অঞ্জলির ফুল-বেলপাতা আনতে হবে বাড়ি থেকে, এবার পুজোর জন্য ১১ দফা নির্দেশিকা জারি করল নবান্ন, দেখে নিন কীভাবে হবে দুর্গা পুজো
করোনা অতিমারির মধ্যেই এবার অনুষ্ঠিত হবে দুর্গা পুজো। রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী ছোঁয়াচ এড়াতে বিশেষভাবে সতর্কতার কথা বলেছেন। রাজ্য সরকার এই বিষয়ে বিশদ বিবরণ দিয়ে ১১ দফার নির্দেশিকা প্রকাশ করেছে সোমবার। পুলিশের তরফে সমস্ত পুজো কমিটিকে সেই নির্দেশিকা অক্ষরে অক্ষরে পালন করার আবেদন জানানো হয়েছে। আসুন দেখে নেওয়া যাক কেমন হতে চলেছে এবারের পুজো।
পুরো প্রক্রিয়াই অনলাইন: গান্ধীজির জন্মদিন ২ অক্টোবর, শুক্রবার সরকার চালু করছে সিঙ্গল উইনডো পোর্টাল আসান। এই সিঙ্গল উইনডো পোর্টালে অনুমতির জন্য আবেদন জানাবে পুজো কমিটি। একই সঙ্গে কলকাতা পুলিশ, সিইএসসি, কেএমসি ও দমকলের অনুমতি পাওয়া যাবে।
খোলামেলা পরিসরে মণ্ডপ: রাজ্য সরকারের তরফে সমস্ত পুজো কমিটিকে জানানো হয়েছে, প্যান্ডেল করতে হবে খোলামেলা। দর্শনার্থীদের মণ্ডপে ঢোকা ও বেরনোর জন্য আলাদা গেট করতে হবে। দেখতে হবে যাতে পর্যাপ্ত হাওয়া চলাচলের পথ খোলা থাকে।
মাস্ক ও স্যানিটাইজার: পুজোর উদ্যোক্তাদের নিশ্চিত করতে হবে দর্শনার্থীরা যেন মাস্ক পরে থাকেন। মণ্ডপে ঢোকার মুখে বাধ্যতামূলকভাবে স্যানিটাইজার দিতে হবে। পুজো এলাকায় প্রবেশের সময়ও হাতে স্যানিটাইজার দিতে হবে উদ্যোক্তাদের। তাঁরা চাইলে দর্শনার্থীদের মধ্যে মাস্ক বিলি করতে পারেন। মাস্ক মজুত থাকতে নিকটবর্তী পুলিশ সহায়তা কেন্দ্রেও।
মণ্ডপে ভিড় নয়: কোনও পরিস্থিতিতেই মণ্ডপে ভিড় করা যাবে না। ফিজিক্যাল ডিসট্যান্সিংয়ের সমস্ত নিয়ম মানা বাধ্যতামূলক। এই কারণে পুজোর বিভিন্ন উপাচার পালনের ক্ষেত্রে সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে। অঞ্জলি দেওয়ার সময় ফুল-বেলপাতা সঙ্গে করে আনতে হবে। কমিটি থেকে সরবরাহ করা হবে না। পুরোহিত মশাইয়ের সামনে রাখতে হবে মাইক্রোফোন। একই সময় অনেকে মিলে একসাথে অঞ্জলি দেওয়া বা সিঁদুর খেলা যাবে না। ছোট ছোট উপদলে ভেঙে নিতে হবে।
জলসাহীন পুজো: এবার পুজোয় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আসর বসছে না। মঞ্চ বেঁধে অনুষ্ঠান করলে তাতে ভিড় সামাল দেওয়া সমস্যার। তাই পুজো মণ্ডপ এলাকায় কোনও রকম সাংস্কৃতিক বা অন্য কোনও অনুষ্ঠান করা যাবে না।
হচ্ছে না পুজো কার্নিভাল: করোনা কালে হচ্ছে না রেড রোডের পুজো কার্নিভাল। একইসঙ্গে পুজো উপলক্ষ্যে আয়োজন করা যাবে না কোনও মেলা। ভিড় হতে পারে এমন সমস্ত কাজ বন্ধ রাখতে হবে।
পুজো শুরু তৃতীয়ায়: রাজ্য সরকারের তরফে পুজো উদ্যোক্তাদের কাছে আবেদন রাখা হয়েছে যাতে গোটা পুজো প্রক্রিয়া ভিড় এড়িয়ে সেরে ফেলা যায়। এ জন্য প্রয়োজনে পুজো কমিটিগুলো তৃতীয়া থেকেই মণ্ডপ খুলে দিতে পারে। সেক্ষেত্রে দর্শনার্থীরা পুজো দেখার জন্য বাড়তি দু’দিন সময় পাচ্ছেন। এতে ভিড় সামলানো অপেক্ষাকৃত সুবিধাজনক হবে বলে মনে করছে রাজ্য সরকার।
সেরা পুজো বাছতে সতর্কতা: পুজোর সময় বিভিন্ন সংস্থা সেরা পুজোর প্রতিযোগিতা করে। বিচারকরা মণ্ডপে মণ্ডপে ঘুরে বেছে নেন সেরা পুজো, সেরা প্রতিমা ইত্যাদি। এবার বিচারকদের কাজ শেষ করতে হবে সকাল ১০ টা থেকে বিকেল ৩ টের মধ্যে। বিচারকদের দুটি গাড়িকে অনুমতি দেওয়া হবে। সরকার থেকে ভার্চুয়াল ভিজিটের কথা বলা হয়েছে। সরকারি স্তরে যে পুরস্কার দেওয়া হবে তাতেও ভার্চুয়ালি পুজো দেখবেন বিচারকেরা।
সোশ্যাল মিডিয়া নির্ভরতা: করোনা পরিস্থিতিতে সুষ্ঠুভাবে পুজো করতে সোশ্যাল মিডিয়া নির্ভরতা আরও বৃদ্ধি করতে কমিটিগুলোর কাছে আবেদন করেছে রাজ্য সরকার। নবান্নের বক্তব্য, যত বেশি সম্ভব সোশ্যাল মিডিয়ার ব্যবহার হলে অনেকেই মণ্ডপে আসার চেয়ে ঘরে বসে তাতে অংশ নিতে পারবেন। সে বিষয়ে মানুষকে অবহিত করারও দায়িত্ব কমিটিগুলোর।
সাদামাটা উদ্বোধন-বিসর্জন: করোনার কথা মাথায় রেখে রাজ্য সরকারের তরফে পুজো কমিটিগুলোকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, তাঁরা যেন উদ্বোধন এবং বিসর্জনকে যতটা পারেন ছোট এবং বাহুল্য বর্জিত রাখেন। উদ্বোধনে যেমন জমকালো অনুষ্ঠান করা যাবে না তেমন বিসর্জনেও দলবেঁধে নাচ বন্ধ।
Comments are closed.