জেলা মুর্শিদাবাদ। ব্লক, রাণীনগর। গ্রাম, চক গ্রাম। গ্রামের তিন দিক দিয়ে বয়ে গিয়েছে ভৈরব নদী। লোক মুখে শোনা যায়, আজ থেকে প্রায় ৪৭৭ বছর আগে এক ‘বুড়িমা’ চক গ্রামে পুজোর সূচনা করেছিলেন। সেই থেকে পুজোর নাম ‘বুড়িমাতার পুজো’। রাজ্যের এই ‘অখ্যাত’ পুজোর কথা জানলে হয়তো আপনারও মন ভালো হয়ে যাবে। হয়তো শহর কলকাতার মতো আড়ম্বর নেই। থিমের লড়াই নেই। কিন্তু সমস্ত ভেদাভেদের ওপরে উঠে ‘বুড়িমাতার পুজো’ আক্ষরিক অর্থেই সবার পুজো হয়ে উঠতে পেরেছে। বুড়িমাতা পুজো কমিটির সম্পাদক সমর দত্ত TheBengalStory-এর সঙ্গে তাঁদের পুজো নিয়ে কথা বললেন।
পুজোর বয়েস নিয়ে সেই অর্থে কোনও প্রামাণ্য নথি নেই। লোক মুখেই এই পুজোর ইতিহাস যেটুকু জানা যায়। সমর বাবুর কথায়, “বুড়িমাতার পুজোই মুর্শিদাবাদ জেলার রাণীনগর ১নং ব্লকের প্রথম পুজো। প্রাচীন রীতি মেনে এখনও বুড়িমাতার বিসর্জনের পরেই আশেপাশের সব পুজোর বিসর্জন হয়।’ বিসর্জন নিয়েও কিছু চমকপ্রদ তথ্য দিলেন তিনি। তবে সে গল্প পরে।
সমর বাবু জানালেন, এ বছর তাঁদের পুজো ৪৭৮ বছরে পড়েছে। পুজো শুরুর দিন থেকেই একচালা মূর্তি। এখনও সেই ভাবেই প্রতিমা গড়া হয়। মণ্ডপেই মূর্তি তৈরি করা হয়। মায়ের সাজে থাকে সোনার গয়না। কথায় কথায় বললেন, “স্থানীয় বাসিন্দাদের কাছে বুড়িমাতার পুজো খুবই ‘জাগ্রত’। যে যা মানত করেন তাই পূরণ হয়।” ওই প্রসঙ্গেই বললেন “আমাদের আশেপাশের গ্রামে তো প্রচুর মুসলিম পরিবার থাকে। তাঁরাও কেউ কেউ পুজোর দিনগুলোতে এসে মায়ের কাছে মানত করে যান। ইচ্ছে পূরণ হলে, মা’কে সোনার গয়না দেন।” তিনি আরও বললেন, “এ ভাবেই সারা বছর অল্প অল্প করে সোনা, রূপা জমা হয়। পুজোর আগে সেগুলো গলিয়ে মায়ের গয়না প্রস্তুত হয়”
পুজোর চার দিন মণ্ডপের চারপাশে মেলা বসে। দূর দূরান্তের গ্রাম থেকে হাজার হাজার ভক্ত আসেন। সমর বাবু জানালেন, “আগে মায়ের বিসর্জন ছিল দেখার মতো। এখান থেকে আড়াই কিমি দূরে ‘২২ পুতুল তলায়’ আরও একটি পুজো হয়। আগে ভৈরব নদীতে নৌকা করে মা’কে ওখানে নিয়ে যাওয়া হত। তার পর ওখানে প্রতিমা এবং আশেপাশের সব প্রতিমা নৌকা করে এক জায়গায় আনা হত। সে এক দেখার মতো ব্যাপার।” কিছুটা আক্ষেপ নিয়ে বললেন, “তবে এখন ভৈরব নদী শুকিয়ে যাচ্ছে। এখন আর মা’কে নিয়ে যাওয়া যায় না। বদলে নৌকা করে শুধু পুজোর ঘট যায়।”
কিছু কিছু উৎসব আদতেই মিলন উৎসব হয়ে ওঠে। কলকাতার দূর্গা পূজা এবারে ইউনেস্কোর হেরিটেজ তকমা পেয়েছে। কয়েকটি জেলার পুজোর জাঁকজমক কলকাতাকেও ছাপিয়ে যায়। আবার পিন কোড কলকাতার বাইরে কোনও অখ্যাত গ্রামে বহু বছর ধরে ‘বুড়ি মাতার’ মতো কিছু পুজো হয়ে আসছে, যার সরল উদযাপন আমাদের অবাক করে, রোমাঞ্চিত করে।
Comments are closed.