হাইকোর্টে শুনানিতে বিচারপতি সমাপ্তি চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে আইনজীবী কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের বেনজির বাদানুবাদ

মামলার শুনানি চলাকালীন বুধবার বেনজির বাদানুবাদে জড়ালেন কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি সমাপ্তি চট্টোপাধ্যায় ও আইনজীবী তথা তৃণমূল সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়। দু’পক্ষের তীব্র বাদানুবাদ এমন পর্যায়ে যায়, নিজের আসন ছেড়ে উঠে যান বিচারপতি সমাপ্তি চট্টোপাধ্যায়। অন্যদিকে, আইনজীবী কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়ও কোর্ট রুম থেকে বেরিয়ে যান। পরে বিচারপতির কাছে ক্ষমা চান কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়।
বিধাননগরের মেয়র সব্যসাচী দত্তের বিরুদ্ধে আনা অনাস্থা প্রস্তাব সংক্রান্ত মামলার শুনানিতে বুধবার আইনজীবী কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিস্ফোরক অভিযোগ, কীভাবে বিচারপতি নিয়োগ হয় তিনি জানেন। হাইকোর্টের বিচারপতিদের একাংশ সল্টলেকে জমি পেয়েছেন। কারা কারা এই জমি পেয়েছেন, সেই তালিকা তাঁর কাছে আছে বলে মন্তব্য করেন আইনজীবী কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়। পাল্টা আইনজীবীদের একাংশের সম্পত্তি কীভাবে দিনে দিনে বাড়ছে তা নিয়ে কটাক্ষ করেন কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি সমাপ্তি চট্টোপাধ্যায়। তিনি বলেন, ‘সততার সঙ্গে কাজ করেছি, আমার নিয়োগ নিয়ে কেউ প্রশ্ন তুলতে পারেন না’। পাশাপাশি বিচারপতি এও জানান, অনেক আইনজীবীর ১০ বছরের অভিজ্ঞতা না থাকা সত্ত্বেও হাইকোর্টের গুরুত্বপূর্ণ পদে রয়েছেন। আইনজীবী তথা তৃণমূল সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের উদ্দেশ্যে বিচারপতি সমাপ্তি চট্টোপাধ্যায় বলেন, কিছু লোক দিতে পছন্দ করে, আর কিছু লোক নিতে। তাই এই কাটমানি কনসেপ্ট, মন্তব্য করেন বিচারপতি সমাপ্তি চট্টোপাধ্যায়।
এরপরই ফের চাঞ্চল্যকর অভিযোগ করেন আইনজীবী কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি বলেন, কলকাতা হাইকোর্টের বার অ্যাসোসিয়েশনের নির্বাচনে বিজেপি ২০ লক্ষ টাকা খরচ করেছে। দুর্নীতির অভিযোগ তুললে তা সর্বস্তরে বিবেচনা করা উচিত বলে মন্তব্য করেন আইনজীবী। এরপরেই এজলাস ছেড়ে নিজের চেম্বারে চলে যান বিচারপতি সমাপ্তি চট্টোপাধ্যায়। কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়ও এজলাস ছেড়ে বেরিয়ে যান। পরে অবশ্য গোটা ঘটনায় বিচারপতির কাছে গিয়ে দুঃখপ্রকাশ করেন আইনজীবী কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়।
এদিন এই মামলার শুনানি চলাকালীন বিচারপতি এবং সাংসদ আইনজীবী যেরকম বাদানুবাদে জড়িয়ে পড়েন তা হাইকোর্টের ইতিহাসে রীতিমতো নজিরবিহীন। দু’জনেই কার্যত দু’জনকে পেশা তুলে ব্যক্তিগত আক্রমণ করেন। বিচারপতিদের জমি পাওয়া এবং নিয়োগ সংক্রান্ত প্রশ্ন তুলে সুর চড়ান কল্যান। পালটা জবাব দেন বিচারপতি সমাপ্তি চট্টোপাধ্যায়ও।

Comments are closed.