করোনার বিরুদ্ধে লড়াইয়ের স্বীকৃতি, রাষ্ট্রসঙ্ঘের আলোচনাসভায় দেশের একমাত্র বক্তা কেরলের স্বাস্থ্যমন্ত্রী কে কে শৈলজা
করোনার বিরুদ্ধে লড়াই চালিয়ে আন্তর্জাতিক স্তরে নাম কুড়িয়েছ কেরল মডেল। এবার রাষ্ট্রসঙ্ঘের স্বীকৃতি পেলেন সিপিএম শাসিত কেরলের স্বাস্থ্যমন্ত্রী কে কে শৈলজা। গত ২৩ জুন রাষ্ট্রসঙ্ঘের উদযাপিত পাবলিক সার্ভিস ডে-র আলোচনাসভায় অংশ নেন কেরলের স্বাস্থ্যমন্ত্রী। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO) এর প্যানেলে ছিলেন তিনি। শৈলজাই একমাত্র ভারতীয় যিনি রাষ্ট্রসঙ্ঘের ওই ওয়েবমিনারে অংশ নেন।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রকাশিত একটি বিবৃতিতে বলা হয়েছে, বিশ্বব্যাপী স্বাস্থ্য পরিষেবার সঙ্গে সরাসরি যুক্ত যে ব্যক্তিত্বরা প্রাণের ঝুঁকি নিয়ে নিরন্তর কাজ করে চলেছেন, তাঁদের সম্মান জানাতে এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। ওই ভার্চুয়াল আলোচনা সভায় বক্তা হিসেবে ছিলেন রাষ্ট্রসঙ্ঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার জেনারেল মহাসচিব টেড্রোস অ্যাধনাম ঘেব্রেইসাস, ইথিওপিয়ার রাষ্ট্রপতি সাহলে-ওয়ার্ক জেভেডে, রাষ্ট্রসংঘের অর্থনৈতিক ও সামাজিক বিষয় সংক্রান্ত সেক্রেটারি-জেনারেল লিউ ঝেনমিন, রিপাবলিক কোরিয়ার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী চিন ইয়ং, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার স্বাস্থ্য কর্মী বাহিনী বিভাগের ডিরেক্টর জিম ক্যাম্পবেল, নার্সদের আন্তর্জাতিক কাউন্সিলের সভাপতি অ্যানেট কেনেডি এবং আন্তর্জাতিক পাবলিক সার্ভিস কমিটির সাধারণ সম্পাদক রোসা পাভেনেলি প্রমুখ। ১০ জন বক্তার এই প্যানেলে ছিলেন কেরলের স্বাস্থ্যমন্ত্রী কে কে শৈলজাও।
আলোচনা সভায় তাঁর সাত মিনিটের বক্তৃতায় নিজের বক্তব্য কেরলের স্বাস্থ্যমন্ত্রী তুলে ধরেন, কীভাবে নিপা ভাইরাস ঠেকানোর অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে অতিমারি করোনা প্রতিরোধের পরিকল্পনা নেয় কেরল সরকার। কোভিড-১৯ টেস্টিং, আইসোলেশনের মতো প্রক্রিয়াগুলিকে কীভাবে শুরু থেকেই কেরল সরকার জোর দিয়েছিল, সেই কথা জানান তিনি। শৈলজা বলেন, কেরলের বাম সরকার রাজ্যের মানুষের ন্যূনতম চাহিদাগুলি মেটানোর নিরন্তর চেষ্টা করেছে এই মহামারি পরিস্থিতিতে। রেশন সামগ্রী বাড়িতে পৌঁছে দেওয়া থেকে কমিউনিটি কিচেন গড়ে তোলার মতো কর্মসূচির উল্লেখ করেন তিনি। কেরলের স্বাস্থ্যমন্ত্রী জানান, করোনা মহামারির ১৪২ দিনের মধ্যে সাড়ে ছয় লক্ষেরও বেশি মানুষকে নজরদারিতে রাখা হয়। রোগীর শারীরিক অবস্থার বিচার করে কয়েক হাজার মানুষকে আইসোলেশনে রাখা হয়। কেরালে করোনা সংক্রমণ মাত্রা এখনও ১২.৫ শতাংশের নীচে রাখতে সক্ষম হয়েছে পিনারাই বিজয়ন সরকার। তাছাড়া রাজ্য সরকারের ইতিবাচক পদক্ষেপে করোনায় মৃত্যুর হার ০.৬ শতাংশের নীচে এবং পজিটিভ রেট ২ শতাংশের ভিতরে বলে উল্লেখ করেন কে কে শৈলজা। করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার প্রথম ধাপেই রাজ্য সরকার গুরুত্ব দিয়ে পদক্ষেপ নেওয়ায় এই সাফল্য মিলেছে বলে রাষ্ট্রসঙ্ঘের আলোচনা সভায় মন্তব্য করেন কেরল স্বাস্থ্যমন্ত্রী।
প্রসঙ্গত, গত জানুয়ারি মাসের ভারতে সর্বপ্রথম করোনা আক্রান্তের খোঁজ মিলেছিল কেরলেই। চিন ফেরত এক পডুয়ার শরীরে এই মারণ ভাইরাসের সন্ধান মেলে। কিন্তু সংক্রমণ রোধে দ্রুত পদক্ষেপ করায় মার্চে এই রাজ্যে সংক্রমণ মাত্রা কমে আসে। পরে পরিযায়ী শ্রমিকদের বাড়ি ফেরার কারণে ফের সংক্রমিতের সংখ্যা বাড়লেও কেরল মডেল প্রশংসিত হয়েছে সব জায়গায়।
Comments are closed.