বৃহস্পতিবার ভোরে মহালয়া। ভোর বেলা আধো ঘুমের মধ্যে বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্রের উদাত্ত কণ্ঠে ‘আশ্বিনের শারদপ্রাতে বেজে উঠেছে আলোক মঞ্জীর; ধরণীর বহিরাকাশে অন্তরিত মেঘমালা…’ দিয়ে বাঙালির শ্রেষ্ঠ উৎসব দুর্গাপুজোর আগমনি বার্তা ধ্বনিত হবে। কিন্তু এবার আর ৬ দিন নয়, দুর্গাপুজোর জন্য অপেক্ষা করতে হবে প্রায় একমাস! কেন এই দেরি?
সাধারণত মহালয়ার ছ’দিন পরই হয় দেবীর বোধন৷ সেইভাবেই বাঙালি পুজোর প্রস্তুতি নেয়৷ গত বছর মহালয়া থেকেই কলকাতার বারোয়ারি পুজো প্যান্ডেলগুলির উদ্বোধন হয়ে গেছিল। কিন্তু এবার একদিকে মহালয়া থেকে একমাস দূরত্বে থাকা দুর্গাপুজোর নির্ঘণ্ট আর অন্যদিকে করোনা, দুইয়ে মিলে পুজো প্রস্তুতির গতি কিছুটা রুখে দিয়েছে।
এ বছর মহালয়া ১৭ সেপ্টেম্বর৷ তার ৩৫ দিন পর মহাষষ্ঠী। অর্থাৎ, দেবীর বোধন আগামী ২২ অক্টোবর৷
পঞ্জিকা বলছে, মহালয়ার এক মাস বাদে দুর্গাপুজোর কারণ হল দুটি অমাবস্যাই একইমাসে পড়েছে। আর তার জন্যই এবার পুজো একমাস পিছিয়ে আশ্বিনের জায়গায় কার্তিকে হবে। শাস্ত্রমতে একই মাসে দু’টো অমাবস্যা থাকলে তাকে মল মাস বলে। মল মাসে কোনও পুজো হয় না। শুধু পুজোই নয় কোনও শুভ অনুষ্ঠানও মল মাসে করা যায় না। পিতৃপক্ষ শেষ হওয়ার পরই দুর্গাপুজো শুরু হত, কিন্তু এ বছর তা হচ্ছে না কারণ পিতৃপক্ষ শেষ হওয়ার পরই আশ্বিন মাসের অধিকমাস বা মলমাস শুরু হচ্ছে।
তাই এ বছর মা দুর্গা আসছেন কার্তিক মাসে। পুরোহিতরা বলছেন, দু’টি অমাবস্যা থাকায় ১৪২৭ বঙ্গাব্দের আশ্বিন মাস মল মাস৷ তাই পুজো এবার শরতে নয়, হেমন্তে৷ ‘শারদীয়া’ উৎসব হলেও তা হবে ‘হৈমন্তিক’৷
তবে এই প্রথম নয়, এর আগে ১৯৮২ ও ২০০১ সালে একই কারণে মহালয়া ও দুর্গাপুজো শুরুর ব্যবধান প্রায় একমাস হয়েছিল।
কেন আসে মলমাস? কেনই বা এই মাসে পুজো ও অন্যান্য শুভ কাজ অনুষ্ঠিত হয় না?
প্রতি তিন বছর অন্তর একটি অধিকমাস আসে। সূর্য ও চন্দ্র মাসের গণনার ওপর ভিত্তি করে হিন্দু ক্যালেন্ডার চলে। হিন্দু ক্যালেন্ডার অনুযায়ী একটি সূর্যবর্ষ ৩৬৫ দিন ও প্রায় ৬ ঘণ্টার হয়ে থাকে। আবার চন্দ্রবর্ষ ৩৫৪ দিনের হয়। এই দুইয়ের মধ্যে ১১ দিনের পার্থক্য। টানা তিন বছরে এটি এক মাসের সমান হয়ে যায়। এই অতিরিক্ত মাসের পার্থক্য দূর করার জন্যই প্রতি তিন বছরে একবার অতিরিক্ত মাস আসে। একেই অধিকমাস বলা হয়। এ বছর আশ্বিন মাসই সেই অধিকমাস।
অধিকমাসকে মলমাস বলা হয় কারণ গোটা মাসে কোনও সূর্য সংক্রান্তি থাকে না। আবার প্রচলিত ধারণা অনুযায়ী, একই মাসে দুটি অমাবস্যাকেও মলমাসের অন্যতম কারণ মনে করা হয়। তাই মহালয়ার দিন নিয়ম মেনেই পিতৃতর্পণ হবে৷ শুধু রেডিওতে বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্রের উদাত্তকণ্ঠে চণ্ডীপাঠের ৩৫ দিন পার করে হবে অকালবোধন৷ এরপর আবার ২০৩৯ সালে এরকম পরিস্থিতি তৈরি হবে৷
Comments are closed.