২০২১ সালের বিধানসভা ভোটের আগে আগামী বছরের বিভিন্ন সময়ে প্রায় ১১০ টি পুরসভার মেয়াদ ফুরিয়ে যাবে। আশা করা যায়, রাজ্য সরকার বিধানসভা ভোটের আগেই ওই পুরসভাগুলির ভোট সেরে ফেলবে। আগামী মে-জুনে কলকাতা, চন্দননগর, শিলিগুড়ি প্রভৃতি কর্পোরেশনের মেয়াদ শেষ হচ্ছে। অক্টোবরে শেষ হবে বিধাননগর ও আসানসোল কর্পোরেশনের মেয়াদ। আবার বেশ কয়েকটি পুরসভা এবং কর্পোরেশনের মেয়াদ ২০১৮ সালে শেষ হয়ে গিয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে হাওড়া কর্পোরেশনও। তৃণমূল সরকার সেই সব পুরসভায় প্রশাসক বসিয়ে রেখেছে। চন্দননগর কর্পোরেশনের বোর্ড মেয়াদ ফুরিয়ে যাওয়ার অনেক আগেই রাজ্য সরকার ভেঙে দিয়েছে তৃণমূলের অন্দরের কোন্দলের জন্য। মেয়াদ ফুরিয়ে যাওয়া কিংবা ভেঙে দেওয়া পুরসভাগুলিতে এখন কার্যত অচলাবস্থা চলছে বলে অভিযোগ। পুর নাগরিকরা ঠিকমতো পরিষেবা পাচ্ছেন না। নিয়মিত জঞ্জাল সাফাই হচ্ছে না, নিকাশি ব্যবস্থা প্রায় ভেঙে পড়েছে। হচ্ছে না রাস্তা মেরামতির কাজ। সে সব নিয়ে নাগরিকরা ক্ষুব্ধ। এই অবস্থায় প্রশ্ন উঠেছে, আর কত দিন এভাবে প্রশাসক বসিয়ে পুরসভাগুলি চালানো হবে। শাসক দলের মধ্যেও এ নিয়ে নানা কথা উঠছে। সূত্রের খবর, ঘরে বাইরের এই অসন্তোষ ঠেকাতে রাজ্য সরকার এবার ওই সব পুরসভায় ভোট করাতে চায়। বিরোধীরা অবশ্য অনেক আগে থেকেই পুরসভাগুলিতে ভোট করানোর কথা বলে আসছিল।
সম্প্রতি রাজ্য নির্বাচন কমিশন পুর ও নগর উন্নয়ন দপ্তরকে পুরসভাগুলির ভোটের ব্যাপারে জানতে চেয়ে চিঠি দিয়েছে। ২০১৮ সালের পর থেকে কমিশন মেয়াদ ফুরিয়ে যাওয়া কিংবা প্রশাসক বসানো ওই সব পুরসভার ভোটের দিনক্ষণ জানতে চেয়ে অনেকবার চিঠি দিয়েছে।
বাম জমানায় যেমন পুরসভাগুলিতেও ভোটের নামে প্রহসন চলত, তৃণমূল আমলেও একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি হয়েছে বলে রাজনৈতিক মহলের অভিযোগ। পঞ্চায়েত ভোটেও তার ব্যাত্যয় ঘটেনি। কলকাতার প্রাক্তন মেয়র শোভন চ্যাটার্জি তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে যাওয়ার পরে সংবাদমাধ্যমের কাছে এই অভিযোগ করেছেন। তার মধ্যেই গত লোকসভা ভোটে বিজেপি তৃণমূলের ঘাড়ে অনেকটাই থাবা বসিয়েছে। লোকসভা ভোটের ফল বলছে, কলকাতা সহ অনেক পুরসভাতেই রাজ্যের শাসক দল কেন্দ্রের শাসক দলের থেকে পিছিয়ে রয়েছে। আগামী বছর পুরসভাগুলিতে ভোট করলে লোকসভা ভোটের সেই ধারাই বজায় থাকবে কি না, তা নিয়েও চিন্তায় আছে তৃণমূল। আবার সেগুলিতে ভোট না করিয়ে আর কত দিন ফেলে রাখা যাবে, সেটাও মাথায় রাখতে হচ্ছে শাসক দলের নেতাদের। এসব মাথায় রেখেই রাজ্য সরকার অবশেষে আগামী এপ্রিল মে নাগাদ পুরসভাগুলিতে ভোট করাতে চায় বলে সূত্রের খবর। এমনও হতে পারে, মেয়াদ শেষ হওয়া এবং শেষ হতে যাওয়া পুরসভাগুলির ভোট সরকার এক সঙ্গেই করে ফেলল। সে ক্ষেত্রে আবার চালু পুরসভাগুলির বোর্ড ভেঙে দিতে হবে। তৃণমূলের ভিতরকার খবর, দলের শীর্ষ নেতারা বিষয়টি নিয়ে ভোট কুশলী প্রশান্ত কিশোরের সঙ্গে কথা বলছেন।
Comments are closed.