কিষেণজি মৃত্যু রহস্য #তিন

(৩ জুলাই থেকে শুরু হয়েছে কিষেণজি মৃত্যু রহস্য। প্রতি মঙ্গলবার এবং শুক্রবার প্রকাশিত হচ্ছে এই দীর্ঘ ধারাবাহিক। প্রতি পর্বে আগের পর্বের লিঙ্ক দেওয়া থাকছে। সেখানে ক্লিক করলে আগের পর্ব পড়তে পারবেন।)

‘খাবার দিয়েই বেরিয়ে যাবে ওখান থেকে। একদম সময় নষ্ট করবে না। আর যাবে না কাছাকাছি।’ এক্সকে জিপিএস দিয়ে খালের ধারে নামিয়ে সাদা স্করপিও রওনা দিল ঝাড়গ্রাম শহরের দিকে। ১২ টা ১০। ঘন্টাখানেকের মধ্যে খাবার পৌঁছে যাবে কিষেণজির কাছে। আর তারপরই ফাইনাল অপারেশন……। কথা বলতে বলতে ঝাড়গ্রামে ফিরলেন প্রভীন ত্রিপাঠী, অলোক রাজোরিয়া।
দুপুর পৌনে একটা। ঝাড়গ্রামে পৌঁছেই বিনীত গোয়েলের সঙ্গে ফাইনাল প্ল্যানিংয়ে বসলেন এসপি, অ্যাডিশনাল এসপি। বেসিক প্ল্যানিং রেডিই ছিল, শুধু স্পেসিফিক লোকেশন ধরে কথা হল। দিনের আলো থাকতে থাকতেই ফাইনাল অ্যাসল্টের নকশা চূড়ান্ত হচ্ছে, আর কিছুক্ষণের মধ্যেই বেরোবেন অফিসাররা। এবার আর অত লোক নয়। কোবরা, সিআরপিএফ এবং সিআইএফের বাছাই করা অফিসার এবং জওয়ানদের নিয়ে তৈরি হল স্পেশাল টিম। হঠাৎ টেলিভিশনের দিকে চোখ গেল অফিসারদের। একটা চ্যানেল ব্রেকিং নিউজ চালাতে শুরু করেছে, ‘কিষেণজিকে পালানোর প্যাসেজ করে দিয়েছে পুলিশ। পুলিশের মদতে ওড়িশায় পালিয়ে গেলেন কিষেণজি।’ টেলিভিশনের স্ক্রিনজুড়ে ব্রেকিং নিউজ চলছে। ঝাড়গ্রামের পুলিশ সুপারের ঘরে কারও মুখে কোনও কথা নেই। খবর দেখে স্তম্ভিত হয়ে গেলেন অফিসাররা। পিন পড়লে শোনা যাবে শব্দ। ঘরের নীরবতা ভাঙল হঠাৎ আসা একটা ফোনে। ঘড়ির দিকে তাকিয়ে একবার বাজতেই কলটা রিসিভ করলেন প্রভীন ত্রিপাঠী। এক্স ফোন করছে।
‘স্যার, প্রবলেম হয়েছে। আমি সুচিত্রাদের জন্য খাবার নিয়ে বাড়ি থেকে বেরোচ্ছি, এমন সময় হঠাৎ গ্রামে সিআরপিএফ ঢুকেছে মোটরসাইকেলে করে। তল্লাশি চালাচ্ছে।’ হাফাতে হাফাতে এক নিঃশ্বাসে কথাগুলো বলে থামলেন এক্স।
‘কখন?’ উৎকন্ঠা মেদিনীপুরের পুলিশ সুপারের গলায়। এখন এক্সকে যদি সিআরপিএফ ধরে নেয় সর্বনাশ হবে। আর গ্রামে ফোর্স ঢোকার খবর পৌঁছে গেলে পালাবে কিষেণজি। এত সতর্কতা, প্ল্যানিং ফের জলে যাবে সব কিছু।
‘স্যার, আমাকে ওরা চেনে না। আমি খাবার নিয়ে বাড়ি থেকে বেরোচ্ছিলাম, সিআরপিএফ দেখে আবার ঘরে ঢুকে পড়েছি। এই তো এক মিনিট আগে।’
‘ঠিক আছে, আমি দেখছি।’ দ্রুত ফোন কাটলেন পুলিশ সুপার। সময় নেই এক্কেবারে। এক্সের ফোন কেটেই সিআরপিএফের কমান্ডান্ট রবীন্দ্র ভগতকে ডায়াল করলেন।
‘আপ আভি কুশবনি গাঁওসে ফোর্স উইথড্র কিজিয়ে। দে আর সার্চিং আওয়ার সোর্স। প্লিজ উইথড্র ইয়োর ফোর্স। ইটস ভেরি আর্জেন্ট। স্পেসিফিক ইনফর্মেশন ইস ম্যাচিওরিং। প্লিজ উইথড্র ইয়োর ফোর্স ফ্রম কুশবনি।’
‘ওকে, ওকে।’
একদিকে টেলিভিশনে দেখাচ্ছে, রাজ্য পুলিশ গ্রেফতার না করে পালিয়ে যেতে দিয়েছে কিষেণজিকে, অন্যদিকে সিআরপিএফ তাড়া করছে তাদের সোর্সকে। যার কাছে দেওয়া আছে জিপিএস ডিভাইস। আর দু’ঘন্টার মধ্যেই ফাইনাল অপারেশনের জন্য রেডি হচ্ছিলেন তাঁরা। ঝাড়গ্রাম পুলিশ সুপারের অফিসে পাঁচ মিনিট আগেও আশা, উত্তেজনায় চকচক করছিল যাঁদের মুখ-চোখ, এক্সের একটা ফোনে আচমকা হাজির হয়েছে একরাশ দুশ্চিন্তা। সময় কাটতেই চাইছে না।
ওদিকে প্রভীন ত্রিপাঠির ফোন পেয়ে সঙ্গে সঙ্গে কুশবনি গ্রামে সার্চিং অপারেশনে যাওয়া অফিসারকে ফোনে ধরলেন রবীব্দ্র ভগত। ‘তুম আভি নিকাল যাও উঁহাসে। কিসিকো উঠানেকা জরুরত নেহি।’ নির্দেশ তো দিলেন ফোর্সকে ওখান থেকে বেরিয়ে যাওয়ার, কিন্তু ষষ্ঠ ইন্দ্রিয় সজাগ হল সিআরপিএফের কমান্ডান্টের। নিশ্চই তাঁদের না জানিয়ে স্পেসিফিক কিছু একটা করছে রাজ্য পুলিশ। সঙ্গে সঙ্গেই ফোন এল পশ্চিম মেদিনীপুরের পুলিশ সুপারের।
‘আই হ্যাভ উইথড্রন আওয়ার ফোর্স ফ্রম কুশবনি। দে আর লিভিং দ্য ভিলেজ।’
‘থ্যাঙ্কস। আপ স্রেফ আপনা সিকিউরিটি লেকে কুশবনি ফরেস্টমে ক্যানেলকা পাস চলে আইয়ে। ম্যায় পৌঁউছ রাহা হু।’
আর সময় নষ্ট করতে চাইলেন না প্রভীন ত্রিপাঠি। শুধু এক্সকে ফোন করে বলে দিলেন, নির্দিষ্ট জায়গায় খাবার পৌঁছে দিতে।
পশ্চিম মেদিনীপুরের পুলিশ সুপারের ফোন আসার আগেই অবশ্য গ্রামে সিআরপিএফ জওয়ানদের মোটরসাইকেলে টহলদারি থেমেছে। তাও বাড়ি থেকে বেরোতে ভরসা পাচ্ছিলেন না। ফোনটা আসার মিনিট পাঁচেক বাদে এক্স খাবারের ব্যাগ নিয়ে বাড়ি থেকে বেরলেন।
বিকেল প্রায় তিনটে। একের পর এক গাড়ি গিয়ে থামতে শুরু করল দহিজুড়ি-জামবনি রাস্তার ওপর ক্যানেলের ধারে। পরপর পৌঁছোলেন বিনীত গোয়েল, প্রভীন ত্রিপাঠি, অলোক রাজোরিয়া, রবীন্দ্র ভগত, কোবরার কমান্ডান্ট দীপক ব্যানার্জি। পৌঁছোতে শুরু করলেন ফাইনাল অ্যাকশনের জন্য সিআরপিএফ, কোবরা এবং রাজ্য পুলিশের সিআইএফের বাছাই করা জওয়ানরা। আর গাড়ি নিয়ে এগনো যাবে না। ঠিক সাড়ে তিনটে নাগাদ ক্যানেল বরাবর পশ্চিমদিকে পায়ে হেঁটে এগোতে শুরু করল স্পেশাল ফোর্স। সঙ্গে অফিসাররা। কম-বেশি এক কিলোমিটার পর বাঁদিকে, অর্থাৎ দক্ষিণদিকে মাটির রাস্তাটা নেমে গিয়েছে। কয়েক ঘন্টা আগে এই রাস্তা দিয়েই রেকি করে গিয়েছিলেন প্রভীন কুমার ত্রিপাঠী এবং অলোক রাজোরিয়া। মাটির রাস্তার কাছে পৌঁছে থমকে দাঁড়াল পুরো ফোর্স। থামলেন অফিসাররাও। এখান থেকেই শুরু হচ্ছে বুড়িশোল গ্রাম। ঠিক গ্রাম নয়, জঙ্গলও নয়। তার মাঝামাঝি বলা যায়।
তাড়াহুড়ো, উত্তেজনায় প্রভীন ত্রিপাঠী এবং অলোক রাজোরিয়া ভুলেই গিয়েছিলেন জিপিএসের কথা। জিপিএস তো একবারও সিগনাল দিল না! এক্সকে জিপিএস নিয়ে ধরে ফেলেনি তো কিষেণজি কিংবা সুচিত্রা? শেষ অপারেশন শুরুর আগে এই একটা প্রশ্নই কাঁটার মতো বিঁধল দুই অফিসারের গলায়। কিন্তু এখন আর কিছু করার নেই।
আগে থেকেই ঠিক ছিল ফাইনাল অপারেশন লিড করবেন অলোক রাজোরিয়া। তাঁর নেতৃত্বে স্পেশালাইজড ফোর্স দক্ষিণদিকের মাটির রাস্তা ধরে নেমে পড়ল। সবার হাতে একে ৪৭। পকেটে পিস্তল, এক্সটা ম্যাগাজিন। হেলমেট, বুলেট প্রুফ জ্যাকেট পরা অফিসার এবং জওয়ানরা যখন ফাইনাল অপারেশনের জন্য স্টার্ট করলেন তখন প্রায় চারটে বাজে। বাকি অফিসার এবং জওয়ানরা দাঁড়িয়ে থাকলেন ক্যানেলের ধারে। মাটির রাস্তা ধরে ফোর্সকে নিয়ে কয়েক’শ পা এগোলেন অলোক রাজোরিয়া। গাড়িতে বসে যেখান থেকে হাত দিয়ে জঙ্গলের ভেতরে জায়গাটা দেখিয়েছিলেন এক্স, সেখানে পৌঁছে থামলেন ঝাড়গ্রামের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার। চোখের ইশারা করলেন স্পেশাল ফোর্সকে। তারপর পুরো ফোর্সটা শুয়ে পড়ল মাটিতে। শুধু স্পেশাল অ্যাসল্ট ফোর্সটা বুকে হেঁটে এগোতে শুরু করল জঙ্গলের ভেতরে। সবার হাত অটোমেটিক রাইফেলের ট্রিগারে।
যাকে বলে ক্রল করা, সেইভাবে কনুইয়ে ঘষটে ঘষটে বুকে হেঁটে এগোল ছোট্ট একটা টিম। সেই ছোট্ট টিমটাই পাঁচটা দলে ভাগ হয়ে গেল জঙ্গলে ঢোকার সময়। এক একটা দলে দুই থেকে তিনজন। এভাবে ছোট ছোট দলে ভাগ হয়ে আলাদা আলাদা লোকেশন দিয়ে জঙ্গলে ঢুকতে শুরু করলেন সিআরপিএফ এবং কোবরা জওয়ানরা। তাঁরা কিছুটা এগোতেই আকাশ কাঁপিয়ে একটা শব্দ। প্রথম গুলিটা ছুঁড়ল কিষেণজি, সুচিত্রার সঙ্গে থাকা ১৬-১৭ বছরের ছেলেটা। পরে অফিসাররা জানতে পেরেছিলেন, ছেলেটার নাম মঙ্গল মাহাতো। কিষেণজির সেন্ট্রি। বন্দুক চালানোয় ওস্তাদ, আর কই মাছের জান ওর।
বিকেল হচ্ছে জঙ্গলমহলে। চারদিকে কোথাও কোনও আওয়াজ ছিল না। পাখির দল সারাদিন চক্কর কেটে সবে গাছে এসে বসছে। এমন সময় হঠাৎ একটা গুলির শব্দ তোলপাড় ফেলে দিল পুরো এলাকায়। চিল চিৎকারে উড়তে শুরু করল পাখিগুলো। মিনিট খানেকের মধ্যে সব চুপচাপ। মঙ্গল মাহাতোর গুলির কোনও জবাব জওয়ানরা দিলেন না। এটাও যুদ্ধে একটা কৌশল। একটু দেখে নেওয়া, অপোনেন্ট কতটা অ্যাগ্রেসিভ মুডে আছে কিংবা কতটা প্রস্তুত আছে। পালটা গুলি না ছুঁড়ে বুকে হেঁটে আরও একটু এগোলেন দু’জন সিআরপিএফ জওয়ান। আর টার্গেট না করে গুলি ছোঁড়ার একটা সমস্যা হচ্ছে, আওয়াজ শুনে অপোনেন্ট বুঝে যাবে তাদের লোকেশন। তাছাড়া মঙ্গল মাহাতো কাউকে দেখে, না কোনও আওয়াজ শুনে প্রথম গুলিটা ছুঁড়েছে তা তখনও জওয়ানদের কাছে স্পষ্ট নয়। তাই কিষেণজির সেন্ট্রির চালানো গুলির কোনও জবাব দিলেন না তাঁরা।
মঙ্গল মাহাতো প্রথম গুলিটা ছোঁড়ার পর ৩০-৪০ সেকেন্ড সব চুপ। সওয়া চারটে বাজে। দিনের আলো পুরোপুরি চলে যায়নি ঠিকই, কিন্তু জঙ্গলের ভেতরে অন্ধকার নামছে দ্রুত। যা করার তাড়াতাড়ি করতে হবে। গুলির আওয়াজ শুনে বুকে হেঁটে মাটিতে শুয়েই আর একটু এগোলেন কোবরার দুই জওয়ান। ফের গুলি চলল। এবার কিষেণজি। মাওয়িস্ট দলটাকে এবার রেঞ্জের মধ্যে পেয়ে গেল ফোর্স। তিনটে ছোট দল এবার ঘিরে নিল কিষেণজি, সুচিত্রা মাহাতো এবং সেন্ট্রি মঙ্গল মাহাতোকে। আর অপেক্ষা না করে পালটা গুলি চালালেন সিআরপিএফ জওয়ানরা। একসঙ্গে অনেকে। সঙ্গে সঙ্গেই পালটা জবাব এল। আর মঙ্গল মাহাতো একা নয়, উইয়ের ঢিবির আড়ালে দাঁড়িয়ে গুলি চালাতে শুরু করলেন কিষেণজি এবং সুচিত্রা। সঙ্গে সঙ্গে জওয়ানরা বুঝে নিলেন কিষেণজিদের এক্সাক্ট লোকেশন। মাটিতে শুয়ে গাছের আড়াল থেকে ঢিবি টার্গেট করে ঝড়ের গতিতে গুলি চালিয়ে চলেছেন জওয়ানরা। এক একটা সেকেন্ড যেন এক এক ঘন্টা। তিন থেকে চার মিনিট টানা গুলি এক্সচেঞ্জের পর জওয়ানরা দেখলেন মাটিতে ছিটকে পড়লেন এক মহিলা। আর মুহূর্তের মধ্যেই উঠে দাঁড়িয়ে ফের হাতে নিলেন বন্দুক।
আর এরপরেই ঘটল সবচেয়ে নাটকীয় ঘটনা। যে কোনও এনকাউন্টারে যাকে বলে ‘কভার ফায়ারিং’, তাই করতে শুরু করলেন একটা বুড়ো লোক। ‘কভার ফায়ারিং’ মানে, কেউ একজন টানা গুলি চালিয়ে শত্রুপক্ষকে এনগেজ রাখবে, সেই সুযোগে তার দলের বাকিরা পালাবে। ‘পালাও সুচিত্রা, পালাও। তু ভি ভাগ মঙ্গল।’ জলপাই পোশাক পরা বয়স্ক মানুষটা বন্দুক হাতে বেরিয়ে এলেন উইয়ের ঢিবি এবং গাছের আড়াল থেকে। এ কে ৪৭ হাতে ৮-১০ জন জওয়ানের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ালেন ভারতের কমিউনিস্ট পার্টি মাওয়িস্টের অন্যতম শীর্ষ নেতা মাল্লুজোলা কোটেশ্বর রাও ওরফে কিষেণজি। সুচিত্রা আর মঙ্গলকে পালানোর প্যাসেজ করে দিতে নিজেই শুরু করলেন ‘কভার ফায়ারিং।’
‘তা হয় না, তোমাকে একা ছেড়ে যাব না আমরা।’ প্রতিবাদ করলেন সুচিত্রা মাহাতো, যাঁর সঙ্গে কিষেণজির সম্পর্ক নিয়ে গত ৮-১০ মাসে বহু চর্চা হয়েছে মাওবাদীদের অন্দরে। ‘হাম ভি নেহি যায়েঙ্গে’, দিদির সঙ্গে গলা মেলাল মঙ্গলও।
‘না, তুমি পালাও। আমি এমনিই অসুস্থ, বেশি দূর যেতে পারব না। তোমরা পালাও। আমি এদের দেখছি।’ ইস্পাত কঠিন গলায় চিৎকার করে সুচিত্রা আর মঙ্গলকে নির্দেশ দিলেন কিষেণজি। আর এক মুহূর্তও অপেক্ষা করলেন না সুচিত্রা মাহাতো এবং মঙ্গল। নেতার নির্দেশ। গুলি ছুঁড়তে, ছুঁড়তেই জঙ্গলের ভেতরে দৌড়লেন সুচিত্রা, সঙ্গে মঙ্গল মাহাতো। আলাদা দিকে দু’জনে। ঘাড় ঘুড়িয়ে একবার দেখলেনও না কিষেণজি। একটা ম্যাগাজিন শেষ। এ কে ৪৭ রাইফেলে নতুন ম্যাগাজিন ভরলেন তিনি। ফের শুরু করলেন এলোপাতাড়ি গুলি চালাতে। কাউকে দেখতে পাচ্ছেন না। জওয়ানরা কিন্তু জঙ্গলের ভেতরে আলাদা আলাদা জায়গায় পজিশন নিয়ে নিয়েছেন ততক্ষণে। ঘিরে ফেলেছেন কিষেণজিকে। একজনের রেঞ্জের মধ্যে চলে এলেন তিনি। ব্যাস…। নিজের এ কে ৪৭ রাইফেলে সেকেন্ড ম্যাগাজিনটা শেষ করতেও পারলেন না। আধা সামরিক বাহিনীর ট্রেনড জওয়ানদের পরপর গুলিতে ঝাঁঝরা হয়ে মাটিতে মুখ থুবড়ে পড়ে গেল শরীরটা। ধুপ করে একটা শব্দ হল শুধু। ২৪ শে নভেম্বর, ২০১১। বিকেল প্রায় সাড়ে চারটে। কিষেণজির দীর্ঘ বছরের লড়াই থেমে গেল ঝাড়গ্রামের জামবনি থানার বুড়িশোল জঙ্গলে। উই ঢিবির ধারে উপুড় হয়ে পড়ে রইল তাঁর নিথর দেহ।
মিনিট পনেরো-কুড়ি অপেক্ষা করলেন জওয়ানরা। কোনও সাড়া শব্দ নেই। তারপর আস্তে আস্তে উঠে দাঁড়ালেন মাটি থেকে। অলোক রাজোরিয়ার নেতৃত্বে বাকি ফোর্সও তখন সিগনাল পেয়ে ঢুকতে শুরু করেছে জঙ্গলে। শক্তসমর্থ শরীরটা পড়ে আছে মাটিতে। হাতের পাশে পড়ে আছে বন্দুক। কয়েক ফুট দূরে পড়ে আছে একটা ব্যাগ। উই ঢিবির পেছনে মাটিতে চাদর পাতা। ভাঁজ করা কম্বল। কিছুক্ষণের মধ্যেই ঘটনাস্থলে পৌঁছোলেন প্রভীন ত্রিপাঠি, রবীন্দ্র ভগত, দীপক ব্যানার্জি, বিনীত গোয়েলরা। রক্তে ভেসে যাচ্ছে পুরো শরীর। শরীরজুড়ে অজস্র গুলির চিহ্ন। পোশাক শতচ্ছিন্ন। তার মধ্যেই পকেট থেকে কিষেণজির সাম্প্রতিক ছবি বের করলেন প্রভীন কুমার ত্রিপাঠী। মিলিয়ে দেখলেন মৃতদেহের সঙ্গে। দেখা হল পাশে পড়ে থাকা ব্যাগ খুলে। প্রচুর টাকা আর বিভিন্ন কাগজ। নিশ্চিত হলেন অফিসাররা, অপারেশন সাকসেসফুল। সুচিত্রা এবং আর একজন পালালেও, কিষেণজি ইজ নো মোর। খবর পাঠানো হল কলকাতায়। মহাকরণে। ‘স্যর, কিষেণজি ইজ ফিনিশড।’ প্রায় পাঁচটা বাজে। অন্ধকার নেমে গিয়েছে জঙ্গলে। অপারেশন মোটামুটি শেষ। কিন্তু অনেক কাজ বাকি।
বছরের পর বছর দেশের চার-পাঁচ রাজ্যের পুলিশ, আধা সামরিক বাহিনীর সঙ্গে মাওবাদীদের বিভিন্ন স্কোয়াড লড়েছে যাঁর নেতৃত্বে, সেই কোটেশ্বর রাও কিনা শেষ যুদ্ধে নিজের মৃত্যু নিশ্চিত জেনেও পালানোর সুযোগ করে দিলেন তাঁর দুই সঙ্গীকে! যাঁকে বাঁচাতে দিনের পর দিন কভার ফায়ারিং করেছে তাঁর সেন্ট্রিরা, তিনিই শেষ লড়াইয়ে একই কাজ করলেন সুচিত্রা মাহাতো এবং ব্যক্তিগত নিরাপত্তা রক্ষী মঙ্গল মাহাতোকে বাঁচাতে। এ তো আত্মহত্যার শামিল! কেন তিনি সেদিন এমন করেছিলেন তা কোনওদিনই জানা যাবে না। মনস্তত্ত্বের আর পাঁচটা জটিল অমীমাংসিত বিষয়ের মতো এই রহস্যও অজানাই থেকে যাবে।
কিন্তু অন্য একটা মৌলিক প্রশ্নের তো অন্তত জবাব মেলা জরুরি। ২৪ নভেম্বর, ২০১১, সন্ধে নামার মুখে ঝাড়গ্রাম মহকুমার জামবনিতে কিষেণজির মৃত্যুতে পশ্চিমবঙ্গের জঙ্গলমহলে মাওয়িস্ট আন্দোলনের একটা বৃত্ত সমপূর্ণ হল মাত্র। কিন্তু তার সলতে পাকানো তো চারদিন আগে এক অজ্ঞাতপরিচয়ের সিআরপিএফ ক্যাম্পে ফোন করে কিষেণজির খবর দেওয়ার মধ্যে দিয়ে শুরু হয়নি। কিষেণজির মৃত্যু তো স্রেফ চারদিন ধরে বিনপুর, জামবনির সীমানা বরাবর কুশবনির জঙ্গল কিংবা আশপাশের নাম না জানা কয়েকটা গ্রামে সিআরপিএফ এবং পুলিশের যৌথ অভিযানের ইতিহাস নয়। এই ইতিহাসের পরতে পরতে জড়িয়ে রয়েছে রাজ্যের পশ্চিমপ্রান্তের তিন জেলার হাজার-লক্ষ মানুষের জীবনযাপনের কাহিনী। সেই কাহিনী কখনও কষ্টের, যন্ত্রনার। কখনও জীবন যুদ্ধের, সংগ্রামের। কখনও বদলা নেওয়ার, তীব্র প্রতিশোধের। কখনও বা ভালবাসার, ধামসা-মাদলেরও।
কিন্তু এই লেখা এপার বাংলার পশ্চিম প্রান্তে রুক্ষ জঙ্গলমহলের কোনও ইতিহাস রচনা নয়। এই লেখা সত্য ঘটনা অবলম্বনে। এ’লেখার কোনও চরিত্রই কাল্পনিক নয়। এই লেখা আসলে সিপিআই মাওয়িস্ট পলিটব্যুরো সদস্য কিষেণজির মৃত্যু রহস্যকে তাড়া করা। যতটা সম্ভব পেছন দিকে হাঁটা। আর জঙ্গলের রুক্ষ, নতুন-নতুন রাস্তায় হাঁটতে গিয়ে দুই আর দুই যোগ করে কখনও উত্তর এসেছে পাঁচ, কখনও তিন। কখনও বা শূন্যও! কারণ, জঙ্গলমহলের এই যাত্রাপথ কোনও পাটিগণিত নয়। এটা রসায়ন। যে রাসায়নিক বিক্রিয়ার প্রভাব এক এক সময় এক এক রকমভাবে এখানকার গরিব, তফশিলি জাতি, উপজাতি এবং সাধারণ মানুষের বহুমাত্রিক জীবনের দিক পরিবর্তন করেছে। এবং সেই দিক পরিবর্তনকে যতটা গভীরে গিয়ে হদিস করা এই সাধারণ সাংবাদিকের যোগ্যতায় কুলিয়েছে, তা নিয়েই এই লেখা, ‘কিষেণজি হত্যা রহস্য’। যে রহস্য ২৪ নভেম্বর কিষেণজির মৃত্যুতে শেষ হচ্ছে না, শুরু হচ্ছে মাত্র। পরবর্তী অধ্যায়েও তাই ফিরে দেখা থাকবে ২৪ নভেম্বর, ২০১১ সালের অপারেশনের কিছু ঘটনার দিকে।
‘কিষেণজি মৃত্যু রহস্য’ আসলে সেই সময় এবং ঘটনাগুলোকে খুঁজে বের করার চেষ্টা, যাতে আন্দাজ করা যায় কবে, কেন, কোন পরিপ্রেক্ষিত কিংবা পরিস্থিতেতে ঝাড়গ্রাম মহকুমায় রক্তাক্ত মাওবাদী আন্দোলনের বীজ পোঁতা হয়েছিল। আর কোন আলো, বাতাস, জলেই বা সেই বীজ হৃষ্টপুষ্ট হয়ে কালক্রমে রক্তস্নাত মহীরুহের চেহারা নিল।

ঝাড়গ্রাম, ১৯৬৬

তখন মেদিনীপুর জেলা অবিভক্ত। দেশের সবচাইতে বড় এই জেলার এক ছোট্ট মহকুমা ঝাড়গ্রাম। শীত এবং গ্রীষ্ম দুইই খুব চড়া এই লাল মাটির পাথুড়ে এলাকায়। বেশিরভাগ মানুষ আদিবাসী, তার মধ্যে আবার সাঁওতালই বেশি। অধিকাংশ জমিতেই চাষ-আবাদ হয় না। কল-কারখানাও নেই কিছু। করার মতো কাজ কোথায় এখানে? তাই পশ্চিমবঙ্গের এই প্রান্তিক এলাকার মানুষের হাতে তখন অঢেল সময়। গরমের লম্বা দুপুরগুলো কাটতেই চায় না। অফুরন্ত সময় ঝাড়গ্রাম শহরের অল্প কিছু সরকারি অফিসের কর্মীর হাতেও। তখন রাজ্যের প্রশাসনিক সদর দফতর মহাকরণ থেকে ঝাড়গ্রামের দূরত্ব যতটা না ভৌগোলিক, তার চেয়েও বেশি মানসিক। তাই রাজ্য সরকারের উন্নয়নমূলক কাজের যে রোডম্যাপ, তার শেষ স্থানে  ঝাড়গ্রামের নাম।
সেটা ১৯৬৬ সাল। দু’বছর আগে ভেঙেছে ভারতের কমিউনিস্ট পার্টি। তৈরি হয়েছে ভারতের কমিউনিস্ট পার্টি মার্ক্সবাদী বা সিপিআইএম। এই সময়ের কয়েক মাস বাদে পশ্চিমবঙ্গে গঠিত হয়েছে প্রথম অকংগ্রেসি সরকার। ‘চিনের চেয়ারম্যান আমাদের চেয়ারম্যান’, স্লোগানের সলতে পাকানো শুরু হচ্ছে তখন। যদিও দার্জিলিং জেলার নকশালবাড়ি আন্দোলনটা ঘটল আরও বছর খানেক বাদে। এই বছরই দু’চোখে আর একটা বিপ্লবের স্বপ্ন নিয়ে বলিভিয়ায় পা রাখলেন চে গুয়েভারা। আর এই সময়ের প্রায় দশ বছর বাদে দেশে এল জরুরি অবস্থা।
১৯৬৬র এমনই এক দুপুরে ঝাড়গ্রামের সাব ডিভিশনাল পুলিশ অফিসারের (এসডিপিও) কাছে থানা থেকে খবর এল, ‘এক সাঁওতাল ব্যক্তি তার স্ত্রীকে খুন করেছে।’ সবে এসডিপিও ঝাড়গ্রাম পোষ্ট তৈরি হয়েছে। খবরটা শুনে একটু অবাকই হলেন ঝাড়গ্রামের প্রথম এসডিপিও তুষার তালুকদার। সাঁওতালরা খুবই শান্তিপ্রিয় মানুষ। স্বামী খুন করেছে স্ত্রীকে! ঝাড়গ্রাম থানার অফিসারকে নিয়ে এসডিপিও শহর থেকে কিছুটা দূরে ঘটনাস্থলের উদ্দেশে রওনা দিলেন। এসডিপিও’র না গেলেও চলত, কিন্তু গেলেন কৌতুহলে। একে কম বয়েস, তার ওপর নতুন চাকরি। দেখতে গেলেন, কেন এই খুন? তাছাড়া অফিসে বসে করার মতো কোনও কাজও নেই। অফিসাররা ঘটনাস্থলে গিয়ে শুনলেন, সারাদিন মাঠে খাটাখাটুনির পর বাড়ি ফিরে ক্ষুধার্ত সাঁওতাল মানুষটা স্ত্রীকে কিছু খাবার দিতে বলে। বাড়িতে কোনও খাবার ছিল না। অল্প যতটুকু ছিল তা ওই সাঁওতাল মহিলা তাদের ছোট্ট ছেলেকে দুপুরে খাইয়ে দিয়েছিল। খাবার না পেয়ে উত্তেজিত সাঁওতালটি স্ত্রীয়ের ওপর চিৎকার করে। দু’জনের মধ্যে কথা কাটাকাটি হয়। এরপর এই ঝগড়া-ঝামেলার মধ্যেই ওই সাঁওতাল ব্যক্তি স্ত্রীকে একটা ধাক্কা দেয়। টাল সামলাতে না পেরে মহিলা মাটিতে পড়ে যায় এবং প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই তার মৃত্যু হয়। ঘটনায় হতচকিত হয়ে যায় সাঁওতাল মানুষটা। নিজেই থানায় গিয়ে খবর দেয়। পুলিশ থানায় একটি খুনের মামলা চালু করে এবং লোকটাকে গ্রেফতার করে। এই সাঁওতাল বাড়ি এবং আশপাশের আরও অনেক বাড়িতেই দুপুরে, বিকেলে, রাতে খাবার নিয়ে ঝগড়া, মারপিট, চিৎকার প্রায় রোজের ঘটনা তখন। দু’বেলা তো দূর অস্ত, একবেলা ভরপেট খাবার আছে, এমন বাড়িই তখন ওই এলাকায় হাতে গোনা। কিন্তু এদিন যেটা ঘটল, সেটা সচরাচর ঘটে না। স্বামীর ধাক্কায় মাটিতে পড়ে আর উঠে দাঁড়াল না শান্তি মুর্মু। যে কারণে পুলিশ নিয়ে এসডিপিওকে যেতে হল ওই বাড়িতে।
এসডিপিও ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখলেন, বাড়ির দরজার সামনে উঠোনে মহিলার মৃতদেহ পড়ে রয়েছে। আশপাশে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে দাঁড়িয়ে কিছু প্রতিবেশী। কারও মুখে কোনও কথা নেই। সবাই মোটামুটি ঘটনাটা দেখেছে। জানে কী হয়েছে। তাছাড়া এসডিপিও বুঝলেন, কাউকে জিজ্ঞেস করারও তো নেই তেমন কিছু। লোকটা নিজেই পুরো ঘটনা জানিয়েছে থানায়। এরপরই এসডিপিও’র চোখ পড়ল ছোট্ট বাড়িটার ঘরের নীচু দরজার দিকে। অর্ধেক খোলা দরজা ধরে দাঁড়িয়ে আছে বছর ছয়েকের একটা বাচ্চা ছেলে। খালি গা, কোমরে একটা নেংটির মতো প্যান্ট। পিছনে ঘরটা অন্ধকার। বাচ্চাটা মুখও তাই। পোড়া তামাটে গায়ের রং। শূন্য দৃষ্টিতে বছর ছয়েকের সাঁওতাল শিশু দেখছে, দশ হাত দূরে মরে পড়ে আছে মা। মরা মাকে নিয়ে যাওয়ার জন্য বাড়িতে এসেছে কিছু অচেনা লোক। সবকটা লোকের গায়ে এক রকম জামা-প্যান্ট। তখনও ওই বাচ্চাটা জানত না, একই রকম পোশাক পরা এই অচেনা লোকগুলোকে পুলিশ বলে।

কী হয়েছিল আগের পর্বে? পড়ুন: কিষেণজি মৃত্যু রহস্য #দুই

চোখে জল নেই, মুখে কথা নেই, ফ্যাল ফ্যাল চোখে ছোট্ট ছেলেটা এদিক ওদিক দেখছে। বাবা-মা’র মধ্যে খাবার নিয়ে ঝগড়া-ঝামেলা তো সে রোজই দেখে। ক্ষিধে কাকে বলে, সে অভিজ্ঞতাও তার ছ’বছরের জীবনে হয়েছে বিস্তর। কিন্তু মা যে আর কোনও দিন উঠে দাঁড়াবে না তা তখন বোঝার বয়েস না হলেও ছোট্ট ছেলেটা বুঝছে, কিছু একটা গুরুতর ঘটেছে।
একবার ছেলেটার দিকে, একবার মাটিতে পড়ে থেকে মৃত মহিলার দিকে তাকাচ্ছেন ঝাড়গ্রামের প্রথম এসডিপিও তুষার তালুকদার। মহিলার রুগ্ন, শীর্ণ চেহারা দেখে কলকাতায় বড় হওয়া এসডিপিও’র মনে হল, অনাহার, অপুষ্টিতে মহিলার শরীরে আর কিছুই ছিল না। এমন হাড়গিলে চেহারাও হয় মানুষের! তাছাড়া একটা বিষয়ে তুষার তালুকদারের মনটা খচখচ করছিল। মহিলা যেভাবে স্বামীর ধাক্কায় টাল সামলাতে না পেরে মাটিতে পড়ে গিয়েছেন, তাতে বড় ইনজ্যুরি হওয়ার কথা নয়। হয়ওনি তেমন। এক্সটার্নাল ইনজ্যুরিও নেই কিছু। তবে আচমকা মহিলার মৃত্যু হল কীভাবে? এইভাবে পড়ে গেলে সঙ্গে সঙ্গে তো মৃত্যু হওয়ার কথা নয়।
শান্তি মুর্মুর মৃতদেহ মহকুমা হাসপাতালে পাঠিয়ে ঝাড়গ্রাম শহরে ফিরলেন তরুণ এসডিপিও। অফিসে গিয়ে কিছুক্ষণ বসে সন্ধে নাগাদ নিজে গেলেন ঝাড়গ্রাম হাসপাতালে। পুরো ঘটনাটা বললেন মহকুমা স্বাস্থ্য আধিকারিককে। তিনিই ওই মৃতদেহের ময়না তদন্ত করবেন।
‘আপনি কী চাইছেন?’ এসডিপিও’র কাছে জানতে চাইলেন মহকুমা স্বাস্থ্য আধিকারিক।
‘আমি চাই খুনের অভিযোগ থেকে লোকটার মুক্তি। আমি নিশ্চিত, লোকটা তার স্ত্রীকে খুন করতে চায়নি, করেওনি। মহিলার যা শারীরিক অবস্থা এমনিও পড়ে গিয়ে মৃত্যু হতে পারত। আর ওদের বাচ্চাটাকে দেখে বড় অসহায় লাগছিল। মা মারা গেছে, বাবা জেলে চলে গেলে তো ছেলেটা না খেতে পেয়ে মরে যাবে। তাছাড়া আমি জানতে চাই, ওই মহিলার মৃত্যু হল কীভাবে?’ টানা বলে থামলেন এসডিপিও।
পরদিন মহকুমা স্বাস্থ্য আধিকারিক ঝাড়গ্রামের এসডিপিও’কে জানালেন, ‘ময়না তদন্তে দেখা গিয়েছে, দীর্ঘদিন যক্ষা রোগে ভুগে মহিলার ফুসফুস এমন ক্ষয়ে গিয়েছিল, ওই সামান্য ধাক্কা সামলাতে পারেনি তাঁর শরীর। ধাক্কায় পড়ে গেলেও, মৃত্যুর আসল কারণ, দীর্ঘদিনের অনাহার, দুর্বলতা এবং যক্ষা রোগ।’ এই ময়না তদন্ত রিপোর্টের ওপর ভিত্তি করে মামলাটাকে একটু অন্যভাবে করার জন্য থানাকে নির্দেশ দিলেন তুষার তালুকদার। কিছুদিন পর সাঁওতাল লোকটির জামিন হল। সাঁওতাল লোকটার নাম মহাদেব মুর্মু। আর মহাদেব-শান্তির ছ’বছরের ছেলে রামজীবন তখন জানতেও পারল না, বাবার ধাক্কায় নয়, মায়ের মৃত্যু হয়েছে বহুদিনের অনাহারে। যক্ষা রোগে। কিন্তু এ আর সেই ১৯৬৬র ঝাড়গ্রামে নতুন কী?

চলবে, পরের পর্ব আগামী মঙ্গলবার, ১৪ জুলাই  

(৩ জুলাই থেকে শুরু হয়েছে কিষেণজি মৃত্যু রহস্য। প্রতি মঙ্গলবার এবং শুক্রবার প্রকাশিত হবে এই দীর্ঘ ধারাবাহিক। প্রতি পর্বে আগের পর্বের লিঙ্ক দেওয়া থাকছে। সেখানে ক্লিক করলে আগের পর্ব পড়তে পারবেন।)

 

Comments are closed.