মার্চের তুলনায় এপ্রিলে অনেক কমেছে মোদীর জনপ্রিয়তা, বালাকোটেকে সরিয়ে অর্থনৈতিক সমস্যা, বেকারিই মূল ইস্যু ভোটেঃ thequint.com
‘ভারত ঘরে ঢুকে জঙ্গি নিকেষ করেছে’, ভোটের প্রচারে নরেন্দ্র মোদীকে নিয়ম করে বলতে শোনা যাচ্ছে এই কথা। তাঁর ভাষণে কার্যত উধাও ২০১৪ সালে বলা ডিজিটাল ইন্ডিয়া, মেক ইন ইন্ডিয়া, স্টার্ট আপ ইন্ডিয়া কিংবা স্কিল ইন্ডিয়ার কথা। তবে কি বালাকোটে বিমান হানাই এবার ভোটের প্রধান ইস্যু?
না, সি-ভোটারের সাম্প্রতিক সমীক্ষা বলছে, পাকিস্তানে বিমান হানা নয়, অর্থনৈতিক সমস্যা, বেকারি, মূল্যবৃদ্ধি, কৃষক অসন্তোষই ভোটের ঠিক আগের মুহূর্তে দেশে ফের প্রধান ইস্যু হিসেবে উঠে এসেছে। যার ফলে মার্চ মাসের তুলনায় এপ্রিলে মোদীর জনপ্রিয়তার পারদ নেমেছে হু-হু করে। সি-ভোটারের এই সমীক্ষার রিপোর্ট রবিবার, ২১ শে এপ্রিল প্রকাশিত হয়েছে নিউজ পোর্টাল thequint.com এ।
thequint.com এর প্রতিবেদনে লেখা হয়েছে, সি-ভোটারের পরপর সমীক্ষার ফল বিশ্লেষণ করলে একটি প্রবণতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে। জানুয়ারি মাসে ভোটারদের কাছে অর্থনৈতিক সমস্যাই সবচেয়ে বড় বিষয় ছিল। ১০ ই জানুয়ারি, ৭০.৭ শতাংশ মানুষ বলেছিলেন, অর্থনৈতিক ইস্যু, অর্থাৎ বেকারত্ব, মূল্যবৃদ্ধি এবং কৃষি সমস্যাই আসন্ন নির্বাচনে সবচেয়ে বড় বিষয় হতে চলেছে। মাত্র ২.৩ শতাংশ মানুষ সেই সময় নিরাপত্তাকে গুরুত্ব দেওয়ার কথা বলেছিলেন।
জানুয়ারি মাসে, মোদীর জনপ্রিয়তা ছিল ৩৪.৮ শতাংশ। কিন্তু ১৪ ই ফেব্রুয়ারি পুলওয়ামায় ফিদায়েঁ হামলায় জওয়ানদের মৃত্যু এবং তারপর ২৬ শে ফেব্রুয়ারি অপারেশন বালাকোটের মধ্যবর্তী সময়ে মোদীর জনপ্রিয়তা তুঙ্গে ওঠে। ২৬.৫ শতাংশ মানুষ সেই সময়ের পর থেকে নিরাপত্তাকেই সবচেয়ে বড় ইস্যু হিসেবে মনে করতে থাকেন।
বালাকোটের পর মাত্র ৪৫.৪ শতাংশ মানুষ অর্থনৈতিক সমস্যাকে সবচেয়ে বড় ইস্যু বলে মনে করেন। এমন কী, যাঁরা স্থানীয় সমস্যাকে ভোটের সবচেয়ে বড় ইস্যু হিসেবে উল্লেখ করেছিলেন, তাঁদের সংখ্যাও অন্তত ৫ শতাংশ কমে যায়।
জাতীয় সুরক্ষাকে ভোটের সবচেয়ে বড় ইস্যু হিসেবে মনে করা মানুষের সংখ্যা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গেই পাল্লা দিয়ে বেড়ে চলে নরেন্দ্র মোদীর জনপ্রিয়তাও। শুধু সেই সময়ের মধ্যে অন্তত ১০ শতাংশ বৃদ্ধি পায় মোদীর জনপ্রিয়তা। ৭ ই মার্চ মোদীর জনপ্রিয়তা পৌঁছোয় ৬৩.৫ শতাংশে, যা এ বছরের সর্বোচ্চ এবং জানুয়ারির প্রায় দ্বিগুণ।
জাতীয় সুরক্ষাই যে ভোটের সবচেয়ে বড় ইস্যু, এই মনোভাব বদলাতে শুরু করে মার্চের শেষ থেকে। ফের গুরুত্ব পেতে আরম্ভ করে অর্থনৈতিক সমস্যার ইস্যুগুলি। স্বভাবতই নামতে থাকে নরেন্দ্র মোদীর জনপ্রিয়তার গ্রাফও।
পয়লা এপ্রিল, যেদিন মোদী ইসরোর মিশন শক্তি নিয়ে জাতির উদ্দেশে ভাষণ দিয়েছিলেন, সেদিনই করা সমীক্ষায় উঠে আসে, শতকরা ৫৩.২ জন মানুষ ফের অর্থনৈতিক ইস্যুকেই লোকসভা ভোটের প্রধান বিষয় বলে মনে করছেন। ৮ শতাংশ বৃদ্ধি আসে আগের সমীক্ষার চেয়ে। অন্যদিকে, যাঁরা জাতীয় সুরক্ষাকেই প্রধান ইস্যু বলে মনে করছিলেন, তাঁদের সংখ্যায় ধস নামে। তাঁদের সংখ্যা কমে যায় প্রায় ১৪.৫ শতাংশ। আর ১৪ শতাংশ পতন হয় মোদীর জনপ্রিয়তায়। ৭ ই মার্চের তুলনায় প্রধানমন্ত্রীর জনপ্রিয়তা কমে হয় ৪৯.৬ শতাংশ।
প্রথম দফার ভোট হয়েছে ১১ ই এপ্রিল, সেই সময়ের সমীক্ষায় উঠে এসেছে, মোদীর জনপ্রিয়তা আরও কমে হয়েছে ৪৬.৯ শতাংশ। সমীক্ষায় উঠে আসে, যে সমস্ত মানুষ জাতীয় সুরক্ষাকে প্রধান ইস্যু বলে মনে করছেন, তাঁদের সংখ্যা কমে হয় ১১.৫ শতাংশ।
একই সময় দেখা যাচ্ছে, ৫৬.৬ শতাংশ মানুষ মনে করছেন, অর্থনৈতিক সমস্যাই সবচেয়ে বড় ইস্যু এবারের নির্বাচনে। পাশাপাশি ২৩.২ শতাংশ মানুষ জাতীয় সুরক্ষা নয়, বরং স্থানীয় সমস্যাকে সবচেয়ে বড় ইস্যু বলে মনে করছেন। এই প্রবণতা মোটের উপর একই ছিল দ্বিতীয় দফার ভোট, ১৮ ই এপ্রিল পর্যন্ত।
স্বভাবতই, অর্থনৈতিক সমস্যাগুলোর প্রতি মানুষের নজর ফেরা, ভোটে জিতে ক্ষমতায় ফিরতে চাওয়া নরেন্দ্র মোদীর কপালে চিন্তার ভাঁজ আরও বাড়াবে। রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের একাংশের ধারণা, অর্থনৈতিক সমস্যা থেকে ভোটারদের নজর ঘুরিয়ে জাতীয় সুরক্ষা এবং ধর্মীয় মেরুকরণের দিকে আনতেই প্রজ্ঞা সিংহ ঠাকুরকে প্রার্থী করেছে বিজেপি।
১৯ শে এপ্রিল সি-ভোটার ট্র্যাকারে দেখা যাচ্ছে, দক্ষিণের রাজ্যগুলি কিংবা পঞ্জাবের তুলনায় বিজেপির শক্ত ঘাঁটি মধ্য প্রদেশ, গুজরাত, হরিয়ানা, দিল্লি এবং ছত্তিসগঢ়ের মানুষ সুরক্ষাকে অন্য সব ইস্যুর চেয়ে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছেন। কিন্তু কী বলছে পশ্চিমবঙ্গ? অর্থনৈতিক সমস্যাকে এ রাজ্যের প্রায় ৫০ শতাংশ মানুষ মনে করছেন সবচেয়ে বড় ইস্যু। তারপর স্থানীয় সমস্যাকে ভোটের বড় ইস্যু হিসেবে ভাবছেন প্রায় ৩৫ শতাংশ মানুষ।
৬ টি প্রধান রাজ্য, মধ্য প্রদেশ, দিল্লি, ছত্তিসগঢ়, গুজরাত, রাজস্থান এবং হরিয়ানার ১৫ শতাংশের সামান্য বেশি মানুষ বলছেন, নিরাপত্তাই লোকসভা ভোটের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু। ২০১৪ সালে বিজেপি এই রাজ্যগুলি মিলিয়ে মোট ১০৮ টি আসনের মধ্যে ১০২ টি আসন জিতেছিল। এবার সেই ঘটনার পুনরাবৃত্তির সম্ভাবনাও অত্যন্ত কম।
বিজেপির একমাত্র আশার আলো উত্তর-পূর্বে। সি-ভোটারের সমীক্ষা অনুযায়ী, উত্তর-পূর্বের ৬ টি রাজ্য অরুণাচল প্রদেশ, নাগাল্যান্ড, মেঘালয়, মনিপুর, মিজোরাম ও ত্রিপুরায় ১৮ শতাংশের বেশি মানুষ এখনও বলছেন, নিরাপত্তাই প্রধান বিষয়। এই ৬ রাজ্যের ১০ টি লোকসভা আসনে জিততে মরিয়া বিজেপি।
Comments are closed.