কালো টাকা, মদ, মাদক মিলে ২১ দিনে প্রায় ১৫০০ কোটির সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত গোটা দেশেঃ ১ নম্বরে গুজরাত, ৮ নম্বরে বাংলা
১০ ই মার্চ বিকেলে ভোটের দিনক্ষণ ঘোষণার পর কেটেছে ২১ দিন। এই সময়কালে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে পুলিশ সহ বিভিন্ন এজেন্সি বাজেয়াপ্ত করেছে বিপুল পরিমাণ কালো টাকা এবং হিসাব বহির্ভূত সম্পত্তি। নির্বাচন কমিশনের হিসেব অনুযায়ী, ১১ ই মার্চ থেকে ১ লা এপ্রিল পর্যন্ত, ৩ সপ্তাহেই সারা দেশে বাজেয়াপ্ত হয়েছে নগদ মিলে মোট ১৪৬০ কোটি টাকার হিসেব বহির্ভূত সম্পত্তি। যার মধ্যে রয়েছে কালো টাকা, গয়না, মদ, মাদক সহ বিভিন্ন ধরনের জিনিস। নির্বাচন শেষ হতে এখনও বাকি ৪৫ দিনেরও বেশি সময়। বাজেয়াপ্ত সম্পত্তির পরিমাণ কোথায় পৌঁছবে, তা ভেবেই কপালে চিন্তার ভাঁজ জাতীয় নির্বাচন কমিশনের।
এদেশে ভোটে রাজনৈতিক দলগুলি একদিকে যেমন প্রচারে ঝড় তোলে, তেমনই তাদের বিরুদ্ধে ভোটারদের প্রভাবিত করতে বিভিন্ন বেআইনি উপায় অবলম্বনের অভিযোগ উঠেছে বারবার। কোথাও ভোটের ঠিক আগের রাতে বসে যায় মাংস-ভাতের আসর, কোথাও ভোটবাক্স ভরাতে আশ্রয় নেওয়া হয় নগদ টাকা, সোনা-দানা বিলির কিংবা মদ খাওয়ানোর। নির্বাচন কমিশন এই ‘ভেট’ রুখতে তৎপর হলেও প্রায় প্রতিদিনই দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে বিপুল পরিমাণে কালো টাকা, গয়না এবং মদ-মাদক উদ্ধারের খবর আসছে। এই প্রেক্ষিতেই এবার বাজেয়াপ্ত হওয়া হিসেব বহির্ভূত সম্পত্তির খতিয়ান প্রকাশ করল নির্বাচন কমিশন। কমিশনের আধিকারিকদের বক্তব্য, ভোটারদের প্রভাবিত করতেই এত সব আয়োজন। কমিশনের আশঙ্কা, ভোট শুরু হলে তা আরও বাড়বে।
কমিশনের রিপোর্ট বলছে, গত ২১ দিনে সারা দেশ থেকে বাজেয়াপ্ত হয়েছে ১৪৬০ কোটি টাকারও বেশি হিসাব বহির্ভূত সম্পত্তি। যার মধ্যে কালো টাকাই রয়েছে ৩৪০ কোটি। সবচেয়ে বেশি উদ্ধার হয়েছে মাদক দ্রব্য। সারা দেশে তল্লাশি চালিয়ে ১৯ হাজার ৬০০ কেজিরও বেশি মাদক উদ্ধার হয়েছে, যার বাজার মূল্য ৬৯২ কোটি টাকা। এছাড়াও বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে ২৫৫ কোটি টাকা মূল্যের অলঙ্কার সামগ্রী।
নগদ, মাদক দ্রব্য, মদ, অলঙ্কার মিলিয়ে কমিশনের বাজেয়াপ্তের তালিকায় একেবারে এক নম্বরে রয়েছে গুজরাত। মোদীর রাজ্যে বাজেয়াপ্ত হওয়া মোট হিসাব বহির্ভূত সম্পত্তির পরিমাণ ৫০৯.৯২ কোটি টাকা। গুজরাতের বিভিন্ন জায়গা থেকে ১০০ কেজি মাদক দ্রব্য বাজেয়াপ্ত করেছে প্রশাসন, যার আনুমানিক বাজার মূল্য ৫০০ কোটি টাকা। তাৎপর্যপূর্ণভাবে মোদীর রাজ্যে বাজেয়াপ্ত হয়েছে ২.৩৭ লক্ষ লিটার মদ, যার বাজারমূল্য ৬.৫৪ কোটি টাকা। অথচ গুজরাতে মদ নিষিদ্ধ।
হিসাব বহির্ভূত সম্পত্তি বাজেয়াপ্তর তালিকায় গুজরাতের পরেই রয়েছে দক্ষিণের রাজ্য তামিলনাড়ু। সেখানে বাজেয়াপ্ত হওয়া মোট হিসাব বহির্ভূত সম্পদের পরিমাণ ২০৮.৫৫ কোটি টাকা। নির্বাচন ঘোষণার পর তিন সপ্তাহের মধ্যে সে রাজ্যে ধরা পড়েছে ১০৮.৭৫ কোটি কালো টাকা। ৭৩৮ কেজি গয়না, যার বাজার মূল্য ৯৩.৩৬ কোটি টাকা। তারপরেই রয়েছে আরেক দক্ষিণী রাজ্য অন্ধ্র প্রদেশ। সেখানে বাজেয়াপ্ত হওয়া মোট সম্পদের পরিমাণ ১৫৮.৬১ কোটি টাকা। বাজেয়াপ্ত হওয়া সম্পত্তির যে রাজ্যওয়াড়ি তালিকা কমিশন প্রকাশ করেছে, তাতে পশ্চিমবঙ্গ রয়েছে ৮ নম্বরে। এরাজ্য থেকে উদ্ধার হওয়া সম্পদের মোট পরিমাণ ৩৭.১৭ কোটি টাকা। তার মধ্যে রয়েছে ১২.৫৮ কোটি কালো টাকা এবং ১৪.৪২ কোটি টাকার গয়না। এমনকী ছোট রাজ্য পঞ্জাব থেকেও বাজেয়াপ্ত হয়েছে ১৪৪.৩৯ কোটি টাকার বেআইনি সম্পত্তি, তার মধ্যে ১১৩.২১ কোটি টাকার মাদক।
ভোট ঘোষণার মাত্র ৩ সপ্তাহের মধ্যেই বিপুল পরিমাণ হিসাব বহির্ভূত সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করলেও কমিশনকে এখন ভাবাচ্ছে অন্য একটি বিষয়। আর তা হল, কমিশনের নজর এড়িয়ে আরও কত কালো টাকা ঘুরছে ভোটের ভারতে? অতীত অভিজ্ঞতা থেকে তাঁরা জানেন, বাজেয়াপ্ত হওয়া সম্পদ হিম শৈলের চূড়া মাত্র। তাই স্বস্তিতে নেই নির্বাচন কমিশন। এই হারে কালো টাকা এবং হিসাব বহির্ভূত সম্পদ কী মাত্রায় ভোটকে প্রভাবিত করতে পারে তা ভেবেই চিন্তিত কমিশন।
Comments are closed.