বিজেপি মুখপাত্রের মতো আচরণ আপনার, রাজ্যপালকে ৪ পাতার চিঠি কল্যাণ ব্যানার্জির, ব্যর্থতা ঢাকার কৌশল, পাল্টা চিঠি ধনকড়ের

প্রথমে মুখ্যমন্ত্রী। তারপর তৃণমূল সাংসদ মহুয়া মৈত্র। এবার তৃণমূল সাংসদ কল্যাণ ব্যানার্জি। বাংলার রাজ্যপাল জগদীপ ধনকড়ের সঙ্গে পত্রযুদ্ধ থামার নাম নেই। রাজভবন থেকেও চিঠি পাঠানোর বিরাম নেই।
এবার রাজ্যপালকে ৪ পাতার চিঠি লিখলেন শ্রীরামপুরের তৃণমূল সাংসদ তথা আইনজীবী কল্যাণ ব্যানার্জি। তাতে অভিযোগ করলেন, যেভাবে রাজ্যপালের চেয়ারে বসে জগদীপ ধনকড় রাজ্য সরকারের দিকে একের পর এক নিশানা শানিয়ে যাচ্ছেন, তা অনভিপ্রেত এবং রাজনৈতিকভাবে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। পাল্টা ৪ পাতারই জবাব দিয়েছেন রাজ্যপালও।
মঙ্গলবার লোকসভায় তৃণমূল সংসদীয় দলের চিফ হুইপ কল্যাণ ব্যানার্জি ট্যুইটারে রাজ্যপালকে উদ্দেশ্য করে একটি ৪ পাতার চিঠি পোস্ট করেন। সেখানে কল্যাণ ব্যানার্জি অভিযোগ করেন, যেভাবে সোশ্যাল মিডিয়া এবং সংবাদমাধ্যমকে ব্যবহার করে আপনি রাজ্য সরকারকে আক্রমণ করে একের পর এক চিঠি দিচ্ছেন, তার ভাষা এবং উদ্দেশ্য দেখে একজন সাংসদ ও নাগরিক হিসেবে বিরক্তির উদ্রেক হচ্ছে। যখন মুখ্যমন্ত্রীর নেতৃত্বে সমগ্র মন্ত্রিসভা, আধিকারিক, ডাক্তার, নার্স, স্বাস্থ্যকর্মীরা করোনাভাইরাস অতিমারির বিরুদ্ধে প্রাণপন লড়াই করছেন, তখন ব্যক্তিগত স্বার্থ চরিতার্থ করার লক্ষ্যে আপনি রাজ্যপালের ক্ষমতার অপব্যবহারের মাধ্যমে ভারতীয় জনতা পার্টির রাজনৈতিক মতকে প্রতিষ্ঠা দেওয়ার চেষ্টা করছেন।
এরপর কল্যাণ ব্যানার্জি অভিযোগ করেছেন, যখন দেশের প্রধানমন্ত্রী সবাইকে এক হয়ে এই অভূতপূর্ব অতিমারির বিরুদ্ধে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে লড়াই করার কথা বলছেন, তখন আপনার আচরণ সম্পূর্ণ উল্টো!
কল্যাণ লিখেছেন, আপনি আকছার বলে থাকেন, আপনি নাকি রাবার স্ট্যাম্প হয়ে থাকতে চান না। কিন্তু আপনার মনোভাবে মনে হচ্ছে আপনি হীনমন্যতায় ভুগছেন কিংবা রাজ্যপালের ক্ষমতা ও সীমাবদ্ধতা সম্পর্কে আপনি আদৌ ওয়াকিবহাল নন।
মুখ্যমন্ত্রীকে পাঠানো চিঠিতে রাজ্যপাল তবলিগি জামাতের উল্লেখ করে মমতা ব্যানার্জির বিরুদ্ধে সংখ্যালঘু তোষণের বিস্ফোরক অভিযোগ এনেছিলেন। তা নিয়েও রাজ্যপালকে কটাক্ষে বিঁধেছেন তৃণমূল সাংসদ। চিঠিতে লিখেছেন, মুসলিম তোষণ নিয়ে আপনি যা বলেছেন, তাতেই স্পষ্ট আপনি কেন্দ্রের শাসক দলের মুখপাত্রের ভূমিকায় নেমে পড়েছেন। রাজ্যপালের বিরুদ্ধে বাংলায় সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নষ্টের অভিযোগও করেছেন কল্যাণ ব্যানার্জি।

দুপুর দেড়টায় ট্যুইটারে ৪ পাতার চিঠি পোস্ট করেছিলেন কল্যাণ ব্যানার্জি। বিকেল ৪ টেয় জবাব যায় রাজভবন থেকে। সেখানেও ৪ পাতার চিঠি। তবে তাৎপর্যপূর্ণ ব্যাপার হল, রাজ্যপাল চিঠির শুরুতেই লিখেছেন, আপনার চিঠি আমি সোশ্যাল মিডিয়ায় দেখলাম, রাজভবনে এমন কোনও চিঠি এখনও পর্যন্ত পাইনি। তারপর সরাসরি কল্যাণ ব্যানার্জিকে আক্রমণ করে লিখেছেন, কোভিড ১৯ মোকাবিলায় হিমালয়-সম ব্যর্থতা ঢাকতে এটা একটা কৌশল। জগদীপ ধনকড় কল্যাণ ব্যানার্জির চিঠিকে ছদ্ম প্রতিরোধ হিসেবে বর্ণনা করেছেন। পাশাপাশি আরেক তৃণমূলের রাজ্যসভার সাংসদ ডেরেক ওব্রায়েনের কেন্দ্রীয় দলকে নিয়ে মন্তব্যেরও নিন্দা করেছেন।

সম্প্রতি রাজ্যপালের সঙ্গে নবান্নের বিরোধ চরমে পৌঁছয়। মুখ্যমন্ত্রী একটি চিঠির পর রাজ্যপাল পরপর চিঠি পোস্ট করতে থাকেন সোশ্যাল মিডিয়ায়। যার ভাষা এবং উদ্দেশ্য নিয়ে তৃণমূল শুরু থেকেই আক্রমণের সুর চড়ায়। কিন্তু রাজ্যপাল থামেননি। বিরোধী কংগ্রেস, বামেরাও রাজ্যপালের কার্যকলাপে বিস্মিত। প্রত্যাশিতভাবেই রাজ্যপালকে সমর্থন করে যায় রাজ্য বিজেপি। যদিও প্রশ্ন উঠতে থাকে, রাজ্যপালের চেয়ারে বসে কোনও রাজ্যের নির্বাচিত মুখ্যমন্ত্রী সম্পর্কে এই ভাষার ব্যবহার কতটা গণতান্ত্রিক। এই প্রেক্ষিতেই একের পর এক তৃণমূল নেতার চিঠির পাল্টা জবাব যাচ্ছে রাজভবন থেকে। যার সর্বশেষ উদাহরণ তৃণমূল সাংসদ কল্যাণ ব্যানার্জিকে লেখা রাজ্যপালের ৪ পাতার চিঠি।

Comments are closed.