আন্তর্জাতিক নারী দিবসে সাফল্য মমতা ব্যানার্জি সরকারের: কন্যাশ্রী, রূপশ্রী আজ আক্ষরিক অর্থেই বিশ্বশ্রী! স্বীকৃতি রাষ্ট্র সংঘ, ইউনিসেফের
‘Women’s rights have made significant progress in recent decades, from the abolition of discriminatory laws to increased numbers of girls in school…’
এ বছর আন্তর্জাতিক নারী দিবসে এই বার্তাই দিয়েছেন রাষ্ট্র সংঘের সেক্রেটারি জেনারেল। আর এই বার্তা, অর্থাৎ মেয়েদের স্কুলে যাওয়া, মেয়েদের ড্রপ আউট কমানো যে নারী-পুরুষের ব্যবধান কমানোর অন্যতম হাতিয়ার তা মেনে নিচ্ছেন দুনিয়ার সমস্ত সমাজ বিজ্ঞানী। এই জায়গায় দাঁড়িয়েই গত কয়েক বছরে দৃষ্টান্তমূলক বদল ঘটে গিয়েছে এ রাজ্যে। সৌজন্যে কন্যাশ্রী। নজিরবিহীনভাবে রাজ্যে বেড়েছে মেয়েদের স্কুলে যাওয়ার হার। কমেছে মেয়েদের ড্রপ আউট। ইদানীং যা প্রতিফলিত হচ্ছে মাধ্যমিক, উচ্চ মাধ্যমিকে মেয়েদের অংশগ্রহণে। রাজ্যে দশম এবং দ্বাদশ শ্রেণির পরীক্ষায় উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে ছাত্রীদের সংখ্যা। শুধু তাই নয়, রাজ্যে কমেছে কম বয়সী মেয়েদের বিয়ে। কমেছে নারী পাচারও।
২০১৩ সালের নারী দিবসের দিন কন্যাশ্রী প্রকল্প চালু করেছিলেন মমতা ব্যানার্জি। প্রত্যেক বছর ১৪ অগাস্ট রাজ্য সরকার কন্যাশ্রী দিবস পালন করে। এই মুহূর্তে রাজ্যে কন্যাশ্রী প্রকল্পে নথিভূক্ত মেয়ের সংখ্যা ১ কোটি ৮৫ লক্ষেরও বেশি। কন্যাশ্রী প্রকল্পে রাজ্যে ইতিমধ্যেই উপকৃত ৬৪ লক্ষের বেশি মেয়ে। সমাজ বিজ্ঞানীরা জানাচ্ছেন, রাজ্যে কন্যাশ্রী প্রকল্পের প্রভাব ব্যাপকভাবে পড়তে শুরু করেছে শিক্ষা ব্যবস্থার ওপর। মেয়েদের স্কুল ড্রপ আউট কমেছে কয়েক শতাংশ। মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি বারবার জানিয়েছেন, মেয়েদের স্কুলে যাওয়ার হার বৃদ্ধি ও ড্রপ আউট কমায় কমে গিয়েছে নাবালিকা বিয়ে। যার প্রভাবে কমেছে নারী পাচারের সংখ্যা, যা ন্যাশনাল ক্রাইম রেকর্ড ব্যুরোর রিপোর্টেও পরিষ্কার। নদিয়া জেলায় কন্যাশ্রী বিশ্ববিদ্যালয়ও গড়ছে রাজ্য।
কন্যাশ্রী প্রকল্পের সাফল্য ধরেই মেয়েদের জন্য মমতা ব্যানার্জি দু’বছর আগে চালু করেছেন রূপশ্রী প্রকল্প। যেখানে বিয়ের জন্য মেয়েদের রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে দেওয়া হচ্ছে বিশেষ আর্থিক সাহায্য। সম্প্রতি নিজে মালদাতে গিয়ে বহু আদিবাসী মেয়ের বিয়ে দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। তাঁরা পেয়েছেন রূপশ্রী প্রকল্পের সহায়তা।
ইতিমধ্যেই কন্যাশ্রী প্রকল্প পেয়েছে একাধিক আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি। ২০১৭ সালে রাষ্ট্র সংঘের হায়েস্ট পাবলিক সার্ভিস সম্মান পেয়েছে কন্যাশ্রী। ৬২ টি দেশের ৫৫২ টি প্রকল্পের মধ্যে এক নম্বর জায়গা পেয়েছে এই প্রকল্প। এছাড়াও স্কচ অ্যাওয়ার্ড থেকে শুরু করে একাধিক জাতীয়, আন্তর্জাতিক সম্মান পেয়েছে এই প্রকল্প। সমাজ বিজ্ঞানীদের কথায়, রাজ্যের গণ্ডি ছাড়িয়ে কন্যাশ্রী, রূপশ্রী আজ আক্ষরিক অর্থেই বিশ্বশ্রী হয়ে উঠেছে।
ইউনিসেফ ইন্ডিয়ার ওয়েবসাইটে প্রকাশিত হয়েছে পুরুলিয়ার এক মেয়ের কাহিনী। দ্বাদশ শ্রেণির এক ছাত্রী কিরণ বাউরি একদিন জানতে পারে, তার এক নাবালিকা বন্ধুর বিয়ে ঠিক করেছে তাদের পরিবার। সঙ্গে সঙ্গে কিরণ খবর দেয় কন্যাশ্রী প্রকল্পের সঙ্গে যুক্ত আধিকারিকদের। বিয়ে আটকে যায় তার বন্ধুর। গোটা ঘটনাটিকে গ্রামের গরিব মেয়েদের জীবনের এক গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন বলে ব্যাখ্যা করেছে ইউনিসেফ। আন্তর্জাতিক নারী দিবসের দিনে এখানেই সাফল্য মমতা ব্যানার্জি সরকারের।
Comments are closed.