‘মাওবাদী নেতা গণপতির সঙ্গে যোগাযোগ ছিল ভারভারা রাওয়ের’, ভীমা কোরেগাঁও মামলার চার্জশিটে গণপতির নাম যুক্ত করল পুণে পুলিশ
ভীমা কোরেগাঁও মামলায় অতিরিক্ত চার্জশিটে এবার যুক্ত হল সিপিআই মাওবাদীর সদ্য প্রাক্তন সাধারণ সম্পাদক গণপতির নাম। গত বৃহস্পতিবার পুণের স্পেশাল ইউএপিএ আদালতে পুণে পুলিশ যে অতিরিক্ত চার্জশিট পেশ করেছে, তাতে গণপতি ছাড়াও নাম রয়েছে কবি ও সমাজকর্মী ভারভারা রাও, মানবাধিকার কর্মী সুধা ভরদ্বাজ, অরুণ ফেরেইরা, ভার্নন গঞ্জালভেসের। নেই গৌতম নওলাখার নাম।
গত বছর ৭ ই নভেম্বর শীর্ষ মাওবাদী নেতা মুপ্পালা লক্ষ্মণ রাও ওরফে গণপতি সিপিআই মাওবাদীদের সাধারণ সম্পাদক পদ থেকে অব্যাহতি নিয়েছেন। পুণে পুলিশের দাবি, গণপতিকে সঙ্গে নিয়ে কবি ও সমাজকর্মী ভারভারা রাও সহ বাকিরা মাওবাদীদের ঘোষিত লক্ষ্য অর্জনে প্রত্যক্ষভাবে যুক্ত ছিলেন।
অতিরিক্ত দায়রা বিচারক (বিশেষ বিচারক) কিশোর ভাদানের এজলাসে পেশ করা ১৮৩৭ পাতার চার্জশিটে মামলার তদন্তকারী অফিসার পুণে পুলিশের এসিপি শিবাজি পওয়ার উল্লেখ করেছেন, অভিযোগ আনা হয়েছে মূলত ইলেক্ট্রনিক এভিডেন্সের ভিত্তিতে।
পুণে পুলিশের জয়েন্ট কমিশনার (আইন শৃঙ্খলা) শিবাজি বোডখের সঙ্গে thebengalstory.com এর পক্ষ থেকে ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘তদন্তে জানা গিয়েছে, ভারভারা রাও সরাসরি গণপতির সঙ্গে একাধিকবার কথা বলেছেন। শুধু তাই নয়, ভীমা কোরেগাঁও ছাড়াও দেশের বিভিন্ন জায়গায় নিষিদ্ধ সংগঠন মাওবাদীদের ভাবধারা ও মতাদর্শ জন আন্দোলনের মাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়া নিয়েও দু’জনের কথা হয়। ভারভারা রাও যেহেতু সক্রিয়ভাবে মাওবাদীদের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন এবং এলগার পরিষদের অনুষ্ঠান নিয়ে দু’জনের বিশদে মত বিনিময় হয়েছে, তাই গণপতির নাম চার্জশিটে যুক্ত করা হয়েছে।’
পুণে পুলিশের দাবি, কবি ও সমাজকর্মী ভারভারা রাও এবং আইনজীবী সুরেন্দ্র গ্যাডলিং, এই দু’জন নিষিদ্ধ মাওবাদী সংগঠনের সঙ্গে নিবিড় যোগাযোগ রেখে তাদের কাছে নিরাপত্তা বাহিনী সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাচার করেছেন। যে তথ্যের ভিত্তিতে মাওবাদীরা নিরাপত্তা বাহিনীর উপর ভয়ঙ্কর আক্রমণ করতে পেরেছে বলে চার্জশিটে উল্লেখ করা হয়েছে। পাশাপাশি মাওবাদীদের হয়ে টাকা জোগাড়ের অভিযোগও রয়েছে ভারভারা রাওয়ের বিরুদ্ধে। চার্জশিটে ভারভারাকে সিনিয়র মাওবাদী নেতা হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে।
চার্জশিটে সরাসরি অভিযোগ আনা হয়েছে কবি ও সমাজকর্মী ভারভারা রাওয়ের বিরুদ্ধেই। গত ৪৫ বছরে হায়দরাবাদের বাসিন্দা ভারভারার বিরুদ্ধে নকশাল-মাওবাদী যোগের অভিযোগে অন্তত ২৫ টি মামলা হয়েছে। যদিও কোনও মামলাতেই তাঁর মাওবাদী যোগ প্রমাণ করা যায়নি।
মানবাধিকার কর্মী অরুণ ফেরেইরা, ভার্নন গঞ্জালভেস এবং সুধা ভরদ্বাজের বিরুদ্ধেও নিষিদ্ধ সিপিআই মাওবাদী-র হয়ে কর্মী ও সদস্য নিয়োগের অভিযোগ আনা হয়েছে চার্জশিটে। যদিও এই মামলায় অগাস্টে গ্রেফতার হওয়া এবং তারপর দিল্লি হাইকোর্টের নির্দেশে মুক্ত, সমাজকর্মী গৌতম নওলাখার নাম চার্জশিটে নেই।
গত বছর নভেম্বরে পুণে পুলিশ ৮ ই জুন গ্রেফতার হওয়া ৫ জন সহ মোট ১০ জনের বিরুদ্ধে মাও-যোগের অভিযোগে প্রথম চার্জশিট পেশ করে। পুলিশের বক্তব্য অনুযায়ী, যা ২০১৮ সালের পয়লা জানুয়ারি ভীমা কোরেগাঁওতে হিংসায় মদত যুগিয়েছিল।
২০১৭ সালের ৩১ শে ডিসেম্বর পুণের শানিওয়ারওয়াডায় এলগার পরিষদের সমাবেশ আয়োজিত হয়। তার ঠিক একদিন পর ১৮১৮-র ভীমা কোরেগাঁও যুদ্ধের ২০০ বছর পূর্তির উৎসবে যোগ দিতে ভীমা কোরেগাঁও গিয়েছিলেন বিশাল সংখ্যক দলিত, আদিবাসী মানুষ।
অতিরিক্ত চার্জশিটে আরও উল্লেখ করা হয়েছে, পুণে পুলিশ সমাজকর্মী রোনা উইলসনের দিল্লির বাড়িতে তল্লাশি চালিয়ে ‘বর্তমান পরিস্থিতি এবং আমাদের কর্তব্য’ নামে একটি ডকুমেন্ট উদ্ধার করে। নিষিদ্ধ সিপিআই মাওবাদী-র কেন্দ্রীয় কমিটি একই শিরোনামে একটি ডকুমেন্ট তার সদস্যদের মধ্যে বিলি করেছিল। এই ডকুমেন্টে ব্রাহ্মণ্যবাদের বিরুদ্ধে লড়তে দলিত ও আদিবাসী সহ বৃহত্তর জনগোষ্ঠীকে একজোট করার কথা বলা হয়েছে। সেই ডকুমেন্টের ১৬ নম্বর পাতায় এ প্রসঙ্গে হিংসাত্মক কার্যকলাপ সম্বন্ধেও লেখা রয়েছে বলে চার্জশিটে উল্লেখ।
ভীমা কোরেগাঁও যুদ্ধের ২০০ বছর পূর্তি উপলক্ষ্যে আয়োজিত এলগার পরিষদে আম্বেডকরপন্থীদের সভা, কীভাবে রাত পোহাতেই জাতি সংঘর্ষে পরিণত হল তা নিয়ে প্রশ্ন তুলছে বিভিন্ন মহল। চার্জশিটে তার উত্তর নেই। চার্জশিটে নেপালের মাওবাদীদের সঙ্গে গোপন চুক্তি করে অস্ত্র আমদানির অভিযোগ করা হলেও, কেন সেদিন ভীমা কোরেগাঁওতে আগত মানুষদের উপর বিভিন্ন বাড়ির ছাদ থেকে পাথর, ইট দিয়ে হামলা হল তাও মেলাতে পারছেন না সমাজকর্মীদের একাংশ। যদিও প্রথম চার্জশিটে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে হত্যার ষড়যন্ত্রের কথা থাকলেও অতিরিক্ত চার্জশিটে তার কোনও উল্লেখ নেই।
Comments are closed.