জয় হিন্দ শব্দবন্ধটি প্রত্যেক ভারতবাসীর অত্যন্ত আদরণীয়। প্রকৃত পক্ষে ভারতবাসী থেকে দেশপ্রেমিক হয়ে ওঠার প্রাথমিক পাঠ এই শব্দদ্বয়ের উচ্চারণের মাধ্যমেই আমরা গ্রহণ করি। কিন্তু তাই বলে স্কুলে রোল কলের সময় প্রত্যেক পড়ূয়া বলবে জয় হিন্দ! একবার চোখ বন্ধ করে কল্পনা করুন তো দৃশ্যটা। অসংখ্য শিশু, বালক-বালিকা, কিশোর-কিশোরী, যাদের মধ্যে কেউ আকাশ, কেউ বা রফিকুল, কেউ পিটার, কেউ আবার নগেন বাগদি, তারা সবাই নিজেদের নাম বা রোল নম্বর ডাকার সঙ্গে সঙ্গে বলে উঠবে, জয় হিন্দ। এ কি বিদ্যালয়, নাকি কোনও সেনা শিবির?
দেশপ্রেম, জাতীয়তাবোধের শিক্ষায় শৈশবকাল থেকেই শিশুদের শিক্ষিত করা উচিত, কিন্তু তার জন্য হাজার একটা অন্য পদ্ধতি রয়েছে। সেগুলির রাস্তায় না হেঁটে কেবলমাত্র মোটা দাগের দেশপ্রেমের বুলি আওড়ানো শেখানোর এই পদ্ধতি মধ্যপ্রদেশ শিক্ষা দফতরের গ্রহণযোগ্য মনে হল? শিক্ষা, বিজ্ঞান, গবেষণার কোনও স্তরেই শিক্ষা-প্রদানের এই পদ্ধতি প্রচলনের দুঃস্বপ্ন ডান-বাম, বিদগ্ধ, পন্ডিত-অপন্ডিত কোনও মানুষই দেখেননি। তবে কেন এই উদ্যেগ?
শ্রেণী কক্ষে রোল নম্বর বা নাম ডাকার সঙ্গে সঙ্গে শিশুর সাড়া প্রদান একটি অভ্যাসগত প্রতিবর্ত ক্রিয়া। বিদ্যালয় বৃহত্তর সমাজের ক্ষুদ্র সংস্করণ রূপে শিশুদের এই প্রতিবর্ত ক্রিয়া শেখানোর প্রাথমিক কাজ করে। একটি অত্যন্ত মহান শিক্ষনযোগ্য পদ্ধতিকে ছোট বয়েস থেকে দেশাত্ববোধ তথা জাতীয়তাবোধ শেখানোর জাঁতাকলে ফেলে দিলেই, আগামী দিনে বিদ্যালয় নামক কারখানা থেকে আগমার্কা দেশপ্রেমিক বেরিয়ে আসবে, এই কষ্টার্জিত কল্পনা ইতিপূর্বে কেউ ভাবতে পেরেছেন বলে আমাদের জানা নেই। ভেবে দেখুন তো, সরকার পরিবর্তন হওয়ার পর এই পদ্ধতির বদলে যদি আবার নতুন করে সাড়া প্রদানের বিপরীত কোনও পদ্ধতি প্রচলন হয়, তখন কী হবে? যদি সুকুমারমতী শিশুদের মস্তিষ্কে এমন কোনও শব্দ প্রবেশ করিয়ে দেওয়া হয় যা সত্যিই দেশের অখণ্ডতা, সার্বভৌমত্বের পরিপন্থী হয়ে উঠবে, কে তাকে রদ করবে? ইতিপূর্বে বহু দেশে বিভিন্ন ধরনের জঙ্গি গোষ্ঠী ছোট বয়েস থেকে শিশুদের শৈশবত্ব পরিচয়ে তাদের জেহাদি ভাবনায় উদবুদ্ধ করতে গিয়ে কিছু মানব রোবট তৈরি করেছে, যারা নিজেদের ঘর-বাড়ি, পিতা-মাতা, নিজেদের সমাজ সব কিছু ভুলে অলীক স্বপ্ন মাথায় নিয়ে অন্যকে ধ্বংসের সঙ্গে সঙ্গেই নিজেদেরকেও ধ্বংস করছে। যাদের মাধ্যমে মানব সমাজ তথা সভ্যতা আবর্জনার পঙ্কিলতায় নিমজ্জিত হয়েছে। ভয় হয়, আশঙ্কা হয়, মধ্যপ্রদেশ শিক্ষা দফতরের এই ফরমানে বিদ্যালয়গুলি যদি এইভাবে দেশপ্রেমিক তৈরির কারখানা হয়ে ওঠে তবে আমাদের জন্য ভবিষ্যৎ কী বার্তা নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকবে?
(মতামত লেখকের ব্যক্তিগত)