বারবার উপেক্ষিত হয়েছেন, জাতীয় দলেও রিজার্ভ বেঞ্চে ছিলেন মার্টিনেজ; সেই ‘ঈশ্বরের হাত’ই বিশ্বকাপ এনে দিল মেসিদের 

৮৬-এর বিশ্বকাপের বিতর্কিত গোল নিয়ে মারাদোনা বলছিলেন ওটা ঈশ্বেরর হাত। আর ২০২২-এর কাতার বিশ্বকাপে এমিলিয়ানো মার্টিনেজের হাত যেন আক্ষরিক অর্থেই ঈশ্বরের হাতের ভূমিকা নিল। যদিও মারদানোর গোল নিয়ে বিতর্ক ছিল, আর মার্টিনেজের জন্য শুধুই কুর্নিশ। কাতার বিশ্বকাপে মেসি যদি মহানায়ক হন, তাহলে নিঃসন্দেহে মার্টিনেজ নায়ক। কার্যত একা ‘হাতে’ দেশকে বিশ্বকাপ এনে দিলেন তিনি। শুধু আর্জেন্টিনাই নয় দুনিয়ার মেসি ভক্তদের কাছেও মার্টিনেজ মহামানব। 

বেশ কিছু সাক্ষাৎকার থেকে জানা যায়, ২০১৪ সালের ফাইনালে মেসিরা যখন জার্মানির বিরুদ্ধে সবটুকু উজাড় করে দিচ্ছেন, মার্টিনেজ তখন পরিবারের জন্য বার্বিকিউ রান্না করছিলেন। ২০১৮ সালের রাশিয়া বিশ্বকাপেও গ্যালারিতে নিজের ভাইয়ের সঙ্গে বসে আর্জেন্টিনার খেলা দেখছিলেন। তখন নাকি ভাইকে বলেও ছিলেন, একদিন তিনিও দেশের জার্সি পরে ওই গোলপোস্টের নীচে দাঁড়াবেন। আর তারপর ২০২২। যে কোনও রূপকথাকেও হার মানাবে তাঁর উত্থান। 

কিন্তু গোল্ডেন গ্লাভস জয়ী মার্টিনেজের খেলোয়াড় জীবনের শুরুটা মোটেই সুখের ছিল না। বারবার উপেক্ষিত হতে হয়েছে তাঁকে। এমনকী আর্জেন্টিনার প্রথম একাদশেও তাঁর খেলার কথা ছিল না। 

১৯৯২ সালে ২ সেপ্টেম্বর আর্জেন্টিনায় জন্ম মার্টিনেজের। মাত্র ১৭ বছর বয়সে আর্সেনাল ফুটবল ক্লাবে সুযোগ পান মার্টিনেজ। যদিও দীর্ঘ তিন বছর প্রথম একাদশে সুযোগ পাননি তিনি। ২০২০ সালে ক্লাবের নিয়মিত গোলরক্ষক বার্ন্ট লেনো চোট পেলে সুযোগ আসে মার্টিনেজের কাছে। নিজের সবটুকু উজাড় করে দেন। নিজের সেরাটা দিলেও তিনি উপেক্ষিত থেকে যান। আর্সেনাল তাঁকে ছেড়ে দিলে তিনি অ্যাস্টন ভিলার হয়ে খেলা শুরু করেন। পরে এই প্রসঙ্গে বলতে গিয়ে অভিমান নিয়ে মার্টিনেজ বলেছিলেন, আমি আর্সেনালকে ভালবাসি। কিন্তু ওরা আমায় বিশ্বাস করতে পারলো না। 

ক্লাব ফুটবলে দুর্দান্ত ছন্দে থাকলেও জাতীয় দলে এসেও তাঁর জায়গা হয় সেই রিজার্ভ বেঞ্চে। আর্জেন্টিনার কোচ লিওনেল স্কালোনি তাঁকে প্রথম একাদশে রাখেননি। এবারেও একপ্রকার উপেক্ষিতই হতে হয় মার্টিনেজকে। কিন্তু তাঁর খেলোয়াড় জীবনের চিত্রনাট্য হয়তো অন্যরকমভাবে লেখা হচ্ছিল। করোনা আক্রান্ত হন আর্জেন্টিনার গোলরক্ষক ফ্যাঙ্কো আর্মানি। তাঁর জায়গায় দেশের জার্সি গায়ে মাঠে নামার সুযোগ পান মার্টিনেজ। ব্যস তার পরের সফর যেন রূপকথার। যেন আর্জেন্টিনার জন্য কাপ জয়ের শপথ নিয়েই গ্লাভস পড়েছিলেন। কোপা আমেরিকার সেমি ফাইনালে তিনটে পেনাল্টি সেভ। কাতার বিশ্বকাপে কোয়ার্টার ফাইনালে দু’টো পেনাল্টি সেভ। আর রবিবার লুসেইলে এক্কেবারে শেষ মুহূর্তে অবশ্যম্ভাবী গোল বাঁচিয়ে তখনই যেন মেসির হাতে কাপটা তুলে দিয়েছিলেন মার্টিনেজ। উপেক্ষা দিয়ে যাত্রা শুরু হলেও বিশ্বকাপে পেনাল্টি সেভ করে আর্জেন্টিনার ইতিহাসে মারাদোনা, মেসির পাশে নিজের নামটাও লিখিয়ে নিলেন বছর তিরিশের এমিলিয়ানো মার্টিনেজ। 

Comments are closed.