হংকংয়ের আন্দোলন ঠেকাতে হিমশিম খাচ্ছে প্রশাসন, পুলিশেরই ইন্টারনেট ব্যবস্থা হ্যাক করল আন্দোলনকারীরা!
জ্বলছে হংকং। পুলিশের সঙ্গে বিক্ষোভকারীদের সংঘাত চূড়ান্ত আকার ধারণ করছে। তার মধ্যে উত্তেজনা বাড়িয়ে চিনা লাল ফৌজের সাঁজোয়া গাড়িতে ছেয়ে গিয়েছে হংকং সংলগ্ন চৈনিক ভুখণ্ড। এবার হংকং পুলিশ প্রশাসনকে টেক্কা দিতে ব্ল্যাক টি-শার্ট আন্দোলনকারীরা আমদানি করলেন আরও একধাপ এগিয়ে থাকা টেকনোলজি। যে প্রযুক্তির হদিশ পেতে এখন কালঘাম ছুটছে পুলিশেরই।
ভারতীয় উপমহাদেশ যখন কাশ্মীর নিয়ে ব্যস্ত, ঠিক তখনই আর এক আন্দোলন দানা বেঁধেছে প্রাক্তন ব্রিটিশ উপনিবেশ হংকংয়ে। গত প্রায় ৩ সপ্তাহ ধরে হংকংবাসী পথে নেমেছেন গণতন্ত্র রক্ষায়। ভাইরাল হয়েছে অ্যাম্বুলেন্সকে পথ ছাড়ার সেই দৃশ্য। এদিকে আকাশে উড়ছে পুলিশের ড্রোন। জমায়েত দেখলেই সঙ্গে সঙ্গে অ্যাকশন। কাঁদানে গ্যাসের শেল ফাটছে অহরহ। বন্ধ ইন্টারনেট পরিষেবা।
পুলিশের দলের মধ্যেই থাকছেন ক্যামেরা হাতে লোকজন। সেই বিশেষ হাই ডেফিনিশন ক্যামেরায় বিক্ষোভরত মানুষের ছবি উঠে যাচ্ছে। যে ছবি সঙ্গে সঙ্গে জানিয়ে দিচ্ছে ব্যক্তির ফেসবুক প্রোফাইল এবং অন্যান্য সমস্ত তথ্য। পুলিশ সেই তথ্য হাতে নিয়ে গ্রেফতার করছে। পাশাপাশি, আন্দোলনস্থলে সেলফি তুলে আপলোড করলেও একইভাবে পুলিশের নজরে পড়ে যাচ্ছেন বিক্ষোভকারীরা। এভাবেই আন্দোলনের কার্যত কোমর ভেঙে দেওয়া গিয়েছে বলে শনিবার দাবি করেছিল পুলিশ। কিন্তু রবিবার সকাল থেকে এক সম্পূর্ণ অন্য পরিস্থিতির মোকাবিলা করতে কালঘাম ছুটছে পুলিশের।
যে আন্দোলনের কোমর ভাঙার দাবি করেছিল পুলিশ, ২৪ ঘণ্টার ব্যবধানে তাদেরই মনোবল তলানিতে। খুব কাছ থেকে হংকংয়ের আন্দোলনকে দেখা সাংবাদিকরা বলছেন, আন্দোলনকারীদের প্রযুক্তি জ্ঞানের কাছে দশ গোল খেয়েছে পুলিশ। কীরকম?
রবিবার সকাল থেকে হংকংয়ের রাস্তায় যাঁদের দেখা গিয়েছে, তাঁরা কেউ সোশ্যাল মিডিয়ায় কোনও ছবি পোস্ট করছেন না। পাশাপাশি তৈরি করা হয়েছে নতুন এক ভাষা পদ্ধতি। যেমন কয়েকটি জায়গায় জমায়েতের নাম হয়ে গিয়েছে পিকনিক। পিকনিকের আহ্বানে সাড়া দেওয়া আন্দোলনকারীরা মুহূর্তে বুঝে যাচ্ছেন কোথায়, কী নির্দেশ। কিন্তু পুলিশ তা ধরতে পারছে না। পাশাপাশি হাই ডেফিনেশন ক্যামেরার লেন্সকে অকেজো করতে ব্যবহার করা হচ্ছে লেজার লাইট। যা একইসঙ্গে ক্যামেরার লেন্সকে ঘোলা করার পাশাপাশি ক্যামেরাম্যানের স্বাস্থ্যেও প্রভাব ফেলছে। নাজেহাল পুলিশের তরফে লেজার ব্যবহার করতে নিষেধ করা হয়েছে ঠিকই, কিন্তু আন্দোলনকারীরা তা শুনলে তো। হাজার হাজার আন্দোলনকারীর হাতে ঘুরছে লক্ষ লক্ষ লেজার লাইট। রাতারাতি অচল হয়ে গিয়েছে পুলিশের হাই টেক ক্যামেরা-প্ল্যান। ইন্টারনেট বন্ধ থাকায় পুলিশের তরফে ঘটনাস্থলে থেকে কোনও তথ্য পাঠানো যাচ্ছে না। তাই একমাত্র পুলিশের ব্যবহারের জন্য হাই স্পিড ইন্টারনেটের ব্যবস্থা হয়েছিল। কিন্তু সেই হাই স্পিড ইন্টারনেট কানেকশনকে হ্যাক করে নিজেদের জন্য একটি সমান্তরাল ইন্টারনেট নেটওয়ার্ক তৈরি করে ফেলেছেন আন্দোলনকারীরা। যে নেটওয়ার্কের হদিশ আবার পুলিশ পাচ্ছে না। হোয়াটসঅ্যাপ, মেসেঞ্জার হ্যাক করা হচ্ছে এই খবর ছড়িয়ে পড়ার পরই আন্দোলনকারীরা দলবেধে টেলিগ্রাম ব্যবহার শুরু করেন।
প্রযুক্তির দুনিয়ায় আন্দোলন দমন করতে পুলিশের হাতে নিত্য নতুন অস্ত্র। কিন্তু হংকং কি প্রযুক্তির সাহায্যেই প্রযুক্তিকে মোকাবিলার করার পথ দেখাল? গণতান্ত্রিক আন্দোলন ধামাচাপা দিতে প্রশাসনের যে প্রযুক্তিগত প্রয়াস, হংকংয়ের রাস্তায় সেই প্রয়াসই প্রশ্নের মুখে। কাশ্মীর পরিস্থিতি সামলাতে দীর্ঘদিন সেখানে বন্ধ ইন্টারনেট পরিষেবা। সরকারি সূত্রের দাবি, এভাবেই সিংহভাগ বিক্ষোভ সামালও দেওয়া গিয়েছে। কিন্তু হংকং দেখাচ্ছে, ইন্টারনেট বন্ধ করলেও জারি থাকে গণতান্ত্রিক আন্দোলন। আগামী দিনে যার মুখোমুখি হবে অন্য দেশের পুলিশ প্রশাসনও।
Comments are closed.