ঠিক মত দুপুরের খাবার জুটতো না, না খেয়েই কাটতো দিন মাঝে মধ্যে! কঠিন পরিশ্রম করে গরীব ট্যাক্সি চালক এর ছেলে আজ IAS অফিসার
আমরা জানি যে কোনো কিছু পেতে গেলে তার জন্য কঠিন পরিশ্রম করে যেতে হয়। তবেই সাফল্য অর্জন করা সম্ভব হয়। ভয় পেয়ে সমস্যা থেকে মুখ ফিরিয়ে নিলে চলবে না, বরং সমস্যার সামনে দাড়িয়ে সমস্যার সমাধান করে যাওয়াই এক সফলতম মানুষের পরিচয় দিয়ে যায়। আজ ঠিক তেমন একজন ব্যাক্তির কথা জানব যিনি শুধু মাত্র নিজের কঠিন পরিশ্রমের জোরে নিজের স্বপ্নকে বাস্তবায়িত করেছে। তিনি হলেন আজহারউদ্দিন কাজী।
আজহারউদ্দিন মহারাষ্ট্রের বাসিন্দা। যিনি চরম দরিদ্রতাকে উপেক্ষা করে, নিজের জীবন সংগ্রাম চালিয়ে গেছেন। শুধু তাই নয় নিজের স্বপ্নকেও তিনি বাস্তবে পরিণত করেছেন। আজহারউদ্দিন অত্যন্ত দরিদ্র পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবা একজন ট্যাক্সি চালক ছিলেন। আজহারউদ্দিনরা মোট তিন ভাই ছিলেন। তার মা ছিলেন একজন গৃহিণী।
তাদের পরিবারে তার বাবাই একমাত্র আয় করতেন। তার মা খুব অল্প বয়েসে বিয়ে করে নেন যার জন্য লেখা পড়ায় আগ্রহ থাকা সত্বেও তিনি আর পড়াশুনা চালিয়ে যেতে পারেননি। কিন্তু তিনি তার বাচ্চাদের পড়াশুনায় যথেষ্ট উৎসাহ দিতেন। বাড়ির আর্থিক অবস্থা ভালো না থাকার জন্য তার মা তাদের একটি হিন্দি মিডিয়াম স্কুলে ভর্তি করে দেন। সেই স্কুল থেকে আজহারউদ্দিন পাশ করে ছিলেন। তাদের কাছে টাকা পয়সা না থাকার দরুন তিনি দশম শ্রেণী পর্যন্ত নিজের মায়ের কাছেই পড়াশোনা করতেন।
পরে তিনি স্নাতক পাশ করবার সাথে সাথে একটি প্রাইভেট কোম্পানিতে চাকরি পান। কিন্তু তাতেও তাদের পরিবারের আর্থিক অবস্থা ঠিক হচ্ছিল না। তাই তিনি সেই সময়, দিল্লি থেকে সিভিল সার্ভিস পরীক্ষা দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। আসলে, তিনি একটি অনুষ্ঠানে একজন IPS অফিসারের সাথে দেখা করেছিলেন, যা তার ওপর খুব প্রভাব ফেলেছিল এবং এই জন্যই তিনি সিভিল সার্ভিস পরীক্ষা দেওয়ার মন স্থির করেছিলেন। তারপর তিনি কোনোভাবে দিল্লি পৌঁছে, সেখানে একটি কোচিং ক্লাসে ভর্তি হয়ে সিভিল সার্ভিস এর প্রস্তুতি নিতে শুরু করেন।
২০১০ সালে, তিনি প্রথমবার ইউপিএসসি পরীক্ষা দিয়েছিলেন। কিন্তু তিনি তাতে ব্যর্থ হন। এরপর আবার ২০১১ সালে, তিনি ইউপিএসসি পরীক্ষা দিয়েছিলেন। কিন্তু সেবারও তিনি ব্যর্থ হন। পরপর দুবার ব্যর্থ হওয়ার জন্য, তিনি খুব হতাশ হয়ে পড়েছিলেন এবং মনে করেছিলেন যে, সিভিল সার্ভিসের ক্ষেত্রটি তার জন্যে নয়। এরপরে তিনি অন্য কিছু কাজ করার সিদ্ধান্ত নিলেন। তারপরে তিনি একটি সরকারি ব্যাংকের চাকরি পান, যেখানে তিনি টানা সাত বছর চাকরি করেছিলেন। এর ফলে তার পরিবারের আর্থিক অবস্থারও উন্নতি ঘটে এবং ভাইদের পড়াশোনাও সম্পন্ন হয়। আজহারউদ্দিন কাজ তো করছিলেন কিন্তু তার মনে কোনো শান্তি ছিল না। কেননা তার স্বপ্ন ছিল অন্যকিছু।
তাই তিনি আবার পরীক্ষা দেবেন বলে মনস্থির করেন এবং প্রস্তুতি শুরু করেন। কিন্তু তিনি চাকরির সাথে পরীক্ষার প্রস্তুতি নিতে পারছিলেন না। তাই জন্য তিনি চাকরি ছেড়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। প্রায় এক বছর প্রস্তুতি নেওয়ার পরে তিনি ইউপিএসসি পরীক্ষা দিয়েছিলেন। কিন্তু সেবারও তিনি ইন্টারভিউতে নির্বাচিত হতে পারেন নি। পরের বছর ২০১৯ সালে, অবশেষে তিনি ইউপিএসসি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। ২০২০ ব্যাচের IAS অফিসার হন। এই ভাবে আজহারউদ্দিন কঠোর সংগ্রাম করে নিজের স্বপ্ন পূরণ করেন। তিনি বলেন মন দিয়ে চেষ্টা করলে সফলতা ঠিক আসবে।
Comments are closed.