লাদাখের তিনটি এলাকা থেকে পিছু হঠছে চিনা সেনা, পরিস্থিতির ওপর নজর রাখছে ভারত

সামরিক এবং কূটনৈতিক স্তরে আলোচনার শর্ত মেনে পূর্ব লাদাখের তিনটি এলাকায় বৃহস্পতিবার চিনা ফৌজ পিছু হটছে বলে সরকারি সূত্রে খবর। কিন্তু প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখার (এলএএসি) অন্য কিছু অংশে টানাপড়েন চলছে এখনও। পিপলস লিবারেশন আর্মি প্রথম দফার সমঝোতার শর্ত মেনে পূর্ব লাদাখের তিনটি এলাকা থেকে সরলেও পরিস্থিতির উপর কড়া নজর রাখছে ভারতীয় সেনা। জানা যাচ্ছে, পূর্ব লাদাখে মুখোমুখি অবস্থান থেকে সেনা পিছনো বা ডিসএনগেজমেন্ট ধীর গতিতে চলছে। হট স্প্রিং, গালওয়ানের পর ফিঙ্গার এরিয়া থেকেও সরছে চিনা সেনা।
চিনা সেনাবাহিনী ও যানগুলি ফিঙ্গার ফোর বেস থেকে ফিঙ্গার ফাইভের দিকে কিছুটা ফিরে গেছে বলে মনে করা হচ্ছে। তবে গত দু’মাস ধরে সেখানে কয়েক ডজন প্রতিরক্ষামূলক পরিকাঠামো নির্মাণ হয়েছিল এমন রিজলাইনটি এখনও দখল করে আছে। ওয়াকিবহাল মহলের মতে, রিজলাইন খালি করাটাই হবে পরবর্তী ডিসএনগেজমেন্ট প্রসেস। এখনও সেখানে সেনা আধিক্য আছে বলেই ভারতীয় সেনা সূত্রে খবর।
প্রসঙ্গত, লাদাখের চুসুল সীমান্ত লাগোয়া মল্ডোতে গত ৩০ জুন কোর কমান্ডার স্তরের বৈঠকে ‘মুখোমুখি অবস্থান থেকে সেনা পিছনো’ (ডিসএনগেজমেন্ট) এবং ‘সেনা সংখ্যা কমানো’ (ডি-এসক্যালেশন)-র বিষয়ে আলোচনা হয়েছিল। সেনা সূত্রের খবর, সেই আলোচনার পর ২ জুলাই থেকে সেনা কমানোর প্রক্রিয়া শুরু হয়। মে মাসে এলএসি পেরিয়ে ভারতীয় ভূখণ্ডে ঢুকে গালওয়ান নদীখাতের উপর পাথর ভেঙে রাস্তা বানিয়েছিল চিন। আর্থ মুভার এনে নদীর উপর বানানো হয় কালভার্ট।
ফিঙ্গার ফোর থেকে দূরে সরে যাওয়া ডিএসক্যালেশনের দিকে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ বটেই, তবে ফিঙ্গার সিক্সে এখনও চিনা সেনার জমায়েতে চিন্তা বাড়ছে। ওয়াকিবহাল মনে করছে, ডিএসক্যালেশন প্রক্রিয়া এখনও অনেক বাকি।
প্রসঙ্গত, গত ৫ জুলাই জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত ডোভাল এবং চিনা বিদেশমন্ত্রী তথা স্টেট কাউন্সিলর ওয়াং ইর বৈঠকে লাদাখে পর্যায়ক্রমে ডিসএনগেজমেন্ট এবং ডি-এসক্যালেশনের বিষয়ে খুঁটিনাটি স্থির হয়। কিন্তু ভারতের বিবৃতিতে সেনা পিছনোর উল্লেখ থাকলেও চিনা বিবৃতিতে প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখা থেকে লাল ফৌজের বিপুল সমাবেশ কমানোর কোনও কথা থাকায় বিতর্ক তৈরি হয়েছে। প্রশ্ন উঠছে, চিন তাদের, দু’পা এগিয়ে এক পা পিছোনোর নীতি গালওয়ানেও নিয়েছে কিনা। নিজের ভূখণ্ডেই নিজেদের টহলের অধিকার হারিয়ে কেন বাফার জোন গড়ে ভারতীয় সেনাকে পিছু হঠতে হবে, সেই প্রশ্নও উঠছে।
এদিকে গালওয়ান উপত্যকার ১৫ জুনের সংঘর্ষস্থল পেট্রোলিং পয়েন্ট-১৪ থেকে পিপলস লিবারেশন আর্মির পিছু হটার ‘প্রমাণ’ উপগ্রহ চিত্রে মিলেছে ইতিমধ্যেই। অদূরের পেট্রোলিং পয়েন্ট-১৫ (হট স্প্রিং) এবং গোগরার পেট্রোলিং পয়েন্ট-১৭এ থেকেও কিছুটা পিছনে সরেছে তারা। সেনার একটি সূত্রে খবর, ৩০ জুনের পরে ওই তিন এলাকা থেকে পাঁচটি ছাউনি সরিয়েছে চিনা ফৌজ। কিন্তু তাদের বেশ কিছু নির্মাণ ও ছাউনি এখনও রয়েছে। ফলে পরিস্থিতির উপর নজরদারি চালাচ্ছে ভারতীয় সেনা। তবে আপাতত ওই তিন এলাকায় লালফৌজের সমাবেশ এলএসি-র ওপারে রয়েছে বলেই উপগ্রহ চিত্রে ধরা পড়েছে।
সেনার এক আধিকারিক জানান, দ্রুত সামরিক যানবাহন যাতায়াতের উদ্দেশ্যে ওই চিনা ফৌজ ও রাস্তায় অ্যাসফল্টের প্রলেপ দিয়েছে। চিনা বাহিনীর আনা কিছু ছাউনিও রয়ে গিয়েছে। সেগুলি থেকে গেলে বুঝতে হবে, পিছু হটা নয় বরং শীতের সময় পাকাপাকি ভাবে ওখানে ঘাঁটি গেড়ে বসার মতলব রয়েছে ওদের।
প্যাংগং লেকের উত্তরের ফিঙ্গার এরিয়া-৮-এর তিনটি পয়েন্ট থেকে চিন সেনা কিছুটা পিছিয়ে গিয়েছে। কিন্তু ফিঙ্গার এরিয়া ৫ থেকে ৮ এখনও তাদের নিয়ন্ত্রণে। সেখানে বাঙ্কার, পিলবক্স, নজরদারি টাওয়ার বানিয়েছে তারা। অথচ মে মাসের আগে ওই এলাকাগুলিতে নিয়মিত টহল দিত ভারতীয় সেনা। দৌলত বেগ ওল্ডি বিমানঘাঁটির অদূরে দেপসাং এলাকায় ঢুকে আসা লালফৌজ ভারতীয় সেনার এলএসি বরাবর টহলদারিতে বাধা দিচ্ছে বলেও অভিযোগ।
এলএসি-তে উত্তেজনা কমানোর উদ্দেশ্যে দু’দেশের ‘ওয়ার্কিং মেকানিজম অন কোঅর্ডিনেশন অ্যান্ড কনসাল্টেশন’ বৈঠক হওয়ার কথা আছে। পরবর্তী পর্যায়ে ফের হবে সামরিক স্তরের আলোচনা। সেখানে আবার ডিসএনগেজমেন্ট এবং ডি-এসক্যালেশন নিয়ে আলোচনায় ভারতের তরফে বিষয়গুলি তোলা হতে পারে। তবে সব মিলিয়ে পুরো প্রক্রিয়া অনেকটাই সময়সাপেক্ষ বলে মনে করা হচ্ছে।

Comments are closed.