মুপ্পালা লক্ষণ রাও ওরফে গণপতি। গত বছর সিপিআই মাওবাদীর সাধারণ সম্পাদক পদ থেকে সরে দাঁড়িয়েছেন। সত্তরোর্ধ গণপতি ছিলেন সিপিআই মাওবাদীর প্রথম সাধারণ সম্পাদক। তাঁর আমলেই মাওবাদীরা দেশের বিশাল অংশে প্রভাব বিস্তার করে। প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহ যখন মাওবাদীদের দেশের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তার জন্য সবচেয়ে বড় বিপদ বলে অভিহিত করেন, নিষিদ্ধ পার্টির দায়িত্ব তখন গণপতির কাঁধেই।
সম্প্রতি সিপিআই মাওবাদীর মুখপত্র পিপলস মার্চে প্রকাশিত হয়েছে গণপতির একটি সাক্ষাৎকার। সেখানে তিনি জানিয়েছেন, গত ৮ বছর ধরে বিপ্লবী আন্দোলন শক্তি হারাচ্ছে। লাগাতার প্রতি বিপ্লবী আক্রমণ এবং আমাদের করা কিছু ভুল এবং দুর্বলতাই গত ৮ বছর ধরে বিপ্লবী আন্দোলনকে ক্রমশ দুর্বল করেছে।
গত বছর জুলাই মাস নাগাদ ভগ্ন স্বাস্থ্যের কারণে সিপিআই মাওবাদীর সাধারণ সম্পাদকের পদ ছাড়েন গণপতি। তাঁর জায়গায় দলের নতুন সাধারণ সম্পাদক হন নাম্বালা কেশব রাও ওরফে বাসবরাজ।
মাওবাদীদের প্রাক্তন সাধারণ সম্পাদকের মতে, কেন্দ্র ও রাজ্য সরকার অপারেশন গ্রিন হান্ট এবং অপারেশন সমাধান শুরু করেছে। এর ফলে যে সমস্ত জায়গায় আন্দোলন শক্তিশালী ছিল, সেখানে সাড়ে ৫ লক্ষ পুলিশ এবং আধা সেনা মোতায়েন করা হয়েছে। ফলে পার্টির জনভিত্তি নড়বড়ে হয়েছে, যার অবশ্যম্ভাবী ফল আন্দোলন দুর্বল হয়ে পড়া। পাশাপাশি তাঁর স্বীকারোক্তি, আমরা শ্রেণি সংগ্রামকে গ্রামীণ এবং শহুরে পরিসরে ছড়িয়ে দিতে ব্যর্থ হয়েছি।
মাওবাদীদের প্রাক্তন সাধারণ সম্পাদক অধুনা নিষিদ্ধ পিপলস মার্চকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে সরাসরি স্বীকার করে নিয়েছেন, পার্টির ব্যর্থতা এবং সাংগঠনিক দুর্বলতার কথাও। রাষ্ট্রীয় আক্রমণের মুখে আমরা দলের নেতৃত্ব, ক্যাডারদের হারিয়েছি। একে মোকাবিলা করার মতো নতুন কোনও কর্মসূচি বা কৌশলও পার্টি নিতে পারেনি বলে স্বীকার করে নিয়েছেন গণপতি। পাশাপাশি, দলের মধ্যে সর্বহারা বিরোধী ঝোঁক নির্মূল করতে প্রচার অভিযান সর্বাত্মক আকার না নেওয়ায় প্রত্যাশিত ফলাফল পাওয়া যায়নি বলেও মনে করেন তিনি।
পাশাপাশি দেশের বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়েও নিজের বক্তব্য জানিয়েছেন গণপতি। তিনি বলেন, নরেন্দ্র মোদীর নেতৃত্বাধীন কেন্দ্রীয় সরকার জরুরি অবস্থার মতো পরিস্থিতি তৈরি করেছে। এই মুহূর্তে আমাদের প্রথম রাজনৈতিক কাজ হল, এই ধারার রাজনীতিকে প্রধান লক্ষ্যবস্তু হিসেবে চিহ্নিত করে শোষিত, নিপীড়িত মানুষকে একজোট করা। এজন্য প্রয়োজন ধারাবাহিক বিক্ষোভ, আন্দোলনের। তাঁর মতে, এই ব্রাহ্মণ্যবাদী হিন্দু ফ্যাসিস্ট শক্তির মোকাবিলায় পার্টির বিভিন্ন গণসংগঠন এবং অন্যান্য সংগঠনকে পথে নামতেই হবে। এই ধারার রাজনীতিকে পরাস্ত করতে বৃহত্তর যুক্ত ফ্রন্ট তৈরির লক্ষ্যে জঙ্গি আন্দোলন গড়ে তোলার উপরও জোর দিয়েছেন সিপিআই মাওবাদীর প্রথম সাধারণ সম্পাদক গণপতি।
তেলেঙ্গানার জগতিয়ালের বীরপুর গ্রামের কৃষক পরিবারে জন্ম গণপতির। তিনি করিমনগর কলেজ থেকে বিএসসি এবং বিএড ডিগ্রি লাভ করেন। ২০০৪ সালে সিপিআই মাওবাদী পার্টি তৈরিতে গণপতির ভূমিকা ছিল বিশাল। সেই সময় পিপলস ওয়ার গ্রুপ (পিডব্লুজি) এবং মাওয়িস্ট কমিউনিস্ট সেন্টার অফ ইন্ডিয়া (এমসিসিআই) মিলিত হয়ে তৈরি হয় আজকের সিপিআই মাওবাদী, যার সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব গ্রহণ করেন তাত্ত্বিক বামপন্থী নেতা গণপতি।
Comments are closed.