ভারতের প্রথম সম্ভাব্য COVID-19 Vaccine COVAXIN

দেশ জুড়ে করোনাভাইরাসের দাপট অব্যাহত। ভারতে মোট সংক্রমিতের সংখ্যা সাড়ে পাঁচ লক্ষ ছাড়িয়ে গিয়েছে। এই পরিস্থিতিতে ভারতে তৈরি প্রথম করোনাভাইরাসের ভ্যাকসিনের হিউম্যান ক্লিনিকাল ট্রায়াল শুরু হতে চলেছে। আইসিএমআরের সঙ্গে হাত মিলিয়ে হায়দরাবাদের Bharat Biotech COVAXIN নামে কোভিড ভ্যাকসিনটি তৈরি করেছে। এই ভ্যাকসিন ফেজ ওয়ান ও টুয়ের হিউম্যান ফিজিকাল ট্রায়ালের জন্য ড্রাগ কন্ট্রোলার জেনারেল অফ ইন্ডিয়া (DCGI) এর ছাড়পত্র পেয়েছে। জুলাই মাসেই দেশজুড়ে শুরু হচ্ছে এই ট্রায়াল। সফল হলে তা হবে দেশ তথা বিশ্বের জন্য একটি অত্যন্ত উল্লেখযোগ্য খবর।

 

বিভিন্ন দেশে করোনার ভ্যাকসিনের প্রস্তুতি

প্রাণঘাতী করোনা মোকাবিলায় বিশ্বব্যাপী ১৪০ টির বেশি ভ্যাকসিন নিয়ে কাজ চলছে। এর মধ্যে অন্তত ১৩ টি এ পর্যন্ত ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালে যেতে সমর্থ হয়েছে। তবে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO) জানিয়েছে, ভ্যাকসিন দৌড়ে এগিয়ে রয়েছে ইংল্যান্ডের অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটির গবেষকদের তৈরি করা করোনা টিকা। এই ভ্যাকসিনের ৪০ কোটি ডোজ প্রি-অর্ডার করতে একটি প্রাথমিক চুক্তি করতে চলেছে ইউরোপের চার দেশ। গত সপ্তাহে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা জানায়, করোনা ভ্যাকসিন তৈরিতে অনেকটা এগিয়েছে ব্রিটিশ সংস্থা অ্যাস্ট্রাজেনেকা-ও।

এ ছাড়া আমেরিকান সংস্থা মডার্না-র তৈরি করোনার ভ্যাকসিনের তৃতীয় পর্যায়ের ক্লিনিকাল ট্রায়াল শুরু হতে চলেছে আগামী জুলাই মাসের মাঝামাঝি। জুনের গোড়ায় আর এক মার্কিন সংস্থা জিলিড সায়েন্সেস জানিয়েছিল, তীব্র করোনা সংক্রমণ দমনের জন্য তাদের তৈরি জীবাণুনাশক টিকা রেমডেসিভার-এর ৫ দিনের ট্রায়াল সফল হয়েছে। এছাড়াও বিভিন্ন দেশে করোনা প্রতিষেধক তৈরির কাজ বিভিন্ন পর্যায়ে রয়েছে।

 

ভারতে তৈরি করোনা ভ্যাকসিন (Coronavirus Vaccine in India)

corona vaccine human trial

 

গোটা বিশ্বের ওষুধ নির্মাতারা কোভিড ১৯ এর প্রতিষেধক আনতে দিন রাত এক করে গবেষণা করে চলেছেন। ভ্যাকসিন তৈরিতে মন দিয়েছে বিশ্বের তাবড় বিশ্ববিদ্যালয়, গবেষণাগার। গোটা বিশ্বে ভ্যাকসিন ও অন্যান্য জেনেরিক ওষুধের অন্যতম বৃহত্তম Indian Pharmaceutical Industry ও ব্যবস্থা  চলছে তেমনই একাধিক গবেষণা। বিভিন্ন ওষুধ নিয়ে চলছে পরীক্ষা। মে মাসে সরকার জানিয়েছিল দেশে অন্তত ৩০ টি গোষ্ঠী পৃথক পৃথকভাবে ভ্যাকসিনের উপর কাজ করছে। এক বছরের মধ্যে ভ্যাকসিন তৈরি করে ফেলার লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে।

এই প্রক্রিয়ার অঙ্গ হিসেবেই হায়দরাবাদে চলছে COVID-19 Vaccine COVAXIN নিয়ে গবেষণা। যা প্রাথমিকতার গণ্ডি পেরিয়ে হিউম্যান ট্রায়ালের পর্যায়ে উন্নীত হচ্ছে।

ভারতে তৈরি প্রথম করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯) টিকা কোভাক্সিনের প্রথম ও দ্বিতীয় পর্বের ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালে সম্মতি দিয়েছে ড্রাগ কন্ট্রোলার জেনারেল অব ইন্ডিয়া।

আগামী জুলাইতে শুরু হবে ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল।

আইসিএমআর-এর সঙ্গে যৌথ প্রচেষ্টায় এই ভ্যাকসিন তৈরি করেছে হায়দরাবাদের ভারত বায়োটেক।

এরই মধ্যে এই টিকার কার্যকারিতা প্রমাণিত হয়েছে বলে জানিয়ে সংবাদ প্রকাশ করেছে ইংরেজি দৈনিক দ্য হিন্দুস্তান টাইমস। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আইসিএমআর-এর সঙ্গে যৌথ প্রচেষ্টায় এই ভ্যাকসিন তৈরি করেছে হায়দরাবাদের ভারত বায়োটেক। সংক্রামক সার্স-কোভ-২ ভাইরাস থেকে তৈরি করা এই টিকা করোনা সংক্রমণ থেকে যথেষ্ট পরিমাণে নিরাপত্তা দিতে এবং মানব দেহে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা গড়ে তুলতে সক্ষম।

পুনের ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ ভাইরোলজিও (এনআইভি) হাত মিলিয়েছে Corona Vaccine তৈরির কাজে। এনআইভি করোনার জীবাণু পৃথক করে তা ভারত বায়োটেকে পাঠায় টিকা তৈরির জন্য। পরীক্ষামূলকভাবে টিকা তৈরি হয়েছে, আগামী মাস থেকে মানব শরীরে যে পরীক্ষা শুরু হবে, তাতে যুক্ত করা হবে দেশের নানা প্রান্তের নানা বয়সের স্বাস্থ্যবান ব্যক্তিদের। তাতে দেখা হবে, এই টিকা করোনার বিরুদ্ধে তাঁদের শরীরে প্রতিরোধ ক্ষমতা গড়তে পারছে কিনা।

পরীক্ষা সফল হলে এ বছরের শেষে শুরু হবে তৃতীয় পর্যায়ের ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল। পরীক্ষা চলবে কয়েক হাজার নাগরিকের ওপর। তাতেও যদি কোভাক্সিন পাশ করে, তখন দেখা হবে, এর কোনও পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া আছে কিনা। এরপর আসবে ডিজিসিআই-এর পূর্ণ অনুমোদনের প্রশ্ন।

অর্থাৎ প্রথম ও দ্বিতীয় পর্যায়ের ট্রায়ালে কম সংখ্যক মানুষের উপর নয়া টিকা প্রয়োগ করা হবে। তার ফলের উপর নির্ভর করে তৃতীয় পর্যায়ের ভ্যাকসিন প্রয়োগ করা হবে বিপুল সংখ্যক মানুষের উপর। যাতে প্রচুর মানুষ এই ভ্যাকসিন নিলে তার ফল কী হয় তা আগেভাগেই জানা সম্ভব হয়।

 

ভারত বায়োটেক (Bharat Biotech)

এই দেশীয় বায়োটেকনোলজি সংস্থার প্রতিষ্ঠাতার নাম বিজ্ঞানী কৃষ্ণ এল্লা। সংস্থার হেডকোয়ার্টার হায়দরাবাদে। ভারত তো বটেই এশিয়া মহাদেশের মধ্যে অন্যতম বড় বায়োটেক সংস্থার নাম ভারত বায়োটেক। এটাই ভারতের প্রথম বায়ো-ফার্মা সংস্থা যা কোরিয়ান ফুড অ্যান্ড ড্রাগস অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (KFDA) দ্বারা নিরীক্ষিত ও অনুমোদিত। ইকো-সেফ প্রটোকল মেনে ওষুধ তৈরিতে বিশেষ নাম রয়েছে ভারত বায়োটেকের।

 

ভারত বায়োটেকের তৈরি কিছু বিশেষ ওষুধ

Indian coronavirus vaccine

 

২০০৭ সালে দেশে প্রথম দেশীয়ভাবে হেমোফিলাস ইনফ্লুয়েঞ্জা টাইপ বি (এইচআইবি) ভ্যাকসিন তৈরি করে ভারত বায়োটেক। প্রতিষেধকের নাম BioHib।

২০১০ সালে এ দেশে প্রথম সেল বেসড এইচ-১এন-১ 1 (হিউম্যান অ্যাক্টিভেটেড ইনফ্লুয়েঞ্জা এ ভাইরাস) সোয়াইন ফ্লু ভ্যাকসিন HNVAC® লঞ্চ করে ভারত বায়োটেক।

২০১২ সালে আক্রমণাত্মক নন-টাইফয়েডাল সালমোনেলা (আইএনটিএস) এর বিরুদ্ধে জীবন রক্ষাকারী কনজুগেট ভ্যাকসিনের ক্লিনিকাল বিকাশের জন্য ভারত বায়োটেক ও ইউনিভার্সিটি অফ মেরিল্যান্ড যৌথভাবে ওয়েলকাম ট্রাস্টের ৪ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের ‘স্ট্র্যাটেজিক ট্রান্সলেশন অ্যাওয়ার্ড’ পায়। এছাড়াও বহু কঠিন অসুখের টিকা ও ওষুধ তৈরি ও গবেষণায় পথিকৃৎ ভারত বায়োটেক।

এর আগে রামদেবের পতঞ্জলি করোনা নিরাময়ের ওষুধ করোনিল এনেছিল বলে দাবি করে। কিন্তু দেখা যায় সেই ওষুধের অনুমতি সরকারি কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে নেওয়া হয়নি। রামদেবের করোনা নিরাময়ের ওষুধের বিজ্ঞাপনের উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করে কেন্দ্রের আয়ুষ মন্ত্রক। প্রশ্ন ওঠে, সর্দি কাশির ওষুধের লাইসেন্স নিয়ে কীভাবে করোনা নিরাময়ের ওষুধ বিক্রি করেন রামদেব? রামদেব ও তাঁর সঙ্গীদের বিরুদ্ধে দায়ের হয়েছে এফআইআর।

তবে, ভারত বায়োটেকের তৈরি করোনা প্রতিষেধক COVAXIN আশা জোগাচ্ছে দেশের মানুষকে।

Comments are closed.