দুই সাংবাদিকের চোখে অপরাধ ও তার তদন্ত নিয়ে আড়ালে আততায়ী যেন জানা ঘটনার অজানা কাহিনী

একজন পুলিশ কর্তার সঙ্গে ক্রাইম রিপোর্টারদের লেখার বর্ণনা-ব্যাখ্যা কখনও এক হওয়ার কথা নয়, আড়ালে আততায়ীর ক্ষেত্রেও তা হয়নি। এখানে প্রতিটি ঘটনার বিশ্লেষণে অনেক গভীরে যাওয়ার একটা চেষ্টা হয়েছে। কলকাতার দুই ক্রাইম রিপোর্টার চিত্রদীপ চক্রবর্তী এবং হিমাদ্রি সরকার আড়াইশো পাতার বই আড়ালে আততায়ীতে তুলে ধরেছেন জানা-অজানা ১২ টি খুনের ঘটনা, যা পাঠকদের পড়তে বেশ ভালো লাগবে। কারণ, সাংবাদিকদ্বয় তদন্তের ইতিবাচক এবং নেতিবাচক দুটি দিকই তুলে ধরেছেন বিস্তারিতভাবে। বলা যেতে পারে, একটা নিরপেক্ষতা বজায় রাখার চেষ্টা করেছেন তাঁরা।

বইয়ের ভূমিকা লিখেছেন কলকাতার প্রাক্তন বিতর্কিত পুলিশ কমিশনার প্রসূন মুখোপাধ্যায়। আগে তাঁকে কোথাও লিখতে দেখা যায়নি। তবে যা লিখেছেন তাতে প্রায় প্রতিটি ছত্রে উঠে এসেছে পুলিশ কর্মীদের প্রতি তাঁর ভরসা এবং বিশ্বাসের প্রসঙ্গ।
রাজ্য এবং কলকাতা শহরে ঘটে যাওয়া অপরাধগুলি মূলত জায়গা পেয়েছে আড়ালে আততায়ী বইয়ে। আর অপরাধ নিয়ে লেখা পাঠকদের টানে বেশি। বইয়ের প্রথম ঘটনাটাই রাজ্যের প্রথম পার্সেল বোমা বিস্ফোরণের মামলা। তদন্তের একেবারে খুঁটিনাটি দিকগুলো উঠে এসেছে বইয়ের পাতায়। প্রেম-ছলনা কোথায় গিয়ে শেষ হতে পারে তার জ্বলজ্যান্ত উদাহরণ এই ঘটনা। এটা দিয়ে শুরু। তারপর গব্বর-গুঞ্জনের ইতিবৃত্ত তুলে ধরা হয়েছে সুন্দরভাবে। এটা পড়ে বোঝা যায় পুলিশকে ঠিক কতটা বুদ্ধি খাটিয়ে ধুরন্ধর অপরাধীদের মোকাবিলা করতে হয় প্রায় প্রতিটি তদন্তের ক্ষেত্রে। ১২ টির মধ্যে মাত্র একটি গল্পের ক্ষেত্রে পুলিশ শেষ পর্যন্ত ব্যর্থ হয়েছে। সেটা উপেন্দ্র নাথ রাজখোয়ার ঘটনায়। যেটা ভারতবর্ষের একমাত্র বিচারকের ফাঁসির মামলা। এটা ছাড়াও বেশ কিছু খুনের ঘটনার বিস্তারিত বর্ণনা রয়েছে, যা নিয়ে পাঠকদের আগ্রহ রয়েছে। ভাষা সাবলীল। সাধারণ মানুষের বুঝতে কোনও অসুবিধা হওয়ার কথা নয়। কিছু ক্ষেত্রে একেবারে ক্রিমিনালদের মুখের ভাষাও তুলে আনা হয়েছে লেখায়।
লেখার কিছু লাইন এখানে উল্লেখ করা না হলে বিষয়গুলি ঠিক বোঝানো যাবে না পুরোপুরি। যেমন, ‘দুনিয়ার সবচেয়ে পাকা মাথার অপরাধীরাও তো ফেলে যায় মূল্যবান সূত্র। কখনও অতিচালাকি, কখনও লোভ, কখনও বুদ্ধিভ্রংশ কাল হয়ে দাঁড়ায় ধূর্ত অপরাধীর। অতি লোভ তাঁত আর তাঁতি-দু’টিকেই যে পথে বসায়।’

আরও একটি, ‘সেটাই যেন ধ্রুব সত্য, সব খুন হয় কোনও না কোনও কারণে। খোদ অপরাধী মনে করে, খুন করাটাই তাঁর বৈধ অধিকার।’ বইয়ের একটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল ছবির ব্যবহার। প্রতিটি লেখার সঙ্গে সাপোর্টিং হিসেবে সেগুলি থাকাই শুধু নয়, বিষয়গুলিকে অনেকটা চোখের সামনে এনে দিয়েছে। দুটি লেখায় অলংকরণ করেছেন অভি। তাঁর আঁকাগুলি মন ভরায়। প্রচ্ছদ উদয় দেবের। অনবদ্য হাত তাঁর। বইটি দূরে থাকলেও সহজেই চোখ টেনে নেবে।
বইয়ের শেষে মোট চারটি লেখা রয়েছে কলকাতার চারজন ক্রাইম রিপোর্টারের। এই ধরনের রিপোর্টিং করতে গেলে অভিজ্ঞতা কীভাবে কাজে লাগাতে হয় তা এসব লেখা থেকে শেখা যায়। বইটি প্যাকেজ হিসেবে চমৎকার। তবে সামান্য ত্রুটির কথাও বলা প্রয়োজন। সামান্য দু’একটি বানান ভুল রয়েছে। ছবিগুলো আর একটু বড় করলে ক্ষতি হত না। মোদ্দা কথা, এই বই ট্রু-ক্রাইম স্টোরির বিষয়ে সবার আগ্রহ বাড়াবে।

 

আড়ালে আততায়ী
প্রকাশক: বুকফার্ম
মূল্য: ২৫০

 

Comments are closed.