মুখ্যমন্ত্রী-সহ পরিষদীয় নেতাদের বৈঠক ডাকলেন রাজ্যপাল

এবার বিধানসভার বিভিন্ন দলের পরিষদীয় নেতাদের বৈঠক ডেকে নতুন বিতর্কের অবতারণা করলেন রাজ্যপাল জগদীপ ধনকড়। গণপিটুনি রোধ এবং এসসি-এসটি কমিশন সংক্রান্ত যে দুটি বিল রাজ্যপালের কাছে পড়ে রয়েছে, সে দুটি সম্পর্কে মত বিনিময়ের জন্যই ১৭ জানুয়ারি বৈঠক ডাকা হয়েছে রাজভবনে। সোমবার রাজভবন থেকে প্রকাশিত এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এ কথা জানানো হয়েছে।
রাজভবনের ওই বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, রাজ্যপাল ধনকড় এই বৈঠক ডেকেছেন একেবারে অসমর্থনযোগ্য যোগ্য কিছু তথ্য বিধানসভা ও রাজ্য সরকারের তরফে প্রকাশ্যে চলে আসার জন্য। মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি, কংগ্রেসের পরিষদীয় নেতা আব্দুল মান্নান, সিপিএমের সুজন চক্রবর্তী সহ মোট আট জন নেতাকে বৈঠকে থাকার জন্য আবেদন করা হয়েছে। রাজভবনের সঙ্গে নবান্নের সংঘাত যে জায়গায় চলে গিয়েছে, তাতে মুখ্যমন্ত্রী আদৌ ওই বৈঠকে যোগ দেবেন কি না, তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। সূত্রের খবর, কংগ্রেসের আব্দুল মান্নান, সিপিএমের সুজন চক্রবর্তী বৈঠকে যাবেন। বিজেপির পরিষদীয় নেতা তো যাবেনই।
প্রসঙ্গত, এই এসসি এসটি বিল ও গণপিটুনি রোধ সংক্রান্ত বিল রাজ্যপালের সই না হয়ে আটকে থাকার জন্য গত ডিসেম্বরে বিধানসভায় অধিবেশন দু’দিনের জন্য মুলতুবি করে দেওয়া হয়েছিল। যা নিয়ে রাজ্যপালের বিরুদ্ধে উষ্মা প্রকাশ করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। অভিযোগ করেছিলেন, কোন যুক্তিতে রাজ্যপাল এসসি-এসটি বিল আটকে দিয়েছেন, তা তাঁর বোধগম্য হয়নি। সেইসঙ্গে রাজ্যপাল ধনকড়ের বিরুদ্ধে সমান্তরাল প্রশাসন চালানোর অভিযোগ করেছিলেন তিনি। অন্যদিকে এ নিয়ে জগদীপ ধনকড়ও রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে তোপ দেগেছিলেন। তাঁর মন্তব্য ছিল, রাজ্য সরকার গরুর গাড়ির গতিতে কাজ করছে। পাশাপাশি তাঁর অভিযোগ ছিল, তাঁর ঘাড়ে বন্দুক রেখে এসসি-এসটি বিল নিয়ে ‘নোংরা রাজনীতি’ করা হচ্ছে। ধনকড়ের যুক্তি ছিল, কেন্দ্রের একটি এসসি-এসটি কমিশন আছে। তাই আলাদা করে আর রাজ্যে কমিশন করার প্রয়োজন নেই।
প্রসঙ্গত, বিল সইয়ে রাজ্যপালের অসহযোগিতার অভিযোগ তুলে মাসখানেক আগেই বিধানসভা ও রাজ্যসভায় ধনকড়ের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ দেখায় তৃণমূল। পরে বিধানসভা ও লোকসভা চত্বরে তারা মিছিলও করে। ধনকড়ের অপসারণও দাবি করেন তৃণমূলের এমপি, এমএলএ-রা।
এবার আটকে থাকা ওই দুটি বিল নিয়ে রাজভবনে মুখ্যমন্ত্রী সহ বিরোধী নেতাদের বৈঠকে ডেকে এই বিতর্কে নতুন মাত্রা যোগ করলেন রাজ্যপাল, এমনই মনে করছে রাজনৈতিক মহল।
এদিকে সোমবারই রাজ্যপালের সঙ্গে নয়া সংঘাতে জড়িয়েছে রাজ্য সরকার। ধনকড়ের ডাকা সোমবারের বৈঠকে যোগ দিতে রাজভবনে যাওয়ার অনুমতি পাননি রাজ্যের বিশ্ববিদ্যালয়গুলির উপাচার্যরা। রাজ্যের বিশ্ববিদ্যালয়গুলির উপাচার্যদের সঙ্গে এদিন রাজভবনে বৈঠক করার কথা ছিল রাজ্যপালের। কিন্তু উচ্চশিক্ষা দফতর থেকে উপাচার্যদের কাছে পাঠানো চিঠিতে জানিয়ে দেওয়া হয়, নয়া বিধি অনুসারে উপাচার্যের সঙ্গে আচার্য সরাসরি যোগাযোগ করতে পারবেন না। আচার্য হিসেবে রাজ্যপালকে উচ্চশিক্ষা দফতর মারফত উপাচার্যদের সঙ্গে বৈঠকে বসতে হবে। গত ২৪ ডিসেম্বর যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তনে যেতে গিয়ে পড়ুয়া এবং শিক্ষাকর্মীদের প্রবল বিক্ষোভের মুখে পড়েন রাজ্যপাল। ঘণ্টাখানেক ঘেরাও হয়ে থাকার পর তিনি ফিরে যান। সেদিনই তিনি ১৩ জানুয়ারি উপাচার্যদের সঙ্গে বৈঠক করবেন বলে জানিয়েছিলেন।

Comments are closed.