জিয়াগঞ্জ হত্যাকাণ্ডের কিনারা, রাজনীতি নয়, বিমার টাকা নিয়ে গোলমালেই খুন, ধৃত অভিযুক্ত

৭ দিনের মাথায় জিয়াগঞ্জে পরিবারসহ শিক্ষক খুনের কিনারা করল পুলিশ। সপরিবার শিক্ষক বন্ধুপ্রকাশ পালের খুনের ঘটনায় প্রথম গ্রেফতার উৎপল বেহরা নামে এক রাজমিস্ত্রি।
মুর্শিদাবাদ জেলা পুলিশ সুপার মুকেশ কুমারের দাবি, ২৪ হাজার টাকা নিয়ে গণ্ডগোলের জেরেই স্কুল শিক্ষক বন্ধুপ্রকাশ পাল, তাঁর অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী বিউটি এবং ৬ বছরের ছেলেকে খুন করে বছর কুড়ির উৎপল বেহরা। মৃত বন্ধুপ্রকাশের বাড়ি থেকে একটি রক্তমাখা রসিদ উদ্ধার করে পুলিশ। সেই সূত্র ধরেই হল জিয়াগঞ্জ হত্যাকাণ্ডের কিনারা।

পুলিশের দাবি, গত ৮ অক্টোবর, বিজয়া দশমীর দিন দুপুর ১২ টা ৬ মিনিট থেকে ১২ টা ১১ মিনিট অর্থাৎ মাত্র ৫ মিনিটের মধ্যে ৩ টি খুন করে উৎপল বেহরা।
কিন্তু কী কারণে এই খুন? পুলিশ জানাচ্ছে, যে সাহাপুর প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক ছিলেন বন্ধুপ্রকাশ পাল সেখানেই বাড়ি ধৃতের। শিক্ষকতার পাশাপাশি বিমা করানোর কাজেও যুক্ত ছিলেন বন্ধুপ্রকাশ পাল। ধৃত উৎপল বেহরা তাঁর কাছে একটি বিমা করেছিলেন। উৎপলের বিমার বাৎসরিক কিস্তি ছিল ২৪ হাজার টাকা। ধৃতের অভিযোগ, প্রথমবার কিস্তির টাকা নিয়ে রসিদ দিলেও, পরের কিস্তির কোনও রসিদ দেননি বন্ধুপ্রকাশ পাল। বারবার এ নিয়ে বলেও কোনও কাজ হয়নি বলে অভিযোগ করে ওই রাজমিস্ত্রী। উল্টে তার সঙ্গে অভদ্র আচরণ করতেন শিক্ষক বন্ধুপ্রকাশ পাল। উৎপলের সন্দেহ হয় আসলে তার বিমার কিস্তির কোনও টাকাই জমা করেননি বন্ধুপ্রকাশ। এরপর চরম প্রতিশোধস্পৃহা থেকেই সপরিবারে শিক্ষককে খুন করে উৎপল।
পুলিশ সূত্রে খবর, উৎপল স্বীকার করেছে, গত ৩ রা অক্টোবর শেষবার বন্ধুপ্রকাশকে ফোন করে। তখন রাজমিস্ত্রির কাজে পূর্ব মেদিনীপুরের এগরায় ছিল সে। এরপর ৮ ই অক্টোবর মুর্শিদাবাদের জিয়াগঞ্জে বোনের বাড়িতে যায় উৎপল। সেখান থেকে ধারালো অস্ত্র নিয়ে বন্ধুপ্রকাশ পালের বাড়িতে উপস্থিত হয়। বন্ধুপ্রকাশ নিজেই বাড়ির দরজা খুলেছিলেন। সঙ্গে সঙ্গেই তাঁর গলায় ধারালো অস্ত্রের কোপ বসায় উৎপল। পুলিশের দাবি, প্রথম খুনের সাক্ষী লোপাট করার জন্য ৫ মিনিটের মধ্যে পরিবারের বাকি ২ সদস্যকেও খুন করে উৎপল বেহরা।
এদিকে ৭ দিনের মাথায় এই খুনের কিনারা করলেও পুলিশি তদন্তে আস্থাশীল নন মৃত বন্ধুপ্রকাশ পালের শ্বশুরবাড়ির লোকজন। তাঁদের প্রশ্ন, একজন ব্যক্তি কীভাবে ৫ মিনিটের মধ্যে তিন-তিনটি খুন করতে পারেন! তাঁরা সিবিআই তদন্তের দাবি জানাচ্ছেন। অন্যদিকে, বিজয়া দশমীর দিন এই খুনকে রাজনৈতিক হত্যা বলে অভিযোগ করে এসেছে রাজ্য বিজেপি। তাঁদের দাবি, মৃত বন্ধুপ্রকাশ পালা আরএসএসের সদস্য ছিলেন। তাঁরাও এই পুলিশি তদন্তে খুশি নন। মঙ্গলবারই রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দের দ্বারস্থ হচ্ছেন বিজেপির শীর্ষ নেতৃত্ব।

Comments are closed.