সম্প্রতি উত্তরাখণ্ডের উত্তর কাশি শিরোনামে এসেছিল, কারণ, সেখানে গত ৩ মাসে জন্মায়নি একটিও কন্যা সন্তান। যদিও ওই সময়ের মধ্যে জন্ম হয়েছে ২১৬ টি পুত্র সন্তানের। এই খবর ছড়িয়ে পড়তেই সংবাদমাধ্যম হামলে পড়ে পাহাড় ঘেরা উত্তর কাশিতে। কী কারণে একজনও কন্যা সন্তানের জন্ম হয়নি, তাহলে কি কন্যা ভ্রুণ হত্যা? এ নিয়ে চলতে থাকে আলোচনা-বিতর্ক। কার্যত এমনই ব্যাপার ঘটেছে সুদূর ইউরোপে পোলান্ডের একটি গ্রামে। যদিও উত্তর কাশির ঘটনার সঙ্গে পোল্যান্ডের গ্রামের ফারাকটা মৌলিক, সেখানে যাঁরা জন্মেছে, তাঁরা সকলেই কন্যা। গত ১০ বছরে একটিও পুত্র সন্তানের জন্ম হয়নি পোল্যান্ডের মিয়েজস্কে ওদজ্রানস্কি নামক এক গ্রামে ।
সম্প্রতি পোল্যান্ডের এই গ্রামের খবর প্রকাশিত হয়েছে দ্য নিউইয়র্ক টাইমসে। সেই প্রতিবেদনে এক দশক ধরে এই গ্রামে কেবলমাত্র কন্যা সন্তান জন্মের কারণ হিসেবে তুলে ধরা হয়েছে অঙ্কের একটি সূত্রকে। এই ঘটনাকে স্ট্যাটিসটিক্যাল কোইনসিডেন্স বা সংখ্যাতাত্ত্বিক কাকতালীয় ঘটনা হিসেবে বর্ণনা করা হয়েছে।
তবে এক দশক ধরে কেবলমাত্র কন্যা সন্তান জন্মানোয়, ওই গ্রামে বেশ কয়েকটি অবৈজ্ঞানিক পদ্ধতিরও আশ্রয় নিয়েছিলেন হবু মা-বাবারা। যেমন মায়ের পথ্যে বদল কিংবা দম্পতির খাটের তলায় কুঠার রেখে দেওয়া। বলাই বাহুল্য, কোনও টোটকাতেই পুত্র সন্তান লাভ হয়নি। ফলে গোটা গ্রামে গত দশ বছর ধরে জন্মাচ্ছে শুধুমাত্র কন্যা সন্তান। অবশ্য মা-বাবাদের তা নিয়ে কোনও বক্তব্য নেই। দ্য নিউ ইয়র্ক টাইমস এই ধাঁধার সমাধান করেছে, প্রোবাবিলিটির সূত্র ধরে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, একটি কয়েন নিয়ে টস করলে যেমন হেড পড়বে না টেল পড়বে, তা অনিশ্চিত থাকে। এই অনিশ্চয়তার অর্থ হল, হেড বা টেল, দুটির মধ্যে যে কোনও একটি পড়ার সম্ভাবনা বা প্রোবাবিলিটি ৫০ শতাংশ। তেমনই পুত্র হবে না কন্যা, সেই হিসেবটিও এই ৫০-৫০ হিসেবেরই মতো। নিউ ইয়র্ক টাইমসের প্রতিবেদনে দেখানো হয়েছে, পোল্যান্ডের সেই গ্রামে এক দশক ধরে পরপর কেবল কন্যা সন্তান জন্মের ঘটনা অত্যন্ত বিরল। ঠিক কতটা বিরল, তাও জানিয়েছে প্রতিবেদনটি। নিউ ইয়র্ক টাইমসের মতে এই সম্ভাবনা ১ এর ৪০৯৬ ভাগ। ঠিক যেমন আজ বৃষ্টির সম্ভাবনা ১ এর ৪০০০ ভাগ বললে, আপনি নিশ্চয়ই ছাতার জন্য হন্যে হবেন না। প্রতিবেদনের নির্যাস, পোল্যান্ডের এই গ্রাম কিংবা সংলগ্ন অঞ্চলে এমন কিছুই নেই যা পরপর কেবলমাত্র কন্যা সন্তানের জন্ম দিয়ে যাওয়ার কারণকে সমর্থন করে। এই ঘটনা অত্যন্ত স্বাভাবিক, তবে বিরলের মধ্যে বিরলতম।
ভারতের গ্রামে কন্যা সন্তান না জন্মানোর পিছনে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হল, সেই এলাকায় পুত্র সন্তানকে কন্যা সন্তানের চেয়েও বেশি উপযোগী বলে মনে করা হয় কিনা। কন্যা ভ্রুণ হত্যার ঘটনা এ দেশে বহু প্রাচীন। পরিবারে কন্যা ও পুত্রের ভেদাভেদও ঠিক ততোটাই প্রাচীন। সময় পাল্টেছে কিন্তু মানসিকতায় এখনও বদল আসেনি। উত্তর কাশির ঘটনার ক্ষেত্রেও এমন সম্ভাবনা উড়িয়ে দেওয়া যায় না। কিন্তু ঠিক উল্টো ব্যাপার ঘটল পোল্যান্ডের ছোট্ট গ্রামে। এক্ষেত্রে অবশ্য পুত্র ভ্রুণ হত্যা কিংবা এই ধরণের কোনও ঘটনার খবর নেই এবং বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন, এই ঘটনা খুব স্বাভাবিক, তবে বিরলতম।
Comments are closed.