অতলে অর্থনীতি। চলতি আর্থিক বর্ষের প্রথম ত্রৈমাসিকে দেশের জিডিপি সঙ্কুচিত হল ২৩.৯ শতাংশ। জিডিপির এ হেন সঙ্কোচন স্বাধীন ভারতের গত ৪০ বছরের ইতিহাসে এই প্রথম।
করোনা সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়া রুখতে মার্চের শেষদিকে লকডাউন জারি করে মোদী সরকার। তারপর এপ্রিলে শুরু হয়েছে নয়া অর্থবর্ষ। গোটা এপ্রিল মাস, মে এবং জুন মাসের একাংশ জুড়ে গোটা দেশে বন্ধ ছিল সমস্তরকম কাজকর্ম। ঘরবন্দি হয়ে থাকতে বাধ্য হয়েছিল ভারত। তাই আশঙ্কা ছিল জিডিপি সঙ্কুচিত হতে পারে। অগাস্টের শেষদিন প্রকাশিত আর্থিক বৃত্তান্তে দেখা গেল, আশঙ্কা ছাপিয়ে ভারতের অর্থনীতি এপ্রিল, মে এবং জুন মাসে সঙ্কুচিত হয়েছে প্রায় ২৪ শতাংশ। অর্থাৎ গত ১ বছরে জিডিপির প্রায় এক চতুর্থাংশ স্রেফ উবে গিয়েছে।
কদিন আগেই দেশের অর্থমন্ত্রী করোনা মহামারিকে দৈব দুর্বিপাকের সঙ্গে তুলনা করেছিলেন। তাঁর আশঙ্কা ছিল এই পরিস্থিতিতে অর্থনীতির সঙ্কোচন হতে পারে। ফল বেরোলে দেখা গেল, দেশের অর্থনীতি প্রকৃত অর্থেই অতলের পথে রওনা দিয়েছে। শুধু কি জিডিপি, প্রধান পরিকাঠামো ক্ষেত্রেও ব্যাপক সঙ্কোচন লক্ষ্য করা গিয়েছে।
আশার আলো কেবলমাত্র কৃষিক্ষেত্র। যা একমাত্র বৃদ্ধির গতি বজায় রেখেছে। কৃষি ক্ষেত্রে বৃদ্ধির হার ৩.৪ শতাংশ। ২০১৯-২০ অর্থবর্ষের প্রথম তিন মাসে যা ছিল ৩ শতাংশ।
এবার আসুন এক নজরে দেখে নেওয়া যাক, কোন ক্ষেত্রের কেমন পারফর্মেন্স।
ম্যানুফ্যাকচারিং বা উৎপাদন শিল্পে সঙ্কোচন ৩৯.৩ শতাংশ, গত অর্থবর্ষের প্রথম ত্রৈমাসিকে যা ছিল ৩ শতাংশ বৃদ্ধি।
খনি শিল্পে সঙ্কোচন ২৩.৩ শতাংশ। গত অর্থবর্ষের প্রথম তিন মাসে যা ছিল ৪.৭ শতাংশ বৃদ্ধি।
কনস্ট্রাকশন বা নির্মাণ শিল্পে প্রথম ত্রৈমাসিকে সঙ্কোচন ৫০.৩ শতাংশ। গত অর্থবর্ষের প্রথম ত্রৈমাসিকে তা ছিল ৫.২ শতাংশ বৃদ্ধি।
বিদ্যুৎ ও গ্যাস উৎপাদন ও বিপণন ক্ষেত্রে সঙ্কোচন ৭ শতাংশ। গত অর্থবর্ষে বৃদ্ধি হয়েছিল ৮.৮ শতাংশ।
ব্যবসা, হোটেল ও পরিবহণ শিল্পে এই অর্থবর্ষের প্রথম ত্রৈমাসিকে সঙ্কোচন ৪৭ শতাংশ। যা গত বছর এই সময় বৃদ্ধি পেয়েছিল ৩.৫ শতাংশ।
রিয়্যাল এস্টেট ও অর্থনৈতিক কাজকর্মের ক্ষেত্রে সঙ্কোচনের পরিমাণ ৫.৩ শতাংশ। গত বছর একই সময় এই ক্ষেত্রে বৃদ্ধি হয়েছিল ৬ শতাংশ।
সরকারি চাকরি-কাজের ক্ষেত্রেও ব্যাপক সঙ্কোচন, ১০.৩ শতাংশ। গত অর্থ বছরের এই সময় যা বৃদ্ধি পেয়েছিল ৭.৭ শতাংশ।
সবমিলিয়ে গত ৪০ বছরে এই প্রথম জিডিপির সঙ্কোচন হল। সরকারি অর্থনীতিবিদদের একাংশের অবশ্য দাবি, আনলক পর্বে অবস্থা বদলাবে। কিন্তু আটটি প্রধান পরিকাঠামো ক্ষেত্রের মধ্যে একমাত্র ভালো পারফর্মেন্স কৃষির। বাকি সমস্ত ক্ষেত্রে জুলাই মাসেও সঙ্কোচন অব্যাহত। এবার প্রশ্ন হল, উন্নয়নের রথে সওয়ার নিউ ইন্ডিয়া কৃষিক্ষেত্রে জোর দিয়ে সঙ্কোচনের অন্ধকার কুঠুরি থেকে বেরোবার পথ খুঁজবে, নাকি এখনকার মতোই কৃষি থাকবে পিছনের সারিতে।
Comments are closed.