এজলাসে ‘মি লর্ড’ বা ‘ইওর লর্ডশিপ’-এর মতো শব্দবন্ধের ব্যবহার এড়িয়ে চলুন, আইনজীবীদের অনুরোধ পঞ্জাব ও হরিয়ানা হাইকোর্টের বিচারপতি এস মুরলীধরের।
দিল্লি-হিংসার সময় দিল্লি পুলিশ, কেন্দ্র ও দিল্লি সরকারকে ভর্ৎসনা করেছিলেন দিল্লি হাইকোর্টের তৎকালীন তৃতীয় সিনিয়র বিচারপতি মুরলীধর। তাঁর মন্তব্য ছিল, আর একটি ‘৮৪ -র দাঙ্গা কোনওভাবেই হতে দেওয়া যাবে না। উস্কানিমূলক মন্তব্য করা বিজেপির নেতা-মন্ত্রীদের বিরুদ্ধে কেন এফআইআর করা হয়নি, তা নিয়েও বিচারপতি উষ্মাপ্রকাশ করে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে এফআইআর দায়ের করার নির্দেশ দেন তিনি। এরপর রাতারাতি পঞ্জাব ও হরিয়ানা হাইকোর্টে বদলির নির্দেশ চলে আসে। আইন মহলে এ নিয়ে তীব্র বিতর্ক তৈরি হলেও তাঁর নিজের এ বিষয়ে কোনও ক্ষোভ নেই বলে বিদায় অনুষ্ঠানে মন্তব্য করেছিলেন বিচারপতি মুরলীধর। এবার এজলাসে বিচারপতিকে সম্বোধন করে ‘মি লর্ড’, ‘ইওর লর্ডশিপ’-এর মতো শব্দ এড়িয়ে যাওয়ার জন্য আইনজীবীদের অনুরোধ করলেন তিনি। এখন দেখার, অন্য বিচারপতিরা বিষয়টি কী চোখে দেখেন। সোমবার পঞ্জাব ও হরিয়ানা হাইকোর্টের একটি বিবৃতিতে বলা হয়েছে, বিচারপতি মুরলীধরের অনুরোধ, আইনজীবীরা যেন ‘মি লর্ড’ বা ‘ইওর লর্ডশিপ’ প্রভৃতি শব্দ এড়িয়ে চলেন তাঁকে সম্ভাষণের সময়।
প্রসঙ্গত, কয়েক বছর আগেও পঞ্জাব ও হরিয়ানা হাইকোর্টের বার অ্যাসোসিয়েশন সদস্যদের জানিয়েছিল, বিচারপতিকে সম্ভাষণের সময় তাঁরা যেন ‘স্যার’ বা ‘ইওর অনার’ বলেন। যদিও বেশিরভাগ আইনজীবীই ‘ইওর লর্ডশিপ’ এর মতো শব্দই ব্যবহার করতে অভ্যস্ত। পঞ্জাব ও হরিয়ানা হাইকোর্টের বিচারপতি হয়ে এসে বিচারপতি মুরলীধরও এ ধরনের শব্দ ব্যবহার এড়ানোর আবেদন করলেন।
গত ৬ মার্চ পঞ্জাব ও হরিয়ানা হাইকোর্টের বিচারপতির পদে শপথ গ্রহণ করেন ৫৮ বছর বয়সি বিচারপতি মুরলীধর। গত ২৬ ফেব্রুয়ারি দিল্লি হিংসা নিয়ে পুলিশের প্রবল সমালোচনা করে তিনি প্রশ্ন তুলেছিলেন, কেন বিজেপি নেতা-মন্ত্রীরা একাধিকবার উস্কানিমূলক মন্তব্য করা সত্ত্বেও তাঁদের বিরুদ্ধে এফআইআর দায়ের হয়নি। ওইদিন গভীর রাতেই দিল্লি হাইকোর্ট থেকে পঞ্জাব ও হরিয়ানা হাইকোর্টে তাঁর বদলির নির্দেশ আসে। এই ঘটনায় রাজনৈতিক প্রভাবের অভিযোগ উঠলেও, বদলি নিয়ে নিজের কোনও আপত্তি বা অভিযোগ না করে ২৬ ফেব্রুয়ারিকে তাঁর জীবনের দীর্ঘতম কর্মবহুল দিন হিসেবে বর্ণনা করেন বিচারপতি এস মুরলীধর। প্রধান বিচারপতি এস এ বোবদে পরিচালিত সুপ্রিম কোর্ট কলেজিয়াম গত ১২ ফেব্রুয়ারি বিচারপতি মুরলীধরকে দিল্লি হাইকোর্ট থেকে পঞ্জাব ও হরিয়ানা হাইকোর্টে বদলির প্রস্তাব দেয়।
Comments are closed.