রাজ্যপাল জগদীপ ধনকড়ের ট্যুইটে বাংলা নিয়ে ‘অসংবেদনশীল’ মন্তব্যের অভিযোগে তোলপাড় সোশ্যাল মিডিয়া।
রাজ্যবাসীকে নতুন বছরের শুভেচ্ছা জানাতে মঙ্গলবার একটি লিখিত বার্তা তৈরি করছিলেন রাজ্যপাল জগদীপ ধনকড়। রাজভবনের লাইব্রেরিতে বসে সেই ছবি নিজেই মাইক্রো ব্লগিং সাইটে পোস্ট করে তিনি লেখেন, এই সেই লাইব্রেরির ‘আইকনিক টেবিল’, যেখান থেকে ১৯০৫ সালে লর্ড কার্জন প্রথম বঙ্গভঙ্গ চুক্তিতে সই করেন।
ধনকড়ের এই ট্যুইটে তীব্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে বাংলার বিভিন্ন মহলে। ১৯০৫ সালের ১৬ অক্টোবর ভারতের ভাইসরয় লর্ড কার্জন বঙ্গভঙ্গ চুক্তি করেন। তা নিয়ে প্রচণ্ড গণআন্দোলন শুরু হয়। যে ঘটনা হিন্দু ও মুসলিম সম্প্রদায়ের মধ্যে তীব্র আলোড়ন সৃষ্টি করে, তা বাংলার ইতিহাসে কোনও গৌরবময় অধ্যায় নয়। এই বঙ্গভঙ্গ রদের জন্য ১৯০৫ সালে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ‘আমার সোনার বাংলা’ গান রচনা করেন। যা এখন বাংলাদেশের জাতীয় সঙ্গীত। তিনি লেখেন, বাংলার মাটি, বাংলার জল, বাংলার বায়ু, বাংলার ফল, এক হউক। বঙ্গভঙ্গের প্রতিবাদে রবীন্দ্রনাথ পথে নেমে রাখী বন্ধন উৎসবেরও সূচনা করেন। ১৯১১ সালে গণআন্দোলনের কাছে নতিস্বীকার করে বঙ্গভঙ্গ রদ হলেও দ্বিতীয়বার ১৯৪৭ বঙ্গভঙ্গ হয়। তাতে পূর্ববঙ্গ পাকিস্তানে এবং পশ্চিমবঙ্গ ভারতে যুক্ত হয়।
কিন্তু রাজ্যপাল ধনকড় প্রশাসনিক আসনে বসে ভাইসরয় লর্ড কার্জনের বঙ্গভঙ্গ সিদ্ধান্তেরই যেন প্রশস্তি করে ট্যুইটবার্তা দিলেন। এমনই অভিযোগে সরব হয়েছেন নেটিজেনরা। রাজ্যের মন্ত্রী মহম্মদ গোলাম রব্বানি রাজ্যপালের এই ট্যুইটের প্রেক্ষিতে লেখেন, স্বাগত ২০২০, বাংলার নতুন ভাইসরয়। প্রত্যেকেরই প্রায় একই প্রশ্ন, যে বঙ্গভঙ্গের ক্ষত আজও বাংলার বহু মানুষ বয়ে বেড়ান, তা নিয়ে কী করে এমন অসংবেদনশীল মন্তব্য করেন রাজ্যপাল! কেউ লেখেন, এমন রাজ্যপাল আমরা চাই না। আবার কেউ লিখেছেন, রাজ্যপাল বাংলার মানুষকে কী মনে করাতে চান।
এই ট্যুইট নিয়ে নেটিজেনদের তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখে ফের একটি ট্যুইট করেন রাজ্যপাল। তিনি সেখানে লেখেন, এই টেবিলে কাজ করা মানুষটি সংবিধান রক্ষা এবং বাংলার মানুষের সেবায় ব্রতী। তাতেও চিঁড়ে ভেজেনি। নেটিজেনদের বক্তব্য, ইচ্ছাকৃত বা অনিচ্ছাকৃভাবে বাংলার মানুষের ভাবাবেগে আঘাত করেছেন ধনকড়।
রাজ্যের শাসক দলের সঙ্গে বারবার সংঘাতে জড়িয়েছেন রাজ্যপাল। প্রকাশ্যে মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি তাঁকে বিজেপির এজেন্ট বলে কটাক্ষ করেছেন। মুখ্যমন্ত্রী বরাবর বলে আসছেন, বিজেপি বিভাজনের রাজনীতি করছে। এনআরসি এবং নয়া নাগরিকত্ব আইনের মাধ্যমে বাংলাকেও ভাগ করতে চায় তারা। হিন্দু-মুসলিম আলাদা করতে চায়। কেন্দ্রের সংশোধিত নাগরিকত্ব আইনের বিরোধিতা করায় মুখ্যমন্ত্রীর প্রকাশ্যে সমালোচনাও করেছেন জগদীপ ধনকড়। এই আবহে বিতর্কিত ট্যুইট করে রাজ্যপাল নিজেকেই ফের কাঠগড়ায় দাঁড় করালেন।
Comments are closed.