কবি শক্তি চট্টোপাধ্যায় লিখেছিলেন, ”এই উড়ণচণ্ডিপর্ণা, আসলে সেই বয়ঃসন্ধি”। সত্যিই আগল ভাঙার এই বয়সে শিশু থেকে কিশোরে পদার্পণ। হরমোন ক্ষরণে শরীর ও মনে আসে এক বিরাট পরিবর্তন। এমন এক বয়স, যখন ভাবনা আসে, ‘কেউই আমাকে বোঝে না’। অন্যের মনোযোগ পাওয়া, বিপরীত লিঙ্গের প্রতি এক দুর্নিবার টান জন্মায় এই বয়ঃসন্ধির সময়। আবার এই বয়সেই থাকে বিপথে যাওয়ার আশঙ্কাও। বাবা-মা, অভিভাবকদের কাছে একটা গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব থাকে সন্তানের বয়ঃসন্ধির সময়। তাঁদের বুঝতে শেখা, পাশে থাকার এবং সর্বোপরি বন্ধুর মতো মিশে তাঁদের সমস্যা সমাধান করতে হয়।
বয়ঃসন্ধির সময় (Juvenescene)
বয়ঃসন্ধি হলো জীবনের একটি প্রক্রিয়া, যখন মানুষের শরীর শিশু অবস্থা থেকে কিশোর অবস্থায় পা রাখে। দেশ, সংস্কৃতি, পরিবেশ, স্বাস্থ্য, খাদ্যাভ্যাস এবং জীবনযাপনের ওপর নির্ভর করে বয়ঃসন্ধির সময়কাল। তবে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO) এর মতে, ১০ থেকে ১৯ বছর বয়স পর্যন্ত ছেলে বা মেয়েকে কিশোর বা কিশোরী বলে অভিহিত করা হয়। এর যে কোনও সময় শুরু হতে পারে বয়ঃসন্ধি প্রক্রিয়া। ‘টিনএজ’ এর এই সময়ে বিরাট পরিবর্তন আসে মানব শরীরের।
চিকিৎসকদের মতে, মেয়েদের বয়ঃসন্ধিকাল, ছেলেদের চাইতে কিছুটা আগেই শুরু হয়। মূলত ১০ থেকে ১৩ বছরের মধ্যে যে কোনও সময় তা হতে পারে। আর ছেলেদের ক্ষেত্রে বয়ঃসন্ধিকাল আসে ১১ থেকে ১৫ বছর বয়সের মধ্যে।
ছেলে ও মেয়ের বয়ঃসন্ধির মধ্যে পার্থক্য
ছেলে ও মেয়ের বয়ঃসন্ধির মধ্যে উল্লেখযোগ্য পার্থক্যগুলোর মধ্যে দুটির শুরু হয় বয়ঃসন্ধি শুরুর সাথেই।
যদিও বয়ঃসন্ধি শুরুর সাধারণ বয়সসীমার মধ্যে ব্যাপক তারতম্য রয়েছে, কিন্তু গড়পড়তা মেয়েদের বয়ঃসন্ধির প্রক্রিয়া ছেলেদের ১-২ বছর আগে শুরু হয়। তখন তাদের গড় বয়স হয় ৯ থেকে ১৪ বছর। ছেলেদের ক্ষেত্রে ১০ থেকে ১৭ বছর। সাধারণত বয়ঃসন্ধির প্রথম লক্ষণ দেখা দেওয়ার চার বছরের মধ্যেই মেয়েরা তাঁদের উচ্চতা ও প্রজনন পরিপূর্ণতা লাভ করে। এক্ষেত্রে তুলনামূলকভাবে ছেলেদের বৃদ্ধিটা হয় একটু ধীরে। কিন্তু সাধারণত বয়ঃসন্ধির পরিবর্তন শুরুর ছয় বছরের মধ্যে তারাও পরিপূর্ণতা লাভ করে।
পুরুষের ক্ষেত্রে, টেস্টোস্টেরনের অ্যান্ড্রোজেন হলো প্রধান যৌন স্টেরয়েড। অল্পসময়ের মধ্যেই টেস্টোস্টেরনের প্রভাবে সকল পুরুষালি বৈশিষ্ট্যের প্রকাশ ঘটে। পুরুষের টেস্টোস্টেরনের রাসায়নিক রূপান্তরের (hormonal changes) ফলে অন্যতম যে স্টেরয়েড উৎপন্ন হয় তা হল, এস্ট্রাডিওল। তবে ছেলেদের শারীরিক বৃদ্ধি হয় মেয়েদের পরে এবং অনেক ধীরগতিতে। বয়ঃসন্ধি শুরু হবার আগে উচ্চতায় ছেলেরা মেয়েদের তুলনায় মোটামুটি ২ সেন্টিমিটার খাটো হয়।
মেয়েদের ক্ষেত্রে বৃদ্ধিটা নির্ধারিত হয় এস্ট্রাডিওল ও ইস্ট্রোজেন হরমোনের মাধ্যমে। যেখানে এস্ট্রাডিওল স্তন ও জরায়ুর বৃদ্ধিতে সাহায্য করে। এটা প্রধান হরমোন যা বয়ঃসন্ধিকালীন বৃদ্ধি ত্বরান্বিত করে এবং এপিফিসিয়াল পরিপক্কতা ঘটায় এবং সম্পূর্ণ করে। ছেলেদের চেয়ে এস্ট্রাডিওল সীমার বৃদ্ধি মেয়েদের বেশি ও আগে হয়।
বয়ঃসন্ধির প্রারম্ভ
বয়ঃসন্ধির শুরু হয় GnRH এর উচ্চ স্পন্দনের মাধ্যমে, যা যৌন হরমোনের ক্ষরণ বাড়ায়। বয়ঃসন্ধি সাধারণত পুরুষের ৫৫ কেজি এবং মেয়েদের ৪৭ কেজি ওজনে শুরু হয়। শরীরের ওজনের এই পার্থক্যের কারণও GnRH বৃদ্ধি, যা প্রোটিন হরমোন লেপ্টিনের চাহিদা বাড়িয়ে দেয়। লেপ্টিন উদ্দীপ্ত হতে দেরি হলে বয়ঃসন্ধি শুরু হতেও দেরি হয়। লেপ্টিনের পরিবর্তন বয়ঃসন্ধির প্রারম্ভেই শুরু হয় এবং প্রাপ্তবয়স্কতা প্রাপ্তির সাথে সাথে শেষ হয়। যদিও বয়ঃসন্ধির শুরুর সময় বংশানুক্রমিক কারণেও পরিবর্তিত হতে পারে।
বয়ঃসন্ধির সময় ছেলে ও মেয়ের শারীরিক পরিবর্তন
ছেলে ও মেয়েদের মধ্যে আগে মেয়েরা বয়ঃসন্ধিতে পা দেয়। মেয়েদের শারীরিক পরিবর্তন গুলি হল দেহে নারী-সুলভ বৈশিষ্ট ফুটে ওঠে, হাত, পা, নিতম্ব ইত্যাদিতে মেদ জমে ওঠে। স্তন উন্নত হয়ে ওঠে, মানসিক পরিবর্তন দেখা দেয়। কণ্ঠস্বর মিষ্টি হয়ে ওঠে। ঋতুস্রাব শুরু হয়ে থাকে।
আর ছেলেদের ক্ষেত্রে যে শারীরিক পরিবর্তন হয় তাদের কণ্ঠস্বর ভারী হয়ে ওঠে। গোঁফের রেখা স্পষ্ট হয়ে ওঠে। শরীরে লোম দেখা যায়। দেহের মধ্যে বীর্য বা শক্তি সৃষ্টি হয় এবং মানসিক পরিবর্তন ঘটে।
অনুভূতিগত ও সামাজিক পরিবর্তন
বয়ঃসন্ধির সময়ে আপনি মেয়ের মধ্যে এমন কিছু অনুভূতিগত এবং সামাজিক পরিবর্তন লক্ষ্য করতে পারেন যা তাঁকে তাঁর দৈহিক বদলগুলো গ্রহণ ও মানিয়ে নিতে সাহায্য করে। সেই সঙ্গে তাদের মধ্যে স্বাধীন সত্ত্বার বোধ জেগে ওঠে।
বয়ঃসন্ধির সময়ে দেহে নানারকম শারীরিক এবং হরমোনজনিত পরিবর্তন (hormonal changes) ঘটে। সেই কারণে অভিভাবক হিসেবে আপনি আপনার ছেলে ও মেয়ের মধ্যে অনুভূতিগত বা মানসিক বদলগুলো দেখতে পাবেন। যেমন,
বিভিন্ন সময় খুব গভীর ও তীব্র অনুভূতি দেখা দেবে। তাদের মস্তিষ্ক এই সময়েও অনুভূতি কীভাবে প্রকাশ করতে হবে সেই প্রক্রিয়া শেখায়।
মানসিক দিক দিয়ে সংবেদনশীল হয়ে ওঠে। এই সময়ে একটি মেয়ের মধ্যে অন্যের অনুভুতি জানার ও বোঝার দক্ষতাজনিত বিকাশ হতে শুরু করে। এই কারণে তারা অতিরিক্ত সংবেদনশীল হয়ে ওঠে বা অপরের আচরণ এবং শরীরি ভাষার ভুল ব্যাখ্যা করে বসে। নিজেদের শারীরিক গঠন ও পরিবর্তন সম্পর্কে তাদের আত্মসচেতনতা দেখা যায়। বয়ঃসন্ধির মেয়েরা বন্ধু বা তার কাছের মানুষের সঙ্গে নিজেদের শারীরিক সৌন্দর্য তুলনা করে।
এই সময়ে যে ধরনের সামাজিক পরিবর্তন ঘটে, সেগুলো হল–
বয়ঃসন্ধিকালের মেয়েদের মধ্যে আত্মপরিচয় গড়ে তোলার প্রবণতা দেখা দেয়। সে নিজেকে বাইরের জগতের সামনে প্রকাশ করতে চায় ও নিজের সম্পর্কে নিজের কাছেই জানতে চায় এবং নিজেকে বুঝতে চায়। নিজেদের আত্মপরিচয় খোঁজার পিছনে থাকে লিঙ্গ, কাছের মানুষ, সাংস্কৃতিক পরিমন্ডল, মিডিয়া, স্কুল ও পারিবারিক প্রভাব।
এই বয়সের মেয়েরা অভিভাবকদের সঙ্গে একটা দূরত্ব বজায় রেখে চলতে চায়। অর্থাৎ, তারা নিজেদের জন্য একটা আলাদা জায়গা তৈরি করতে চায়। এই সময়ে পরিবারের লোকজনদের থেকেও বন্ধু বা কাছের মানুষজন তাঁদের কাছে বড় হয়ে উঠতে পারে। তাঁদের আচরণ, নিজস্বতার বোধ এবং আত্মবিশ্বাস বন্ধু ও প্রিয়জনের কাছে গ্রহণযোগ্যতা বাড়াতে সাহায্য করে।
বয়ঃসন্ধিতে মস্তিষ্কের বিকাশ এমনভাবে হয় যার ফলে নতুন কিছু করে দেখানো বা দেখার ইচ্ছে জেগে ওঠে। এর ফলেই কিছু কিছু কিশোর-কিশোরীর (সবার মধ্যে নয়) মধ্যে ঝুঁকিপূর্ণ কাজকর্মের প্রতি ঝোঁক জন্মায়। আবার একইসঙ্গে তাদের মধ্যে হঠকারিতা নিয়ন্ত্রণ করার মতো শক্তির বিকাশও হয়।
যোগাযোগের নিত্য–নতুন মাধ্যম ব্যবহারের প্রতি ঝোঁক
মোবাইল, ইন্টারনেট এবং সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে বন্ধুবান্ধবের সঙ্গে মেলামেশার ক্ষেত্রে এর প্রভাব পড়ে এই বয়ঃসন্ধির সময়।
ব্যবহারিক বদল:
বয়ঃসন্ধিকালের একজন ছেলে বা মেয়ের মস্তিষ্কের বিকাশের ক্ষেত্রে নানারকম পরিবর্তনের প্রক্রিয়া শুরু হয়। কৈশোরে মানুষের মস্তিষ্ক খুব উচ্চ পর্যায়ে কাজ করে। যেমন- বিমূর্ত চিন্তাভাবনা, সিদ্ধান্ত নেওয়া, জীবনের লক্ষ্য স্থির করা এবং মতামত দেওয়ার ক্ষমতা তৈরি হতে থাকে। তার সিদ্ধান্ত নেওয়ার দক্ষতা এই সময়ে ততটা বিকশিত না হলেও, সে কোনও একটা কাজের ফলাফল কী হতে পারে সে বিষয়ে বুঝতে ও শিখতে চেষ্টা করে। জীবনের লক্ষ্য স্থির করে নিয়ে এবং সেই লক্ষ্যের দিকে এগিয়ে যাওয়ার জন্য দীর্ঘমেয়াদি চিন্তাভাবনা শুরু করে, যেমন- নিজের পছন্দসই কেরিয়ার, শখ প্রভৃতি সম্পর্কে ভাবনাচিন্তা করতে থাকে।
বয়ঃসন্ধির শারীরিক সমস্যা
অন্তঃক্ষরা গ্রন্থি থেকে যে রাসায়নিক নিঃসৃত হয়, তা রক্তের মাধ্যমে দেহের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গে নানা বার্তা পৌঁছে দেয়। তার ফলেই খিদে পায়, ঘুম হয়, ত্বক নিটোল থাকে, মেজাজ ফুরফুরে লাগে, প্রজননক্ষমতা ঠিক থাকে। কিন্তু জীবনের নানা সন্ধিক্ষণে বা বড় অসুখে এই সব ক্ষরণ কম বা বেশি মাত্রায় রক্তে মেশে। অথবা নির্দিষ্ট অঙ্গে ঠিকঠাক পৌঁছয় না। ফলে কোন কাজটা কখন করতে হবে, শরীরের কলকব্জায় সেই নির্দেশ পৌঁছয় না। তখনই রোগে ধরে। বলা হয় হরমোন লেভেল ঠিক নেই। মেয়েদের হরমোনের ভারসাম্যের তারতম্যে বয়সের হেরফেরে নানা রকমের রোগ দেখা দেয়। এর মধ্যে পরিচিত হল ‘পলিসিস্টিক ওভারি সিনড্রোম বা পিওএস’। এটিকে কিশোরীবেলার রোগ বলে থাকেন চিকিৎসকরা। রোগী এ ক্ষেত্রে প্রতি মাসের বিশেষ দিনগুলোয় অনিয়ম টের পায়। কিছু দিনেই ওজন বাড়ে, ব্রন হয়। আবার হাতে, মুখে অবাঞ্ছিত রোম দেখা যায়। এই ধরনের উপসর্গের ভিত্তিতে রক্তপরীক্ষা ও রক্তকণার জৈব বিশ্লেষণ করে এবং আলট্রা সাউন্ড পরীক্ষার মাধ্যমে রোগের প্রকৃতি নির্ণয় করা হয়। তার পরে ওষুধ দিয়ে রোগ কমানোর চেষ্টা চলে।
মেয়েদের বয়স বাড়লে হরমোনের অন্যান্য অসুখ
গর্ভাশয় সদ্য কাজ করতে শুরু করলে হরমোনের যে রোগগুলি দেখা দেয়, সেগুলি পরে সেরে যায়। না সারলে, পরবর্তী কালে সন্তানধারণে সমস্যা হতে পারে। তারও চিকিৎসা আছে। হরমোনের গোলমালেই সিস্ট হয়। অধিকাংশ ক্ষেত্রে ওষুধেই কাজ দেয়। কখনও কখনও অস্ত্রোপচারের প্রয়োজন পড়ে। নতুন মায়ের চুল পড়া ছাড়াও মানসিক অবসাদ, অল্পেই কেঁদে ফেলার প্রবণতাও হরমোন ভারসাম্যের (hormonal balance) দোষে।
চল্লিশ বা পঞ্চাশ বছর বয়সি মহিলাদেরও হরমোনের অসুখ হয়। রাতে গরম লাগা, হঠাৎ ঘাম, ত্বক পাতলা হয়ে যাওয়া, কালো ছোপ, খিটখিটে মেজাজ ইত্যাদি দেখা দেয়। ওষুধ দিয়ে, ক্রিম লাগিয়ে সব সমস্যাই নিয়ন্ত্রণে আনা যায়। প্রয়োজনে হরমোন রিপ্লেসমেন্ট থেরাপি করা যায়। এক্ষেত্রে ক্যালশিয়ামযুক্ত খাবার ও ওষুধের পরিমাণ বাড়াতে হবে।
বয়ঃসন্ধির বিভিন্ন সমস্যায় চিকিৎসা এবং লাইফস্টাইল
বয়স ও উচ্চতা অনুযায়ী যদি ওজন যথাযথ থাকে, তবে হরমোনের ঝঞ্ঝাট চট করে বাঁধবে না। মেয়েদের ক্ষেত্রে যত সেন্টিমিটার উচ্চতা, তার থেকে ১০০ বাদ দিলে যা হয়, তত কিলোগ্রামই হল আদর্শ ওজন। অর্থাৎ ১৫৫ সেমি উচ্চতায় আদর্শ ওজন ৫৫ কিলোগ্রামের এ দিক ও দিক (৫২-৫৮ কিলোগ্রাম)। অনুরূপে ১৬৫ সেমি উচ্চতায় ওজনের লক্ষ্য রাখুন ৬৫ কেজির। হরমোনের সমস্যা দেখা দিলেই আগে ওজন কমানো এবং ডায়েটে নজর দিতে হবে। ছেলে-মেয়ে সবারই শারীরিক পরিশ্রম প্রয়োজন এই সময়ে। হরমোন নিঃসরণ নিয়ন্ত্রণে রাখতে কোমর টানটান রাখা দরকার।
নিয়মিত হরমোনের রিস্ক ফ্যাক্টরগুলি চেক-আপ করানো দরকার। রাসায়নিক দেওয়া বা প্রসেসড ফুড এড়িয়ে চলা উচিত। প্লাস্টিকের পাত্রে খাওয়া, বা তাতে গরম খাবার রেখে খাওয়া কিংবা খাবার গরম করায় রাশ টানা দরকার।
স্ট্রেসকে হারাতে হবে
এই বয়সেও কিন্তু স্ট্রেস দেখা যায় এবং তা মোটেই অবহেলা করা উচিত নয়। হরমোনের অসুখের কারণগুলির অন্যতম মানসিক অশান্তি। যে কোনও মারণ অসুখকে হঠাৎ ছ’গুণ বাড়িয়ে দেওয়ার সামর্থ্য রাখে স্ট্রেস। তাই মানসিক বিশ্রামের অবকাশ খুঁজতে হবে। হরমোন লেভেল নিয়ন্ত্রণ থাকলে শরীরও থাকবে সুস্থ ও মজবুত।
বয়ঃসন্ধির খাদ্যাভ্যাস (Hormone Balancing Diet)
অভিভাবকরা কীভাবে তৈরি করবেন ছেলে-মেয়ের খাদ্যাভ্যাস?
প্রয়োজনীয় পুষ্টিগুণ আছে এমন সব খাবার দিয়েই সাজাতে হবে আপনার সন্তানের খাবার থালা। সপ্তাহে অন্তত একদিন বাড়ির সবাই মিলে একসঙ্গে বসে খেতে পারেন। এতে আপনার কিশোর সন্তানটির মধ্যে সচেতনতা তৈরি হবে। খেয়াল রাখতে পারবেন তাঁর খাদ্যাভ্যাসের উপরও। আর তাঁদেরও বাড়ির খাবারের প্রতি আগ্রহ বাড়বে। তাঁরা বুঝতে পারবে বাড়িতে তৈরি খাবারের উপকারিতা।
আবার বাইরের খাবারের কিছু পদ বাড়িতেই রান্না করতে পারেন। কিশোর সন্তানটিকে রেস্তোরাঁতেও নিয়ে যেতে পারেন মাসে দু-একবার। এতে করে বাইরের খাবারের চাহিদাও মিটবে আবার মানসিকভাবে শান্তিও আসবে।
খাবারের সঠিক তালিকা (Hormone Balancing Food Chart)
বয়ঃসন্ধিকালের ছেলেদের জন্য প্রতিদিন ২ হাজার ২০০ থেকে ২ হাজার ৭০০ এবং মেয়েদের জন্য ১ হাজার ৮০০ থেকে ২ হাজার ২০০ কিলো ক্যালরি প্রয়োজন। ওজন বেশি হলে তেল ও চর্বির পরিমাণ কমিয়ে দিতে হবে। ওজন কম হলে তেল চর্বির পরিমাণ বাড়িয়ে দিতে হবে।
ব্রেকফাস্ট: দীর্ঘ একটা রাত না খেয়ে কাটে। তাই সকালের খাবার ভারী হওয়া প্রয়োজন। এ সময় সন্তানকে খেতে দিতে পারেন রুটি, পরোটা, সবজি, ডিম সেদ্ধ ইত্যাদি। সঙ্গে এক গ্লাস ফলের রস। পরিবর্তন হতে পারে একেক দিন একেক খাবারের।
দুপুরের খাবার: ভাতের সঙ্গে মাছ বা মাংস, সবজি, ঘন ডাল। স্যালাড রাখতেই হবে। আর ভাতের থেকে সবজি বেশি পরিমাণে খেতে দিতে হবে।
বিকেলের খাবার: বিকেলে ঘরে বানানো স্যান্ডউইচ, ফলের তৈরি কাস্টার্ড, লুচি, শিঙাড়া ইত্যাদি মুখরোচক খাবার দিতেই পারেন। কিন্তু অবশ্যই পরিমাণমতো। চা, কফির অভ্যেস না করানোই ভালো।
রাতের খাবার: বয়ঃসন্ধির ছেলে-মেয়ের রাতের খাবারটাও হতে হবে পরিপূর্ণ। মূল খাবার শেষে একটা মিষ্টিজাতীয় খাবার যোগ করতে পারেন। যেমন, পায়েস, মিষ্টি ইত্যাদি।
রাতে ঘুমানোর আগে দিতে পারেন এক গ্লাস দুধ। অনেকে আবার রাতে দুধ খেতে পারে না। সে ক্ষেত্রে সন্ধ্যায় অথবা সকালেও এটি খেতে দেওয়া যেতে পারে।
Comments are closed.