কিষেণজি মৃত্যু রহস্য # এক

এনকাউন্টার

 

‘স্যার, কিষেণজি ১০-১২ জনের দল নিয়ে কুশবনির জঙ্গলে ঢুকেছে।’

খবরটা এল ঝাড়গ্রামে সিআরপিএফের ১৮৪ নম্বর ব্যাটেলিয়নের অফিসে। এক লাইনের ইনফর্মেশন। সিআরপিএফের এক অফিসারের কাছে ফোনটা এল বিনপুরের একটা গ্রাম থেকে। যিনি টেলিফোনটা করলেন, তিনি তাঁর নাম বললেন না। সিআরপিএফের অফিসারকে শুধু বললেন, ‘স্যার, আমি নিজে দেখেছি। কিষেণজি ১০-১২ জনের একটা দল নিয়ে কুশবনির জঙ্গলে ঢুকেছে।’

একদম স্পেসিফিক সোর্স ইনফর্মেশন। অলমোস্ট পিন পয়েন্ট লোকেশন। বিনপুরের কুশবনির জঙ্গল সিআরপিএফের ১৮৪ নম্বর ব্যাটলিয়নের আন্ডারে পড়ে। এই ব্যাটেলিয়নের কমান্ডান্ট তখন রবীন্দ্র ভগত। সঙ্গে সঙ্গেই খবরটার গুরুত্ব বুঝে নিলেন রাঁচির বাসিন্দা রবীন্দ্র।

সেদিন ১৯ নভেম্বর ২০১১।

ঝাড়গ্রামের পুলিশ সুপার গৌরব শর্মা তখন ছুটিতে। পশ্চিম মেদিনীপুরের পুলিশ সুপার প্রভীন কুমার ত্রিপাঠী সেই সময় ঝাড়গ্রাম পুলিশের চার্জে। সিআরপিএফ এবং পশ্চিমবঙ্গ পুলিশ সেই সময় যৌথভাবে জঙ্গলমহলে কাজ করছে ঠিকই, কিন্তু দু’পক্ষই মরিয়াভাবে খুঁজছে স্রেফ একজনকে। কিষেণজি। মাল্লোজুলা কোটেশ্বর রাও। অবিভক্ত অন্ধ্রপ্রদেশের করিমনগরে জন্ম। কমিউনিস্ট পার্টি অফ ইন্ডিয়া মাওয়িস্টের পলিটব্যুরো সদস্য। তিন বছর আগে শুরু হওয়া লালগড় আন্দোলনের মেইন আর্কিটেক্ট কিষেণজি। যিনি নিজেই লালগড়ের নাম দিয়েছেন দ্বিতীয় নকশালবাড়ি। সেই কিষেণজি! যাঁকে ধরতে দেশের ছ’সাতটা রাজ্যের পুলিশ এবং আধা সামরিক বাহিনী মরিয়া চেষ্টা চালাচ্ছে কয়েক বছর ধরে। মোস্ট ওয়ান্টেড কিষেণজিকে নিয়ে স্পেসিফিক ইনফর্মেশনটা যখন সিআরপিএফের এক অফিসারের কাছে এল, তখন দুপুর গড়িয়ে প্রায় বিকেল। কিন্তু শীতকাল আসার সঙ্গে সঙ্গে দ্রুত দিনও ছোট হয়ে আসছে রাজ্যের পশ্চিম প্রান্তের মাওবাদী অধ্যুষিত মহকুমা ঝাড়গ্রামে। সিআরপিএফের ১৮৪ ব্যাটেলিয়নে তখন সন্ধে নামছে।

লালগড়, বিনপুর, জামবনি, শালবনি এবং জঙ্গলমহলের নানা জায়গায় মাওবাদীদের খোঁজে অভিযান চালানোর পাশাপাশি কয়েক মাস ধরেই কমিউনিটি পুলিশিং চালু করেছিল সিআরপিএফ। গ্রামের সাধারণ মানুষের আস্থা অর্জনে এও এক ট্যাক্টিকাল লাইন আধা সামরিক বাহিনীর। ফুটবল টুর্নামেন্ট চালু করা থেকে শুরু করে এক্কেবারে গ্রাম স্তরে তৃণমূল কংগ্রেস এবং পুলিশ সন্ত্রাস বিরোধী জনসাধারণের কমিটির (পিসিপিএ) নেতা-কর্মীদের সঙ্গেও সম্পর্ক তৈরি করে ফেলেছিলেন সিআরপিএফের বেশ কয়েকজন অফিসার।

মাস ছয়েকও হয়নি, রাজ্যে সরকার গড়েছে তৃণমূল কংগ্রেস। আর ২০১১ সালের ২০ মে মুখ্যমন্ত্রী পদে শপথ নিয়েই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সরকারের জন্য ধার্য করেছেন দুটো আর্জেন্ট লক্ষ্যমাত্রা। এক, সিঙ্গুরে অনিচ্ছুক কৃষকের জমি ফেরত এবং দুই, জঙ্গলমহল ও দার্জিলিং পাহাড়ে শান্তি ফেরানো।

জঙ্গলমহলে শান্তি ফেরাতে প্রকাশ্যে যুদ্ধবিরতি ঘোষণা করলেন মুখ্যমন্ত্রী। আলোচনায় বসার বার্তা দিলেন মাওবাদীদের। বললেন, ‘অস্ত্র ছাড়ুক মাওবাদীরা।’ মাওবাদীদের দাবি-দাওয়া নিয়ে মহাকরণে মুখ্যমন্ত্রী এবং প্রশাসনিক কর্তাদের সঙ্গে বৈঠক শুরু করলেন মানবাধিকার কর্মী ছোটন দাস, সুজাত ভদ্ররা। মহাকরণ থেকে পশ্চিম মেদিনীপুর, বাঁকুড়া, পুরুলিয়ার পুলিশ কর্তাদের কাছে প্রশাসনিক স্তরে গোপন বার্তা গেল, ‘গো-স্লো। অপারেশন বন্ধ রাখুন। কিন্তু গ্রামে পুলিশ ঢোকা পুরোপুরি বন্ধ করবেন না। বরং দিনের আলোয় মাঝে মাঝে গ্রামে, জঙ্গলে প্রচুর সংখ্যায় ফোর্স পাঠাতে হবে, যাতে মাওবাদীদের অবাধ ঘোরাফেরা বন্ধ হয়। কিন্তু অতর্কিতে অপারশনের দরকার নেই।’ যে বার্তার সহজ মানে, জঙ্গলে ফোর্স মুভমেন্ট চলবে ঠিকই, কিন্তু মাওবাদী স্কোয়াডকে ধরার জন্য বাড়তি উদ্যোগ নেওয়া হবে না। কারণ, একই সঙ্গে মহাকরণে আলোচনা এবং জঙ্গলমহলে অপারেশন, দুইই চালানো সম্ভব নয়। অথচ জঙ্গলমহলে সেন্ট্রাল ফোর্স সিআরপিএফ মোতায়েন রয়েছে, ফলে অপারেশন পুরোপুরি বন্ধ করাও যাচ্ছে না।

২০১১ সালের এপ্রিল মাস পর্যন্ত রাজ্য পুলিশ পশ্চিম মেদিনীপুর, ঝাড়গ্রামের বহু গ্রামে সাধারণ মানুষের মধ্যে খুব ভাল সোর্স নেটওয়ার্ক তৈরি করে ফেলেছিল। কিন্তু মে মাসে সরকার বদলের পর মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রশাসনের গো-স্লো স্ট্র্যাটেজির জন্য গ্রামে পুলিশের অ্যাক্টিভিটি অনেক কমে যায়। এই সুযোগটাকে কাজে লাগাল সিআরপিএফ। তখন পিসিপিএ’ও পুরো ভেঙে গিয়েছে। পিসিপিএ’র অনেক সদস্য যোগ দিয়েছেন শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেসে। সব মিলে, ২০১১ সালের জুন, জুলাই, অগাস্ট মাসজুড়ে পশ্চিমবঙ্গ সরকার যখন আলোচনার মাধ্যমে জঙ্গলমহলে শান্তি ফেরানোর রোডম্যাপ খুঁজতে ব্যস্ত, তখন সিআরপিএফের সক্রিয়তা ওই সমস্ত এলাকায় মাওবাদী বিরোধী সাধারণ গ্রামবাসী এবং সদ্য প্রাক্তন পিসিপিএ সদস্যদের মধ্যে কেন্দ্রীয় বাহিনীকে নিয়ে একটা ইতিবাচক মনোভাব তৈরি করে। গ্রামে মাওবাদীদের বিরোধী মানুষের একটা অংশ মনে করতে শুরু করল, রাজ্য পুলিশকে খবর দিয়ে কোনও লাভ হবে না। পুলিশ ধরবে না মাওবাদীদের। তাছাড়া যে কোনও কারণেই হোক, কেন্দ্রীয় বাহিনীর ওপর সাধারণ মানুষের আস্থাও একটু বেশি থাকে পুলিশের তুলনায়। ২০০৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনের সময় থেকেই এ’রাজ্যে বিভিন্ন ভোটে তা নিজের অভিজ্ঞতায় বহুবার দেখেছি।

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় প্রশাসনের সঙ্গে মাওবাদীদের আলোচনার প্রক্রিয়াটা শেষমেশ ভেস্তেই গেল। সেটা ২০১১ সালের নভেম্বর মাসের ৩-৪ তারিখ। সেপ্টেম্বর, অক্টোবরে ঝাড়গ্রামে পর পর তিনটে খুন করল মাওবাদীরা। দুজন তৃণমূল কংগ্রেস নেতা এবং একজন ঝাড়খন্ডি নেতা বাবু বোস খুন হলেন মাওবাদীদের হাতে। বাবু বোস স্থানীয় স্তরে তৃণমূল কংগ্রেসের সঙ্গে যোগাযোগ রেখে চলছিলেন। আলোচনা প্রক্রিয়ার মাঝেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় প্রকাশ্যে মাওবাদীদের আহ্বান জানিয়েছিলেন অস্ত্র ছাড়তে। সশস্ত্র রাস্তা ছেড়ে সমাজের ‘মূলস্রোতে’ ফিরতে বলেছিলেন মাওবাদীদের। মাওবাদীরা রাজ্য সরকারকে পালটা এক মাস সময় দিল, জঙ্গলমহল থেকে যৌথ বাহিনী প্রত্যাহার এবং তাঁদের কয়েকজন নেতাকে জেল থেকে ছাড়ার দাবি জানিয়ে। প্রশাসন জঙ্গল থেকে বাহিনী প্রত্যাহার করল না, কিন্তু মাওবাদী অভিযোগে গ্রেফতার দু’চারজন ছোটখাট নেতা-কর্মীকে ছেড়ে দিল। কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ কোনও মাওবাদী নেতাকে ছাড়ল না মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রশাসন।

পাশাপাশি, আরও একটা ঘটনা সমাজ বিজ্ঞানের নিজস্ব নিয়মে ঘটছিল লালগড়, বেলপাহাড়ি, বিনপুরসহ আশপাশের এলাকায়। প্রকৃতি বেশি দিন শূন্যতা বরদাস্ত করে না। এটাই বুনিয়াদি তত্ত্ব। তাই রাজ্যের অন্যান্য জায়গার মতো জঙ্গলমহলেও তৃণমূল কংগ্রেসের অ্যাক্টিভিটি দ্রুত বৃদ্ধি পেতে শুরু করল। এই সব এলাকায় সিপিআইএমের সংগঠন কয়েক বছর ধরেই মাওবাদী আক্রমণের মুখে পড়ে যথেষ্টই দুর্বল হয়ে পড়েছিল, তাও সরকার ছিল বলে কিছুটা লড়াই চালাচ্ছিল শাসক দলের ক্যাডার বাহিনী। কিন্তু তৃণমূল কংগ্রেস সরকার তৈরির পর রাতারাতি অদৃশ্য হয়ে গেল সিপিআইএমের প্রকাশ্য গতিবিধি। পাশাপাশি এক সময় সক্রিয়ভাবে পিসিপিএ করা বহু লোক সরাসরি যোগ দিলেন তৃণমূল কংগ্রেসে। এরই মধ্যে ঝাড়গ্রামে পরপর তিনটে খুন, যার জেরে মাওবাদীদের সঙ্গে রাজ্য সরকারের শান্তি প্রক্রিয়া শেষ।

আলোচনা প্রক্রিয়ার মধ্যেই পরপর তিনজনকে খুন যে আসলে হত্যার রাজনীতি ফের ফিরিয়ে এনে জঙ্গলমহলে মাওবাদীদের শক্তি প্রদর্শনের স্পষ্ট বার্তা, তা বুঝলেন সাড়ে পাঁচ মাসের মুখ্যমন্ত্রী। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যে মাওবাদীদের চোখ রাঙানো আর বরদাস্ত করবেন না, সেই বার্তা প্রশাসনিক কর্তাদের কাছে পৌঁছোতে সময় লাগল না একদিনও। অক্টোবরের মাঝামাঝি রাজ্য পুলিশের ডিজি এবং পশ্চিম মেদিনীপুর, ঝাড়গ্রাম, বাঁকুড়া, পুরুলিয়ার পুলিশ সুপারদের নয়া নির্দেশ দিলেন মুখ্যমন্ত্রী, ‘এনাফ ইজ এনাফ। এবার অপারেশন শুরু করুন। জঙ্গলমহলে যেন আর একটাও খুন না হয়।’ আগেরবারের মতো এবারের নির্দেশও গেল গোপনে। কারণ, শান্তি প্রক্রিয়া তখনও সরকারিভাবে পুরোপুরি শেষ হয়ে যায়নি। নির্দেশ পেয়েই তেড়েফুড়ে নামলেন অফিসাররা। আবার জঙ্গলমহলে শুরু হল রাজ্য পুলিশের টহলদারি, ইনফর্মেশন কালেকশন। মাওবাদীদের সঙ্গে সরকারের আলোচনার উদ্যোগটা পাকাপাকি ভেস্তে গেল নভেম্বরের শুরুতে।

কিন্তু সেই নভেম্বরের গোঁড়াতে কেউই ভাবতে পারেননি, মাত্র কয়েক দিনের মধ্যেই জঙ্গলমহলে সবচেয়ে হাই প্রোফাইল অপারেশন হতে চলেছে। এবং যে অপারেশনে শেষমেশ মৃত্যু হবে কিষেণজির!

১৯ নভেম্বর দুপুরের পর সোর্স মারফত ঝাড়গ্রামে ১৮৪ সিআরপিএফ ব্যাটেলিয়নে কিষেণজির মুভমেন্টের খবর আসা মাত্রই সেখানে শুরু হয়ে গেল চূড়ান্ত তৎপরতা। সেই ২০০৯ সালের মাঝামাঝি থেকে জঙ্গলমহলে আধা সামরিক বাহিনী মোতায়েন রয়েছে। ছোট-বড় নানা ইনফর্মেশন আগেও এসেছে সিআরপিএফের কাছে। কখনও তারা রাজ্য পুলিশকে সঙ্গে নিয়ে, কখনও বা একাও অপারেশন করেছে। রাজ্য পুলিশও কখনও অপারেশনে সিআরপিএফকে সঙ্গে নিয়েছে, কখনও আবার একাই অভিযান চালিয়েছে। কিন্তু ১৯ শে নভেম্বর ২০১১, সিআরপিএফ ১৮৪ ব্যাটেলিয়নের কাছে পৌঁছানো খবরটা কোনও মামুলি ব্যাপার ছিল না। ইন ফ্যাক্ট এক-সওয়া এক বছরের মধ্যে কিষেণজিকে নিয়ে এমন স্পেসিফিক কোনও ইনফর্মেশন ছিল না রাজ্য পুলিশ কিংবা কেন্দ্রীয় বাহিনীর কাছে। অপারেশনের প্ল্যানিং শুরু করে দিলেন ব্যাটেলিয়নের কমান্ডান্ট রবীন্দ্র ভগত। সোর্স বলছে, বিনপুর আর জামবনির সীমানায় কুশবনির জঙ্গলের কাছে কোনও গ্রামে রয়েছেন কিষেণজি। চার-পাঁচটা গ্রাম নিয়ে প্রায় চার বর্গ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে কুম্বিং অপারেশনের প্ল্যানিং শুরু করলেন সিআরপিএফ কমান্ডান্ট।

সিআরপিএফের কাছে কিষেণজিকে নিয়ে স্পেসিফিক ইনফর্মেশন এসেছে, এই খবর পৌঁছল পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা পুলিশের কাছেও। জেলার পুলিশ সুপার প্রভীন কুমার ত্রিপাঠী খবর পেলেন, কিষেণজিকে ধরতে সিআরপিএফ বিরাট অপারেশনের প্ল্যান করছে। পরদিন, ২০ তারিখ তিনি নিজে চলে গেলেন ঝাড়গ্রামে সিআরপিএফ ব্যাটেলিয়নের ক্যাম্পে। পশ্চিম মেদিনীপুরের আগে ঝাড়গ্রামের পুলিশ সুপার ছিলেন প্রভীন কুমার ত্রিপাঠী। প্রায় আড়াই-তিন বছর ধরে টার্গেট করছেন কিষেণজিকে। কিন্তু কিছুতেই টার্গেট বুলস আই হচ্ছে না। শুধু তাই নয়, আগের বছর কলকাতা পুলিশের স্পেশাল টাস্ক ফোর্স প্রায় ২০০ কিলোমিটার দূর থেকে গিয়ে লক্ষ্মণপুরের জঙ্গলে নাগালের মধ্যে পেয়েও গিয়েছিল কিষেণজিসহ একটা পুরো মাওয়িস্ট স্কোয়াডকে। পুলিশের সঙ্গে দীর্ঘ গুলির লড়াইয়ের পর কোনওভাবে পালিয়েছিলেন ভারতের কমিউনিস্ট পার্টি মাওয়িস্টের পলিটব্যুরো সদস্য।

২০ শে নভেম্বর দুপুরে ঝাড়গ্রামের ১৮৪ সিআরপিএফ ব্যাটেলিয়নে পৌঁছে প্রভীন কুমার ত্রিপাঠী দেখা করলেন রবীন্দ্র ভগতের সঙ্গে। ব্যাটেলিয়নে একটা যুদ্ধ যুদ্ধ পরিবেশ। অফিসার এবং জওয়ানদের চূড়ান্ত ব্যস্ততা। অপারেশনের জন্য রেডি হচ্ছে সবাই। বৈঠকে বসলেন রবীন্দ্র ভগত এবং প্রভীন কুমার ত্রিপাঠী। অপারেশনের জন্য ততক্ষণে আট কোম্পানি ফোর্স প্রায় রেডি করে ফেলেছেন সিআরপিএফ কমান্ডান্ট। শুরু হয়েছে অফিসারদের ফাইনাল ব্রিফিং এবং প্ল্যানিংয়ের কাজ। এই অবস্থায় ব্যাটেলিয়নে পৌঁছে বিশেষ কিছুই করার ছিল না মেদিনীপুরের পুলিশ সুপারের। একেই কয়েক মাস ধরে রাজ্য পুলিশের অপারেশন প্রায় বন্ধ। তার ওপরে সিআরপিএফের এক্সক্লুসিভ সোর্স ইনফর্মেশন।

পশ্চিম মেদিনীপুরের পুলিশ সুপারকে রবীন্দ্র ভগত জানালেন, ‘সোর্স বলছে, বিনপুর এবং জামবনি বর্ডারে একটা গ্রামে কিষেণজি এবং এক মহিলাকে সে দেখেছে। তাঁদের সঙ্গে আরও আট-দশজন রয়েছে।  কুশবনি এবং বুড়িশোল জঙ্গল সংলগ্ন চার-পাঁচটা গ্রামে এক সঙ্গে অপারেশন শুরু হবে। আট কোম্পানি ফোর্স রেডি।’

কিষেণজির সঙ্গে এক মহিলা, দুই আর দুইয়ে চার মেলালেন প্রভীন কুমার ত্রিপাঠী। কয়েকদিন আগেই, ১০ নভেম্বর শালবনি এলাকায় নিজের বাড়ি থেকে সুমন মাইতি ওরফে সাঁওতা নামে এক মাওবাদীকে গ্রেফতার করে পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা পুলিশ। সুমন ছিল শালবনিতে মাওবাদীদের অ্যাকশন স্কোয়াডের অন্যতম মাথা। প্রথম দু’দিনের জেরায় পুলিশের কাছে একটা শব্দও উচ্চারণ করেননি সুমন। অথচ পুলিশ অফিয়াররা জানতেন, মে মাসে সরকার বদলের পর বেস্ট ক্যাচ সুমন মাইতি। কিষেণজির কোর টিমের সদস্য সুমন হচ্ছেন ইনফর্মেশন ব্যাঙ্ক। কিন্তু হার্ড নাট টু ক্র্যাক।

 

চলবে

 

Comments are closed.