দেশপ্রিয় পার্কে সাবেকিয়ানা, বোসপুকুর শীতলা মন্দিরে ভার্চুয়াল অঞ্জলি, নাকতলা উদয়ন সঙ্ঘে তরঙ্গ, প্রস্তুতি শুরু শহরের পুজোর
মারণ ভাইরাসের প্রকোপে গত মার্চ মাস থেকে দেশবাসী বিপর্যস্ত, নাগরিক জীবন বিধ্বস্ত। কিন্তু সভ্যতার ধ্বংসাবশেষের মধ্যে থেকেও মানুষ আবার নতুনভাবে বেঁচে উঠছে, বাড়ি থেকে বেরোচ্ছে-অফিস যাচ্ছে। মৃত্যুপুরীতে দাঁড়িয়েও শরতের আকাশ জানান দিচ্ছে আগমনীর গান। আর তারই বহিঃপ্রকাশ ফুটে উঠছে তিলোত্তমার পুজো কমিটিগুলোর মধ্যে।
দক্ষিণ কলকাতার অন্যতম আকর্ষণীয় পুজো দেশপ্রিয় পার্কও তাদের প্রস্তুতি শুরু করে দিয়েছে। বিগত বছরের থেকে এবছরের পুজো অনেকটাই অন্যরকম। পরিস্থিতি অনুযায়ী অনেক কিছুই পরিবর্তন করতে হচ্ছে বলে জানাচ্ছেন দেশপ্রিয় পার্ক পুজো কমিটির সম্পাদক সুদীপ্ত কুমার। তাঁর মতে, এবারের পুজো মানুষের মানবিক গুণপ্রকাশের সময়। প্রতি বছর দেশপ্রিয় পার্ককে যে বিরাট আড়ম্বরের মধ্যে দেখা যায় এবারে তার ব্যতিক্রম ঘটছে। দেশপ্রিয় পার্ক থিম ছেড়ে এবারে সেজে উঠছে সাবেকিয়ানায়। স্যানিটাইজার, মাস্ক, সামাজিক দূরত্ব-এই তিনটি বিষয়ের ওপরই সবচেয়ে বেশি নজর দিচ্ছেন বলে জানাচ্ছেন পুজো কমিটির অন্যতম সদস্য তপন চৌধুরী। তপনবাবুর মতে, অষ্টমীর অঞ্জলী বা দশমীর বিসর্জন সবই হবে, কিন্তু আড়ম্বরহীনভাবে, সুরক্ষা অনুযায়ী।
দক্ষিণ কলকাতার অন্যতম সেরা পুজোর মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ হল বোসপুকুর শীতলা মন্দির। মহামারীর প্রভাব সব কিছুর মত এখানেও পড়েছে প্রবলভাবে। বিগত বছরের থেকে এবছর পুজোর বাজেটের পরিমাণ অনেকটাই কমেছে বলে জানাচ্ছেন পুজো কমিটির সম্পাদক কাজল সরকার। এবারে স্পনসরশিপের দেখা পাওয়া যাচ্ছে না। তাই এবারের পুজো অনেক বেশি কঠিন হয়ে উঠছে পুজো কমিটিগুলোর কাছে। তবে বোসপুকুর শীতলা মন্দির গণজমায়েত এড়ানোর জন্য ভার্চুয়াল অঞ্জলির দিকে হাঁটছে বলে জানাচ্ছেন তাদের অন্যতম সদস্য সঞ্জয় ঘোষ।
বিগত বছরের মত এবছরও থিমের দিকে পা বাড়িয়েছে নাকতলা উদয়ন সঙ্ঘ। এবারে তাদের বিষয় ‘তরঙ্গ’। শিল্পী ভবতোষ সুতারের হাতের স্পর্শে বাঁশ, বাকারি দিয়ে সেজে উঠছে নাকতলা উদয়ন সঙ্ঘ পুজোর মণ্ডপ। তবে সুরক্ষার প্রয়োজনে সর্বসাধারণের জন্য অষ্টমীর যে ভোগের আয়োজন থাকে তা এবারে বন্ধ রাখা হচ্ছে বলে জানাচ্ছেন পুজো কমিটির সহ সম্পাদক সন্দীপ দাশগুপ্ত। তবে প্রতিটি পুজো কমিটির উদ্যোক্তাই মৃৎশিল্পী, মণ্ডপ শিল্পী, ঢাকি, এদের জন্য আর্থিক এবং শারীরিক সুরক্ষার যথেষ্ট ব্যবস্থা করছেন। বোসপুকুর শীতলা মন্দির পুজোর সাথে জড়িত ব্যক্তিদের (মৃৎশিল্পী, মণ্ডপ শিল্পী, ঢাকি প্রমুখ) জন্য এক লক্ষ টাকা করে insurance বা বিমার ব্যবস্থা করছেন পুজো কর্তৃপক্ষ।
পুজো কমিটিগুলো সরকারি নির্দেশিকা অনুযায়ী মণ্ডপের প্রবেশপথ এবং বাহিরপথের দিকে বিশেষভাবে গুরুত্ব দিচ্ছেন। এবং তার সাথে মণ্ডপে পর্যাপ্ত পরিমাণ স্যানিটাইজারের ব্যবস্থা সবসময় থাকবে বলে জানাচ্ছেন। নাকতলা উদয়ন সংঘর মণ্ডপে ঢোকার জন্য কোনও প্রবেশ বা বাহির পথ থাকছে না।
রাস্তা থেকেই দর্শনার্থীদের মণ্ডপ দেখতে হবে বলে জানাচ্ছেন সন্দীপ বাবু। তবে কোনও পুজোতেই প্রতিবারের মত এবারে স্পন্সরের বাড়বাড়ন্ত দেখা যাবে না। তবুও যেতে পারে বন্ধ্যার দিনেও নতুন করে আশায় বুক বাঁধছে কলকাতার পুজো কমিটিগুলো।
Comments are closed.