বিশ্বের বৃহত্তম গণতন্ত্র, ভারতে তীব্র আকার ধারণ করেছে পানীয় জলের আকাল। উত্তর থেকে দক্ষিণ, পূর্ব থেকে পশ্চিম, বিশাল দেশ ভারতে পরিস্থিতি ক্রমেই খারাপ থেকে খারাপতর হচ্ছে। খরা কবলিত এলাকার সংখ্যা প্রতিদিন বাড়ছে। পাল্লা দিয়ে বাড়ছে সাধারণ মানুষ, বিশেষ করে কৃষকদের দুর্দশা। ২০১৫ সাল থেকে প্রতি বছরই নিয়ম করে খরার কবলে পড়েছে দেশের বিশাল এলাকা। এই বিপদ থেকে আশু মুক্তির কোনও সম্ভাবনা দেখছেন না পরিবেশবিদরা। ভারতে সাধারণত প্রতি ৮ থেকে ৯ বছর পর পর ভয়ঙ্কর খরা পরিস্থিতি তৈরি হয়। বিশেষজ্ঞদের একাংশের বক্তব্য, ২০১৫ সাল থেকে সেই নিয়মে বড়সড় বদল লক্ষ্য করা যাচ্ছে। ইদানিং প্রায় প্রতি বছরই দেশে ভয়াবহ খরার কথা শোনা যাচ্ছে।
ড্রট আর্লি ওয়ার্নিং সিস্টেম বা ডিইডব্লুএসের তথ্য অনুযায়ী, এ বছর ৩০ শে মে পর্যন্ত, দেশের ৪৩.৪ শতাংশ এলাকাই খরা কবলিত হয়ে পড়েছে। যত সময় এগোচ্ছে, ততই বাড়ছে তার পরিধি। মূলত বৃষ্টির অভাবকেই খরার রমরমা হিসেবে ধরা হয়। তথ্য অনুযায়ী, ২০১৫ সাল থেকে প্রতি বছর খরা হয়েছে দেশে, একমাত্র ব্যতিক্রম ২০১৭ সাল। আবহাওয়া দফতরের তথ্য অনুযায়ী, গত ৬৫ বছরে এবার সবচেয়ে কম হয়েছে প্রাক বর্ষার বৃষ্টি। যার সরাসরি প্রভাব এসে পড়েছে দেশের কৃষি-অর্থনীতিতে। পাশাপাশি হু হু করে কমছে ভূগর্ভস্থ জলের সঞ্চয়ও।
কর্ণাটকের ৮০ শতাংশ এবং মহারাষ্ট্রের ৭২ শতাংশ জেলাই খরা কবলিত। প্রায় প্রতিদিনই নিয়ম করে বাড়ছে খরা কবলিত এলাকার সংখ্যা। এর ফলে ইতিমধ্যেই এই দুই রাজ্যের ৮২ লক্ষ কৃষক খরা পরিস্থিতির মধ্যে পড়েছেন। সেই সঙ্গে মহারাষ্ট্রে লাগাম ছাড়া পর্যায়ে পৌঁছেছে পানীয় জলের সঙ্কট। পরিস্থিতি সামলাতে প্রতিদিন ৬ হাজার জলের ট্যাঙ্কার পাঠানো হচ্ছে খরা কবলিত ৪৯২০ টি গ্রাম এবং ১০ হাজার ৫০৬ টি জনবসতি পূর্ণ এলাকায়।
তবে পানীয় জলের সঙ্কট কার্যত হাহাকার ফেলেছে দক্ষিণতম রাজ্য তামিলনাড়ুতে। রাজধানী চেন্নাইয়ে জল কষ্ট নতুন কিছু না। কিন্তু এবার তা ভয়ঙ্কর আকার নিয়েছে। চেন্নাই শহরের জন্য প্রতিদিন প্রয়োজন ৮০০ মিলিয়ন লিটার পানীয় জলের। কিন্তু জল সঙ্কটের জের এসে পড়েছে সেই সরবরাহেও। বর্তমানে মাত্র ৫৫০ মিলিয়ন লিটারেই কাজ চালাতে হচ্ছে চেন্নাইকে। সেই জলও পানের অযোগ্য বলে অভিযোগ চেন্নাইবাসীদের একাংশের। পরিস্থিতি মোকাবিলায় অতিরিক্ত ২৩৩ কোটি টাকা বরাদ্দ করেছে তামিলনাড়ু সরকার। জলের সঙ্কটে ভুগছে উত্তর ভারতের বিস্তীর্ণ অংশ। রাজস্থানে জলের সঙ্কট চরম আকার ধারণ করেছে। সেই সঙ্গে যোগ হয়েছে তীব্র তাপদাহ। রাজস্থানের চুরুতে তাপমাত্রা ইতিমধ্যেই পৌঁছেছে ৫০ ডিগ্রি সেলসিয়াসে।
ভয়াবহ খরার কবলে অন্ধ্র প্রদেশ এবং তেলেঙ্গানাও। ২০১৮ সালে গত দুই দশকের মধ্যে সবচেয়ে ভয়াবহ খরা পরিস্থিতির মুখে পড়েছেন এই দুই রাজ্যের লাখো কৃষক। ২০১৮-এর জুন থেকে ২০১৯-এর এপ্রিল মাস পর্যন্ত অন্ধ্রে বৃষ্টিপাতের ঘাটতির পরিমাণ ৩২ শতাংশ। অন্ধ্রের ১৩ জেলার মধ্যে ৯ জেলায় খরা পরিস্থিতি। ৩৪৭ টি ব্লকে ইতিমধ্যেই খরা ঘোষণা করেছে রাজ্য সরকার। এর সরাসরি প্রভাব পড়েছে খারিফ এবং রবি শস্য চাষে।
কিন্তু পানীয় জলের সঙ্কটের কারণ কী? বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন, বৃষ্টিপাতের তারতম্যের কারণে জল সঙ্কট তৈরি হতে পারে। কিন্তু দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা করে জলের সঙ্কট দূর করারও কোনও প্রচেষ্টাও সরকারি তরফে চোখে পড়েনি। পাশাপাশি দেশের বিভিন্ন জায়গায় অনিয়ন্ত্রিত জল উত্তোলনের ফলে বিপজ্জনক হারে কমছে ভূগর্ভস্থ জলের সঞ্চয়। বৃষ্টিপাত হ্রাস পেলে সেই জলের স্তর আরও নীচে নামবে বলে আশঙ্কা।
Comments are closed.