পুরভোট নিয়ে রাজ্য নির্বাচন কমিশনার সৌরভ দাসের সঙ্গে বৃহস্পতিবার প্রায় এক ঘণ্টা বৈঠক করলেন রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড়। গত সোমবার রাজ্যপাল ট্যুইটে লেখেন, তিনি পুরভোটের বিষয়টি বোঝার জন্য কমিশনারের সঙ্গে কথা বলতে চান। ট্যুইটে আরও লেখা ছিল, ভারতীয় সংবিধানের ২৪৩ কে ধারা অনুযায়ী পুরভোট পরিচালনা এবং নিয়ন্ত্রণ করে সাংবিধানিক সংস্থা কমিশন। ওই ট্যুইটে রাজ্যপাল ২৭ ফেব্রুয়ারি রাজ্য নির্বাচন কমিশনারের সঙ্গে আলোচনায় বসার কথা জানান। সেইমতো এদিন রাজভবনে বেলা সাড়ে এগারোটা নাগাদ আসেন নির্বাচন কমিশনার সৌরভ দাস।
সুত্রের খবর, পুরভোট সুষ্ঠু ভাবে করার জন্য কমিশন কী কী ব্যবস্থা নিতে চলেছে, রাজ্যপাল তার বিস্তারিত তথ্য জানতে চান কমিশনারের কাছে। রাজ্যপাল কমিশনারকে বলেন, এ বারের পুরভোট নিয়ে যেন কোনও অভিযোগ না ওঠে, সে ব্যাপারে কমিশনকে সচেষ্ট হতে হবে। সংবিধান মেনে কমিশনকে কাজ করতে হবে। এই প্রসঙ্গেই তিনি কমিশনারকে বিগত পুরভোট এবং পঞ্চায়েত ভোটে হিংসার কথা মনে করিয়ে দেন। কয়েক দিন আগে রাজ্যপাল হিংসা ত্যাগ করে পুরভোট সুনিশ্চিত করার জন্য আমজনতার কাছে আর্জি জানান। শিলিগুড়িতে তিনি এক সাংবাদিক বৈঠকে রাজ্যের পুলিশ ও আমলাদের নিরপেক্ষ থেকে সংবিধান মেনে ভোটের কাজ করতে নির্দেশ দিয়েছিলেন। তিনি মন্তব্য করেন, রাজ্যপাল হিসেবে আমাকে দেখতে হবে, রাজ্যের আমলাতন্ত্র যেন নিরপেক্ষ থাকে, সংবিধান মেনে কাজ করে। পুলিশকেও নিরপেক্ষ ভূমিকা নিতে হবে, যাতে কোনও দল পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ না তুলতে পারে। সংবিধান মেনে কাজ না হলে তার পরিণাম গুরুতর হতে পারে বলেও রাজ্যপাল পুলিশ অফিসার ও আমলাদের উদ্দেশে সতর্কবার্তা দেন।
বিভিন্ন মহল তৎপর হলেও এখন পর্যন্ত পুরভোটের দিনক্ষণ চূড়ান্ত করেনি কমিশন। নবান্ন সূত্রের খবর, তারা কলকাতা ও হাওড়া কর্পোরেশনের ভোট ১২ এপ্রিল করতে চায়। বাকি প্রায় ১১০ টি পুরসভার ভোটও এপ্রিলেই সেরে ফেলতে চায় শাসকদল। যদিও সরকারি ভাবে তা জানায়নি নবান্ন।
বৈঠকের পর রাজভবন এক প্রেস বিবৃতিতে জানিয়েছে, রাজ্যপাল এদিন রাজ্য নির্বাচন কমিশনারের কাছ থেকে পুরভোটের আপডেট নেন। পুরভোট যাতে অবাধ ও শান্তিপূর্ণ হয়, তা সুনিশ্চিত করার লক্ষ্যেই কমিশনারকে ডেকে পাঠানো হয়েছিল। কমিশনার রাজ্যপালকে জানান, মার্চ মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহের মধ্যেই গ্রিভ্যান্স ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম চালু হয়ে যাবে। ৪ মার্চ কমিশন জেলাশাসকদের সঙ্গে বৈঠক করবে। এদিনের বৈঠকে রাজ্যপাল অবাধ ও শান্তিপূর্ণ ভোটের উপর বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে কমিশনকে দেখতে হবে, যাতে ভোটাররা তাঁদের ভোটাধিকার বিনা বাধায় ঠিকমতো প্রয়োগ করতে পারেন। রাজ্যপাল কমিশনকে পুরভোট শান্তিতে করার জন্য সমস্ত ব্যবস্থা করতে বলেছেন। ২০১৮ সালের পঞ্চায়েত ভোটের মতো হিংসার পুনরাবৃত্তি যেন না হয়, তাও নিশ্চিত করতে বলা হয়েছে কমিশনকে। সংবিধানের ২৪৩ (৩) ধারা অনুযায়ী কমিশনকে সমস্ত তথ্য যে রাজ্যপালকে জানানো জরুরি, বৈঠকে তাও কমিশনকে মনে করিয়ে দেওয়া হয়। রাজভবনের বিবৃতিতে আরও বলা হয়েছে, সংবিধানের ৩২৪ ধারা অনুযায়ী ভারতের নির্বাচন কমিশনের যেমন ক্ষমতা রয়েছে, ঠিক তেমনি ২৪৩ কে ধারা অনুযায়ী রাজ্য নির্বাচন কমিশনের ক্ষমতাও অত্যন্ত বিস্তৃত। কমিশন সেটা যেন মাথায় রাখে। ক্ষমতায় থাকার সুবাদে কোনও দল যেন অন্য দলের প্রতি তার অপব্যবহার না করে, কমিশনকে তা সুনিশ্চিত করতে হবে। ভোট অবাধ ও শান্তিপূর্ণ করার জন্য প্রয়োজন হলে কমিশন অফিসারদের বদলিও করতে পারে। সেই ক্ষমতা তাকে দেওয়া হয়েছে। কমিশনের প্রতি রাজ্যপালের নির্দেশ, তারা যেন পুলিশ অফিসার এবং আমলাদের জানিয়ে দেন, তাঁরা পক্ষপাতিত্বমূলক আচরণ করলে দৃষ্টান্তমূলক পরিণামের মুখে পড়তে হবে। রাজ্যপাল ধনখড় ভোটারদের নির্ভয়ে তাঁদের অধিকার প্রয়োগ করতে বলেছেন।
Comments are closed.