এবার জমি আন্দোলন তেলেঙ্গানা-অন্ধ্রে, প্রস্তাবিত রাস্তার জন্য জমি অধিগ্রণের বিরোধিতায় আন্দোলনে কয়েক হাজার কৃষক
এবার জমি আন্দোলন দক্ষিন ভারতে, যার জেরে প্রশ্নের মুখে এসে দাঁড়িয়েছে ১৬২ কিলোমিটার রাস্তা তৈরির কাজ।
দুই রাজ্যের সংযোগকারী প্রস্তাবিত মহাসড়ক নিয়ে ধিকিধিকি বিক্ষোভের আগুন জ্বলে উঠেছে তেলেঙ্গানা ও অন্ধ্রপ্রদেশের সীমান্ত সংলগ্ন এলাকায়। জমি অধিগ্রহণের বিরুদ্ধে একজোট হয়েছেন এলাকার অসংখ্য কৃষক। নিত্য চলছে বিক্ষোভ। সরকারি মহাসড়ক প্রকল্প বাতিল না করা হলে আদালতে যাওয়ার হুঁশিয়ারি।
২০১৮ সালে কেন্দ্রীয় সরকারের ভারতমালা পরিযোজনার অন্তর্গত ইকনমিক করিডোর উন্নয়ন কর্মসূচিতে জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষ তেলেঙ্গানার খাম্মাম জেলার সঙ্গে অন্ধ্রপ্রদেশের দেবারাল্লীর মধ্যে ১৬২ কিলোমিটার মহাসড়ক গড়ে তোলার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। খরচ ধরা হয়েছিল ৪৬০৯ কোটি টাকা। এল অ্যান্ড টি সংস্থা খাম্মাম-দেবরাপল্লি ফোর লেন গ্রিনফিল্ড হাইওয়ে প্রকল্প নির্মাণের বরাত পায়। গত সপ্তাহে প্রকল্প জরিপের কাজ শুরু করেছে এল অ্যান্ড টি। তারপরেই গ্রামবাসীদের ক্ষোভের আঁচ পায় প্রশাসন।
প্রস্তাবিত এই মহাসড়ক যাবে মোট ১০ টি মণ্ডলের মধ্যে দিয়ে। খাম্মাম গ্রামীণ, চিন্তাকানি, থাল্লাডা, কোনিজেরলা, ওয়াইরা, পেনুবাল্লি, কাল্লুর, ভেমসুর এবং সাত্তুপল্লী মণ্ডলের প্রায় ২ হাজার একর কৃষিজমি অধিগ্রহণ করে তৈরি হবে ফোর লেন গ্রিনফিল্ড সড়ক পরিকল্পনা। বিক্ষোভকারী কৃষকদের অভিযোগ, এর ফলে তাঁরা রুজি রোজগার হারাবেন।
এলাকাবাসীর ক্ষোভের আঁচ পেয়ে আলোচনার পথে গিয়েছে প্রশাসন। গত ৪ জুলাই কাল্লুরের রিজিওনাল ডিভিশনাল অফিসে সরকারি আধিকারিকরা মিলিত হন বিক্ষোভকারী কৃষকদের সঙ্গে। সেখানে কৃষকরা সাফ জানিয়ে দেন, হাইওয়ে প্রোজেক্টের জন্য তাঁরা এক ইঞ্চি জমিও ছাড়বেন না।
তেলেঙ্গানা রায়তু সঙ্গমের ব্যানারের তলায় একজোট হয়েছেন এলাকার কৃষকরা। রায়তু সঙ্গম সারা ভারত কিষাণ সভার অনুমোদিত সংগঠন। রায়তু সঙ্গম নেতৃত্বের দাবি, সড়ক সম্প্রসারণই যদি সরকারের উদ্দেশ্য হয় তাহলে বর্তমানে যে ১০০ ফুটের খাম্মাম-আসওয়ারাওপেটা রাজ্য সড়ক, তাকেই জাতীয় সড়কে উন্নীত করতে পারত। তাতে একরের পর একর উর্বর কৃষিজমি রাস্তার তলায় চাপা পড়ত না। কৃষকরাও প্রাণে বাঁচতে পারতেন। মন্তব্য রায়তু সঙ্গমের জেলা সচিব মেদিনেনি রমেশের। তাঁর অভিযোগ, সরকার থেকে যে ক্ষতিপূরণের কথা বলা হয়েছে তা প্রয়োজনের তুলনায় কিছুই না। যদি সত্যিই মহাসড়কের কাজ শুরু করতে হয় তাহলে ২০১৩ সালের জমি অধিগ্রহণ আইন অনুযায়ী ক্ষতিপূরণ দিতে হবে কৃষকদের। যে আইন বলে বাজার দরের ৩ গুণ দাম পাবেন জমিদাতা কৃষক। কিন্তু আদতে প্রয়োগ করা হচ্ছে ২০১৭ সালের জমি অধিগ্রহণ আইন। যেখানে কৃষকরা বাজার দরের চেয়েও কম টাকা পাচ্ছেন, অভিযোগ মেদিনেনি রমেশের।
কিন্তু সরকার সেই দাবি মানবে এমন কোনও নিশ্চয়তা এখনও পর্যন্ত নেই। অভিযোগ, রাজ্য পুলিশ করোনা পরিস্থিতির কারণ দেখিয়ে কৃষকদের প্রকাশ্যে বিক্ষোভ দেখানোর উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে। তাহলে পরবর্তী পদক্ষেপ কী? রায়তু সঙ্গমের জেলা সচিব জানাচ্ছেন, সুবিচার চেয়ে আদালতে যাচ্ছেন কৃষকরা।
Comments are closed.