সময় মতোই রাজ্যে প্রবেশ করেছে বর্ষা। প্রাক-বর্ষার মরসুমেও ভালো বৃষ্টি হয়েছে রাজ্যের উপকূলবর্তী জেলাগুলিতে। তাই এই বর্ষায় ইলিশ মিলবে ভালোই, এমনই আশা করছেন মৎস্যজীবীরা। সরকারি নির্দেশিকা মেনে সোমবার থেকেই শুরু হয়েছে রুপোলি শস্যের খোঁজ। পূর্ব মেদিনীপুরের দিঘা, কোলাঘাট থেকে দক্ষিণ ২৪ পরগনার ডায়মন্ড হারবার, বকখালি, ফ্রেজারগঞ্জ- সর্বত্রই মাছ ধরার জন্য সমুদ্রে কয়েক হাজার ট্রলার পাড়ি দিতে শুরু করেছে। জুনের শেষ সপ্তাহ থেকেই বাঙালি পাতে ইলিশ পেতে পারে বলে আশাবাদী মৎস্য বিশেষজ্ঞ ও বিভিন্ন জেলার মৎস্য অধিকর্তা।
দিঘা উপকূলের মৎস্যজীবীরা জানাচ্ছেন, পূর্ব মেদিনীপুর থেকে সব মিলিয়ে শ’ খানেক ট্রলার মঙ্গলবার পর্যন্ত রওনা দিয়েছে। তাদের ফিরতে আরও সময় লাগবে। তবে এ বার পরিস্থিতি সব দিক থেকেই ভালো। সময়ে বর্ষার আগমন, মেঘলা আবহাওয়া এবং পুবালি হাওয়ায় ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ জালে জড়ানোর ব্যাপারে আশাবাদী মৎস্যজীবীরা। ঘূর্ণিঝড় আমপানের প্রভাবে এ বার সময়েই বর্ষা ঢুকে পড়েছে বঙ্গে। আর গঙ্গা থেকে ইলিশ ধরার মোক্ষম সময় হল ভারী বর্ষার সময়টা। কারণ এই সময়ে মোহনার কাছে মিষ্টি ও নোনা জলের আনুপাতিক হার পাল্টে যায়। এখন প্রায় প্রতিদিন ঝিরঝিরে বৃষ্টি চলছে উপকূলবর্তী জেলাগুলিতে। সঙ্গে হাওয়াও রয়েছে। এতেই আশা দেখছেন মৎস্যজীবীরা। সব মিলিয়ে জুলাই মাসে ভালো ইলিশ মিলবে বলে আশা করা যাচ্ছে। দিঘার এক মৎস্যজীবীর কথায়, সাত-আট বছরের মধ্যে গত বার সবচেয়ে কম ইলিশ উঠেছিল। একই মত দক্ষিণ ২৪ পরগনার মমৎস্যজীবীদেরও। একে মাছ কম উঠেছিল, তারপর ট্রলার ডুবির ঘটনায় খুবই কম ইলিশ মিলেছিল গত মরসুমে। অন্যান্য বার গড়ে মোটামুটি ৪০-৪৫ হাজার মেট্রিক টন ইলিশ এলেও, গত বার ৮ থেকে ১০ হাজার মেট্রিক টন ইলিশ তুলতেই হিমশিম খেয়ে যান মৎস্যজীবীরা। তার ফলে বাজারে ইলিশের দামও ছিল চড়া। এ বার আবহাওয়া ভালো। ভালো ইলিশ মিললে অপেক্ষাকৃত কম দামেই পাতে ইলিশ পাবে বাঙালি।
রাজ্যের মৎস্য দপ্তরের এক আধিকারিক জানান, এ বার এখনও আবহাওয়া অনুকূল। তার থেকেও বড় কথা, করোনা ও একটানা লকডাউনে দূষণের মাত্রা অনেক কম। ফলে জলের গুণগত মান ভালো। ইলিশ ডিম পাড়ার জন্য মোহনার কাছাকাছি এ বার ঝাঁক বেঁধে আসবে বলেই আশা করা হচ্ছে। সব জায়গাতেই মৎস্যজীবীরা মোহনায় পাড়ি দিচ্ছেন। এক আধিকারিক জানান, আমপানের প্রভাবে দুই ২৪ পরগনা ও পূর্ব মেদিনীপুরের উপকূল এলাকার বিশাল ক্ষতি হয়েছে। মৎস্যজীবীদের ট্রলার, মাছ ধরার জাল নষ্ট হয়েছে। তবে রাজ্য সরকার মৎস্যজীবীদের কিছু কিছু ক্ষতিপূরণের ব্যবস্থা করেছে। তাই জাল, ট্রলার সারিয়ে মৎস্যজীবীরা সামান্য দেরি হলেও নামবেন বলেই মনে করছেন তিনি।
এদিকে করোনাভাইরাসের প্রভাবের কথা মাথায় রেখে মৎস্যজীবীদের সুরক্ষার বিষয়েও সজাগ প্রশাসন। কাকদ্বীপ, নামখানা, সাগর, পাথরপ্রতিমা, রায়দিঘি, কুলতলি, ডায়মন্ড হারবার, কুলপির তিনটি মৎস্য বন্দর ও জেটি ঘাটগুলি থেকে বহু ট্রলার রওনা দিচ্ছে। ওই ঘাটগুলিতে মৎস্যজীবীদের স্বাস্থ্য পরীক্ষার ব্যবস্থা থাকছে। ট্রলারে মৎস্যজীবীদের লাইফ জ্যাকেট রাখা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। পাশাপাশি, কতজন যাচ্ছে তার তালিকা নথিভুক্ত থাকবে আধিকারিকদের কাছে। প্রত্যেক মৎস্যজীবীকে মাস্ক পরতে হবে, ব্যবহার করতে হবে স্যানিটাইজ়ার। ট্রলারে ওঠার আগে থামার্ল স্ক্রিনিং করা হচ্ছে। ফিরে আসার পরও স্ক্রিনিং করা হবে। শ্রমিকদের মাস্ক ও হাতে গ্লাভস পরা আবশ্যক করা হচ্ছে।
Comments are closed.