিমুদ্দিনের পক্ষে তাঁকে কঠিন শাস্তি দেওয়া সম্ভব হবে, তা নিয়েও দ্বিধাবিভক্ত সিপিএম নেতৃত্ব। তার প্রধান কারণ, সুশান্ত ঘোষের জনপ্রিয়তা এবং দলের নিচুতলার কর্মীদের মধ্যে তাঁর প্রভাব। এর আগে আলিমুদ্দিন স্ট্রিট রেজ্জাক মোল্লা কিংবা লক্ষ্মণ শেঠের মতো রাজ্য স্তরের নেতাকে বহিষ্কার করেছে, কিন্তু তাঁদের কারও সঙ্গেই যে সুশান্ত ঘোষের কোনও তুলনা চলে না, তা আলিমুদ্দিন স্ট্রিট ভালোভাবেই জানে। তাই সুশান্ত ঘোষের ক্ষেত্রে বুঝেশুনে পা ফেলতে চাইছে আলিমুদ্দিন স্ট্রিট।

Comments are closed.