গত বছরই দুনিয়াজুড়ে পালিত হয়েছে কার্ল মার্ক্সের জন্মের দুশো বছর। অন্যদিকে, গোটা বিশ্বেই কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখে উদার অর্থনীতি। এই পরিস্থিতিতে অর্থনীতিবিদ থেকে রাজনৈতিক বিশ্লেষক বা সমাজবিজ্ঞানী, সমাধানের রাস্তা খুঁজতে গিয়ে অনেকের মুখেই উঠে আসছে মার্ক্সের প্রাসঙ্গিকতার কথা। ইউরোপজুড়ে অর্থনৈতিক ও সামাজিক সঙ্কট (ব্রিটেনে ব্রেক্সিট, ফ্রান্সে ইয়েলো ভেস্ট, গ্রিসে অর্থনৈতিক সঙ্কট, জার্মানিতে হিংসাত্মক অ্যান্টি সেমিটিজম বিক্ষোভ) যখন ক্রমেই জটিল আকার নিচ্ছে, তখন লন্ডনে আক্রান্ত হলেন মার্ক্স!
লন্ডনের হাইগেট সিমেটারিতে কার্ল মার্ক্সের সমাধিক্ষেত্রে দু’সপ্তাহের ব্যবধানে দু’বার ভাঙচুর চালালো অজ্ঞাতপরিচয় দুষ্কৃতীরা। শুধু ভাঙচুরই নয়, মার্ক্সের সমাধিক্ষেত্রে লাল কালিতে লেখা হয়েছে, ‘ঘৃণার মতবাদের প্রচারক’ ও ‘গণহত্যার স্থপতি’। ঘটনায় হতবাক সমাধিক্ষেত্রের দায়িত্বে থাকা হাইগেট সিমেটারি ট্রাস্ট কর্তৃপক্ষ।
ঘটনার সূত্রপাত ৪ঠা ফেব্রুয়ারি। হাতুড়ি দিয়ে মেরে মেরে ভাঙা হয় মার্ক্সের সমাধির উপর রাখা মার্বেল ফলক। পুরোটা ভাঙতে না পারলেও আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয় ঐতিহাসিক এই ফলকটি। এই ঘটনায় সাড়া পড়ে যায় দুনিয়াজুড়ে। তদন্ত শুরু করে মেট্রোপলিটন পুলিশ। কিন্তু দুষ্কৃতী ধরা পড়েনি। সেই ঘটনার রেশ কাটতে না কাটতেই ফের হামলা। শনিবার স্থানীয় সময় সকাল ১১ টা নাগাদ পুলিশে ফোন করে ফের একবার ভাঙচুরের খবর দেওয়া হয়। তবে দ্বিতীয়বার দুষ্কৃতীরা ভাঙচুরের পাশাপাশি লাল কালিতে মার্ক্সের সমাধিক্ষেত্রের উপর লিখে দিয়ে যায় ‘ঘৃণার মতবাদের প্রচারক’ ও ‘গণহত্যার স্থপতি’।
এক মাসের মধ্যে পরপর দু’বার এমন হামলার ঘটনার নিন্দায় সরব মার্ক্স মেমোরিয়াল। কারা, কী উদ্দেশে ১৩৫ বছর আগে প্রয়াত মার্ক্সের সমাধিতে ভাঙচুর চালালো, তা বুঝে উঠতে পারছে না তারা। ট্রাস্টের চিফ এক্সিকিউটিভ ইয়ান ডুঙ্গাভেল বলেন, ‘এটা খুবই দুঃখজনক যে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে বারবার মার্ক্সের সমাধিক্ষেত্রে হামলা চালানো হচ্ছে। শুধু মূর্তি ভাঙলেই বুঝি মার্ক্সের নাম ইতিহাসের পাতা থেকে মুছে ফেলা যাবে?’ প্রশ্ন তাঁর। একই প্রশ্ন মেমোরিয়াল ঘুরতে আসা দর্শনার্থীদেরও। বামপন্থার বিরোধিতা করতে গিয়ে মার্ক্সের মূর্তি ভাঙাকে কোনওভাবেই সমর্থন করতে পারছেন না তাঁরা। মার্ক্সের সমাধিতে বারবার ভাঙচুরের ঘটনাকে বিচ্ছিন্নভাবে দেখতে রাজি নয় মেমোরিয়াল কর্তৃপক্ষ। ব্রেক্সিট নিয়ে এমনিতেই উত্তাল ব্রিটেন। এই কাণ্ডে অতি দক্ষিণপন্থী কোনও সংগঠনের হাত থাকতে পারে কিনা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। তবে এখনও পর্যন্ত পুলিশ কাউকেই গ্রেফতার করতে পারেনি। হামলার দায় স্বীকার করে বিবৃতিও দেয়নি কোনও সংগঠন। এই পরিস্থিতিতে ভাঙচুরকারীদের সম্পর্কে কারও কাছে কোনও তথ্য থাকলে তা দ্রুত পুলিশকে জানানোর সুপারিশ করেছে মেট্রোপলিটান পুলিশ।
যে ফলককে হাতুড়ি দিয়ে মেরে মেরে ভাঙার চেষ্টা হয়েছে, ১৮৮১ সালে তা বসানো হয়েছিল কার্ল মার্ক্সের স্ত্রী জেনি ভন ওয়েস্টফালেনের সমাধিতে। ১৯৫৪ সালে হাইগেট সিমেটারিতে মার্ক্সের সমাধিতে নতুন করে তা বসানো হয়।
Comments are closed.