ক’দিন আগেই ২০২০-২১ আর্থিক বছরের প্রথম তিন মাসের জিডিপি হার প্রকাশিত হয়েছে। অভূতপূর্ব সঙ্কোচনে আচ্ছ্ন্ন ভারতের অর্থনীতি। দেশের গড় উৎপাদন বেনজিরভাবে সঙ্কুচিত হয়ে দাঁড়িয়েছে ২৩.৯ শতাংশে। এবার ভারতের বার্ষিক জিডিপির পূর্বাভাস পেশ করল Fitch। তাদের মতে অন্তত ১০.৫ শতাংশ সঙ্কোচন বজায় রেখে বছর শেষ করবে ভারতীয় অর্থনীতি।
গোটা বিশ্বেই বিভিন্ন আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে ঋণ করে বিভিন্ন কাজে বা প্রকল্পে টাকা যোগায় সব দেশের সরকার। ঋণদানকারী সংস্থা ঋণ দিয়ে তা পরিশোধ নেওয়ার পরিবর্তে পরিকাঠামো ক্ষেত্রেও বিনিয়োগ করতে চাইতে পারে। সেই সময় দেশের অর্থনীতির হাল জানা আবশ্যিক। সহজে বললে, ফিচের মতো রেটিং সংস্থার কাজ কোনও দেশের অর্থনীতির নাড়ির গতি মেপে ঋণ পরিশোধের ক্ষমতা নির্ধারণ করা এবং বিনিয়োগের গ্রাউন্ড রিয়্যালিটি সম্বন্ধে স্পষ্ট ধারণা দেওয়া।
করোনার আগে থেকেই দেশের অর্থনীতি নিম্নগামী। বাজারে চাহিদা নেই। তার উপর করোনা মহামারি এবং তা ছড়িয়ে পড়া রুখতে বিশ্বের কঠোরতম ও দীর্ঘতম লকডাউনে অর্থনীতির কোমর ভেঙেছে। দেখা যাচ্ছে বিশ্বে শক্তিশালী অর্থনীতিগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি সঙ্কোচন হয়েছে ভারতেই। অথচ পরিত্রাণের রাস্তা এখনও অন্ধকার। এই পরিস্থিতিতে জুন মাসে প্রথম পূর্বাভাস জানিয়েছিল ফিচ। তাতে বলা হয়েছিল ভারতের অর্থনীতি ৫.৩ শতাংশ হারে সঙ্কুচিত হতে পারে। এবার তা দ্বিগুণেরও বেশি ১০.৫ শতাংশ।
রোগী যখন শয্যায়, তাঁকে রিলিফ দিতে হবে, ভারতের অর্থনীতি নিয়ে কী বলেছিলেন রঘুরাম রাজন?
সোমবারই একটি ওয়েবিনারে Fitch রেটিংস ইন্ডিয়ার হেড ইকনমিস্ট সুনীল সিনহা জানিয়েছেন, অক্টোবর থেকে ডিসেম্বর, তৃতীয় ত্রৈমাসিকে জিডিপি স্বাভাবিক জায়গায় ফিরতে পারে বলে আশা করছি। কিন্তু যা ইঙ্গিত, বৃদ্ধির গতি শ্লথ ও বন্ধুর হবে।
ফিচের পূর্বাভাসে উভয় সঙ্কটে পড়েছে কেন্দ্রীয় সরকার। রাজকোষ ঘাটতি যাতে লাগামছাড়া না হয়, সেজন্য সারা বছর কড়া নজরদারি রাখে কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভা। রাজকোষ ঘাটতি বাড়লে রেটিং সংস্থাগুলো রেটিং কমায়। ফলে বিশ্ব বাজারে ঋণ পাওয়ার বিশ্বাসযোগ্যতা কমে। কিন্তু এবার অভূতপূর্ব পরিস্থিতি। জিডিপি কমার অর্থ হল উৎপাদনে আঘাত এসেছে। মানুষ খরচ করতে চাইছেন না বা পারছেন না। এই পরিস্থিতিতে ঋণ নির্ভর আর্থিক প্যাকেজ দেওয়া হয়েছে। কিন্তু বাজারের অবস্থা বুঝতে না পারলে কে নেবে ঋণ? ফলে কাজে আসছে না আর্থিক প্যাকেজ। এখন একমাত্র উপায় রাজকোষ বরাদ্দ বৃদ্ধি। বাজারে সরকার নগদ যোগাবে। একদিকে রেশন অন্যদিকে নগদ হস্তান্তর। বাজারের আত্মবিশ্বাস ফেরানোর আর কোনও রাস্তা নেই, বলছেন তাবড় অর্থনীতিবিদরা। কিন্তু এভাবে রাজকোষের উপর অতিরিক্ত চাপ পড়বে, যার ফলশ্রুতি রেটিং কমে যাওয়া। কী উপায়? উত্তরের খোঁজে অর্থ মন্ত্রক।
Comments are closed.